'শাহেনশাহ': যতটা গর্জেছে, ততটা বর্ষাতে পারেনি
ঢালিউড কিংবা বলিউড—রুপালি পর্দায় ‘শাহেনশাহ’র দাপটে ভিলেনরা থরথর করে কাঁপেন। বাস্তবে ‘শাহেনশাহ’ কাঁপল করোনাভাইরাসের কারণে। ছবির বক্স অফিসে (ছবির ব্যবসায়) করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়ল। পাশাপাশি চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট লোকজন ব্যবসায়িকভাবে ‘শাহেনশাহ’র ধরাশায়ী হওয়ার আরেকটি কারণ হিসেবে বলছেন বারবার মুক্তির তারিখ পেছানো।
অভিজ্ঞ চলচ্চিত্র প্রদর্শক মিয়া আলাউদ্দিনের মতে, ‘শাহেনশাহ’ ভালো ও তারকাবহুল ছবি। কিন্তু করোনাভাইরাসের জন্য দর্শক হলবিমুখ হয়ে পড়েছেন। তিনি জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে জনসমাগম এড়িয়ে যেতে বলা হচ্ছে। দর্শকেরা সিনেমা হলে যেতে ভয় পাচ্ছেন। আর ‘শাহেনশাহ’ বারবার মুক্তির তারিখ পিছিয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। নয়তো এ ছবির সম্ভাবনা ছিল।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বারবার মুক্তির ঘোষণা দিয়েও না আসায় ‘শাহেনশাহ’র সাফল্য নিয়ে আগেই সন্দিহান ছিলেন। ঘোষণা দিয়ে মুক্তি না দেওয়ায় ছবির সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। দর্শকেরাও আগ্রহ হারিয়েছেন। একই মত দিলেন কুমিল্লার চান্দিনার ‘মুন’ প্রেক্ষাগৃহের মালিক জাহাঙ্গীর আলম। ‘শাহেনশাহ’র এতবার পিছিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি, বলছেন জাহাঙ্গীর।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাত থেকে আট মাস পর শাকিব খানের কোনো ছবি মুক্তি পায় ফেব্রুয়ারিতে। ‘বীর’ ছবিটি এ কারণে কিছু দর্শক টেনেছে। ‘শাহেনশাহ’ ততখানি দর্শকও টানতে পারেনি। বারবার ডেট পেছানোয় দর্শক ছবির ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
মফস্বলের এই হলমালিক জানান, দর্শক এখন আর সিনেমা হলে আসতেই চান না। হলের সামনে আগের মতো জটলা হয় না। বিনা কারণেই দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন প্রেক্ষাগৃহ থেকে। কোনো ছবিতেই প্রত্যাশিত দর্শক হচ্ছে না।
চলচ্চিত্র ব্যবসায় বুকিং এজেন্টদের রয়েছে বড় ভূমিকা। বুকিং এজেন্ট মো. জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রামের আলমাস, বরিশালের অভিরুচি ও ঢাকার সেনা অডিটোরিয়ামের ছবি বুকিং করেন। তিনি জানান, ‘শাহেনশাহ’ অত্যন্ত সুন্দর ছবি। সবাই ভালো বলছেন। কিন্তু ছবির বিক্রিবাট্টা মন্দা।
শামীম আহমেদ পরিচালিত ‘শাহেনশাহ’ দুই বছর ধরে রয়েছে আলোচনায়। শাকিব খান ও নুসরাত ফারিয়া প্রথমবারের মতো একসঙ্গে অভিনয় করছেন ছবিটিতে। রোদেলা জান্নাতের অভিষেক হয়েছে এতে। খলনায়ক মিশা সওদাগরও রয়েছেন। ছবিটি বেশ ব্যয়বহুল বলে সবার চর্চার কারণ হয়েছে।
গত বছরের মার্চে ‘শাহেনশাহ’ সেন্সর ছাড়পত্র পায়। তারপর একাধিকবার ছবির মুক্তির তারিখ ঘোষণা করা হয়। দর্শকের আগ্রহকে জাগিয়ে পরে পিছিয়ে যায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়া। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ল ব্যবসায়।
কাজী হায়াৎ পরিচালিত ও শাকিব খান প্রযোজিত ‘বীর’ ছবি মুক্তির তিন সপ্তাহ পর আসে ‘শাহেনশাহ’। ৬ মার্চ মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যাকশনধর্মী ছবিটি সাড়া জাগাবে বলেই প্রত্যাশা করা হয়েছিল। সপ্তাহ শেষে দেখা যাচ্ছে, করেনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে গেছে হলে হলে। যে কারণে ‘শাহেনশাহ’ দাপট দেখাতে পারেনি। যতটা গর্জেছে ততটা বর্ষাতে পারেনি ছবিটি।