শুটিং চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক পোস্ট হচ্ছে ছবি। কখনো সিনেমার দৃশ্য, কখনো চরিত্রের বেশে অভিনয়শিল্পী, কখনো–বা ভিডিও ক্লিপ। অনেকে মনে করেন, প্রচারের মাধ্যমে প্রসারের জন্য এসব করা হয়। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, সিনেমা মুক্তির আগে অপরিকল্পিতভাবে দৃশ্য প্রকাশে প্রসারের বদলে ভরাডুবিই বেশি হয়।
ধরা যাক, হলিউড বা বলিউডের কথা। সেখানে শুটিং সেট থেকে প্রায়ই ছবি ফাঁস হয়ে যায়। এ নিয়ে তখন তোলপাড় শুরু হয়। এসব কারণেই হলিউড পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান তাঁর শুটিং সেটে মুঠোফোন নিষিদ্ধ করেছেন। কারণ, দৃশ্য ফাঁস হলে ছবিটি নিয়ে মানুষের আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়। কেননা, সিনেমায় দর্শকেরা পান সম্পাদিত ফুটেজ, যা ধারাবাহিকতা রক্ষা করে প্রদর্শিত হয়। সেখানে অসম্পাদিত ও খণ্ডিত দৃশ্য বা ছবি দর্শকের কাছে কোনো অর্থ বহন করে না।
গ্রে অ্যাডভারটাইজ লিমিটেডের ম্যানেজিং পার্টনার ও কান্ট্রি হেড গাউসুল আলম শাওন মনে করেন, ছবি মুক্তির আগে ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা যেতেই পারে, কিন্তু সেটা হতে হবে পরিকল্পিত। তিনি বলেন, ‘কতটুকু প্রকাশ করা উচিত, কতটুকু উচিত নয়, সেটা নির্ধারণে একটা পরিমিতির ব্যাপার আছে। আমাদের এখানে অনেক ক্ষেত্রে সেটা মেইনটেন করা হয় না। ছবিটি নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে পারেন, কিন্তু মানুষকে ছবির প্লট বলে দিতে পারেন না। হাইপ তৈরি করতে গিয়ে অনেক সময় দর্শকের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেওয়া হয়, দেখা যায় নির্মিতব্য ছবিটি সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।’ তিনি মনে করেন, এভাবে অপরিকল্পিতভাবে ছবি প্রকাশ করার বদলে মার্কেটিংয়ের আলাদা বিভাগ রাখা দরকার, যারা ছবির মার্কেটিং নিয়ে কাজ করবে। এতে খরচ বাড়লেও সেটা মার্কেট থেকে তুলে আনার সুযোগও রয়েছে। নিজেদের প্রযোজনায় ‘আয়নাবাজি’ সিনেমা প্রসঙ্গে শাওন বলেন, ‘আমাদের প্রথম ছবির ক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা ছিল, এটা নিয়ে মানুষের তেমন কোনো প্রত্যাশা ছিল না। কিন্তু এখন আমরা ভাবছি, পরের কাজটি অবশ্যই আগেরটিকে ছাপিয়ে যেতে হবে।’
ছবির দৃশ্য ফাঁসের ব্যাপারে বেশ সাবধানতা অবলম্বন করেন চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সিনেমা বানানোর সময় খুব সাবধানে শুটিং করেন, যাতে কোনো ধরনের ধারণা ফাঁস না হয়। তিনি বলেন, ‘আমি শুটিংয়ে কিছু বিষয় মেইনটেন করি, যেমন ছবি তুলতে দিই না, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে দিই না। যখন সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না, তখনো আগাম কোথাও ছবি ছাপতে দিতাম না।’ ফারুকী মনে করেন, দর্শক যা দেখার, পর্দায় গিয়ে দেখুক। নয়তো আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হওয়ার পর ধাপে ধাপে ফার্স্ট লুক, পোস্টার, সাউন্ড ট্রাক ও সবশেষে মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করুক।
একটি সিনেমার শুটিং শুরু হলে সেটি মুক্তি পেতে সময় লাগে এক থেকে দেড় বা দুই বছর। অথচ শুটিংয়ের সময় ছবি প্রকাশ করলে মানুষ দ্রুত সেগুলো ভুলে যায় বা আগ্রহ ধরে রাখতে পারে না। ফারুকী বলেন, ‘আমি থার্টি ফাইভ মিলিমিটারের আমলের মানুষ। আমি মনে করি ফিল্ম এমন এক মাধ্যম, এখানে কিছু রহস্য রাখতে হয়, আগেই অনেক কিছু ফাঁস করে দিতে হয় না।’
ঢালিউডের নির্মিতব্য ‘নবাব এলএলবি’ ছবির কিছু দৃশ্য ও গানের শুটিংয়ের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেছে। এ নিয়ে মহাবিরক্ত শাকিব খান। বলেন, ‘পরিচালকদের এসব বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।’ এই প্রচারপ্রবণতার মধ্যেও দেখা গেছে নির্মিতব্য ‘হাওয়া’, ‘পাপপুণ্য’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবিগুলোর তেমন কোনো দৃশ্যের স্থির চিত্র বা ভিডিও বের হয়নি। চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এটাই পেশাদারত্ব। এসব কারণেই অতীতে ‘আয়নাবাজি’ ও ‘দেবী’ ছবিগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ছবিগুলো দর্শকের কাছে অন্য রকম এক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।