‘আম্মাজান’ সিনেমায় কেন দিলদারের হাত ধরে মেকআপ নিয়েছিলেন জ্যাকি

আজ দিলদারের মৃত্যুবার্ষিকীকোলাজ: আমিনুল ইসলাম

‘আম্মাজান’ সিনেমায় নবাব চরিত্রটা করার কথা দিলদারের। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য নবাব চরিত্রটি ছেড়ে দেন। দিলদারের বিকল্প হিসেবে জ্যাকি আলমগীরকে প্রস্তাব দেন সিনেমাটির নির্মাতা কাজী হায়াৎ। চরিত্রটি দিলদারের করার কথা ছিল শুনে সঙ্গে সঙ্গে ‘না’ করে দেন। কিন্তু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তাঁকে বারবার সিনেমাটিতে যুক্ত হতে বলে। একসময় বাধ্য হয়ে শর্ত দিয়ে দেন জ্যাকি। তিনি শুটিংয়ের প্রথম দিন দিলদারের হাত ধরে মেকআপ নেবেন, এই শর্ত মানলেই ‘আম্মাজান’ সিনেমায় অভিনয় করবেন তিনি।

দিলদার

জ্যাকি বলেন, ‘চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী হায়াৎ সাহেব তখন নতুন অভিনয়শিল্পী খুঁজছিলেন। তিনি আমাকে এফডিসিতে ডেকে বললেন, তাঁর নতুন একটি সিনেমার “নবাব” চরিত্রটি আমাকে করতে হবে। তখন আমি কাজী হায়াৎকে সাহেবকে বলি, যে চরিত্রে দিলদার অভিনয়ের কথা ছিল, সেই চরিত্র আমি করব না। কিছুটা মন খারাপ করলেন তিনি। তিন দিন পর কাজী হায়াৎ সাহেব আবারও আমাকে ডাকেন। জানতে চান, কেন আমি আমি চরিত্রটি করব না?’

কিছুটা নীরব থেকে জ্যাকি বলেন, ‘দিলদার যে চরিত্র করছেন না, সেই চরিত্রে আমার পক্ষে অভিনয় করা অসম্ভব। সেই যোগ্যতা আমার একেবারেই নেই। শুটিংয়ে চরিত্রটি আমি কোনোভাবেই ফুটিয়ে তুলতে পারব না।’ জ্যাকির মুখে এ কথা শুনে কাজী হায়াৎ তাঁকে তিরস্কার করেন। পরে নির্মাতা তাঁকে সাহস জোগালে তিনি রাজি হন।

জ্যাকি আলমগীর
ছবি: সংগৃহীত

শর্ত অনুযায়ী প্রথম দিন শুটিংয়ে কি দিলদার এসেছিলেন? জ্যাকি বলেন, ‘“আম্মাজান” সিনেমার শুটিংয়ের প্রথম দিনই দিলদার সাহেব শুটিং সেটে আশীর্বাদ করতে এসেছিলেন। এখনো মনে আছে, দিলদার সাহেব আমাকে মেকআপ দিয়ে শুরুটা করিয়ে দিয়েছিলেন। আমি মেকআপ করার পুরো সময় দিলদারের হাত ধরে ছিলাম। একজন শিল্পীর প্রতি এটা শিল্পীর সম্মান। একজন শিল্পী ছবি ছেড়ে দিলেন আর নিয়ে নিলাম, সেই রীতি তখন ছিল না। যিনি ছবিটি ছাড়তেন, তাঁর সঙ্গে আমরা দেখা করে আশীর্বাদ নিয়ে ছবি করতাম।’
সেদিন দিলদারের সঙ্গে আপনার কী কথা হয়েছিল?

জ্যাকি বলেন, ‘দিলদার আমাকে বলেছিলেন, ছবিটি করলে আমার নাম হবে। তিনি আমাকে মনোযোগ দিয়ে অভিনয় করতে বলেন। সেদিন দিলদার সাহেব আমাকে দোয়া করলেন। এই যে সিনিয়র-জুনিয়র একে অন্যের প্রতি সম্মান শ্রদ্ধাবোধ, এখন এটা নেই, কমে গেছে। এখন একে অন্যের চরিত্রটি লুফে নিতে চায়। পাড়লে একে অন্যকে বাদ দেয়। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে টিকে থাকতে হলে দিলদারের মতো অভিনেতা দরকার।’

‘আম্মাজান’ সিনেমায় অভিনয়শিল্পী মান্না ও জ্যাকি আলমগীর
ছবি: সংগৃহীত

১৯৮২ সাল থেকে নিয়মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন জ্যাকি আলমগীর। ‘আম্মাজান’ সিনেমার আগপর্যন্ত অভিনয়ের জন্য সেভাবে সামনে আসতে পারেননি। অভিনয় শুরুর ১৯ বছর পরে আম্মাজান সিনেমায় অভিনয় করে দেশজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। জ্যাকি বলেন, ‘দিলদার সাহেব আগে থেকেই জানতেন চরিত্রটি দর্শক পছন্দ করবেন। চাইলে তিনি নিজেই চরিত্রটিতে অভিনয় করতে পারতেন। কিন্তু তিনি আমাকে সুযোগ দিয়েছিলেন। এটা আমাকে এখনো সম্মানিত করে।’

দিলদার
ছবি: সংগৃহীত

নবাব চরিত্রে অভিনয়ে সুযোগ পেয়ে এখনো দিলদারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জ্যাকি আলমগীর। প্রয়াত দিলদারকে তিনি এখনো স্মরণ করেন। তিনি মনে করেন, দিলদারের কাছ থেকে এখনো অনেক কিছু শেখার আছে।

দিলদার ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে মারা যান দিলদার। এ অভিনেতা ১৯৪৫ সালে চাঁদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্যারিয়ার পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন।

মেয়ের সঙ্গে দিলদার
ছবি: সংগৃহীত