সুড়ঙ্গের পর খবর কী তমার
চলচ্চিত্রে ১৪ বছর কেটে গেছে তমা মির্জার। অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। প্রশংসিত হচ্ছেন চলচ্চিত্র সমালোচকদের কাছেও। ঠিক এক বছর আগে, গেল বছর ঈদুল আজহায় ‘সুড়ঙ্গ’ চলচ্চিত্রে ময়না চরিত্রে অভিনয় করে সাড়া ফেলেন এই অভিনেত্রী। এরপর তাঁকে ঘিরে পরিচালক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ বাড়ে। একাধিক নতুন সিনেমা ও ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের কথাও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কোনোটি নিয়ে পরে আর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। ‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তির বছর হতে চলল, কী করছেন তমা মির্জা, সেই খবর জানাচ্ছেন মনজুর কাদের
গত বছর মুক্তি পাওয়া তমা মির্জার ‘সুড়ঙ্গ’ সুপারহিট হয়। রায়হান রাফী পরিচালিত ছবিটি দেশেই নয়, দেশের বাইরেও আলোচিত হয়। ‘সুড়ঙ্গ’তে প্রশংসিত তমাকে নিয়ে এরপর আরও কয়েকটি নতুন সিনেমায় অভিনয়ের খবরে পাওয়া যায়। তখন এমনও শোনা যায়, ‘সুড়ঙ্গ’ পরিচালকেরও নতুন ছবিতে দেখা যেতে পারে তাঁকে। কিন্তু রাফী সেই তুফান ছবির শুটিং শেষ করলেও তাতে দেখা যায়নি তমাকে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ‘তুফান’ মুক্তির পর রাফীর কোনো নতুন ছবিতে দেখা যেতে পারে তমাকে। এ বিষয়ে অবশ্য তমা-রাফী কেউই কিছু বলছে না।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কথা হয় তমার সঙ্গে। জানালেন, দুটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তমা বললেন, ‘এখন ‘তুফান’ সিনেমার যে আওয়াজ, এর মধ্যে আর কোনো ছবির আওয়াজ কারও কানে যাবে না। ছবিটি মুক্তির মাস দুয়েক যাক, এরপর নতুন ছবির নামধাম সব জানাব।’
শুরুটা ১৪ বছর আগে, এম বি মানিকের ‘বলো না তুমি আমার’ ছবিতে অভিনয় দিয়ে বড় পর্দায় পথচলা তমার। দিন যতই যাচ্ছে, তমা যেন অভিনয় দিয়ে সবার মনে বেশি মাত্রায় জায়গা করে নিচ্ছেন। ‘সুড়ঙ্গ’ ছবিতে ময়না চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত তমা বললেন, ‘নতুন দুইটা সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছি ভিন্ন ভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের। এতে ভিন্ন ভিন্ন পরিচালক, সহশিল্পীও ভিন্ন। ঈদের পর ছবি দুটোর শুটিং শেষ করব। আগামী বছর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে।’
‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তির পর সিনেমা, ওয়েব সিরিজ ও ওয়েব ফিল্ম মিলিয়ে ডজনখানেক কাজের প্রস্তাব পেয়েছেন তমা মির্জা। তবে বুঝেশুনে নতুন কাজ হাত নিতে চাইছেন এই ঢালিউড তারকা। তাঁর মতে, ‘একটা সুড়ঙ্গ দর্শকের অনেক বছর মনে রাখার মতো চলচ্চিত্র। পরিচালক, শিল্পী থেকে শুরু করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সবাইকে এমন একটি ছবির জন্য সবাই মনে রাখবে। তাই আমিও খুব একটা চাপে ছিলাম না এই ভেবে যে দ্রুত একই বছরে আরেকটা কাজ নিয়ে দর্শকের সামনে আসতেই হবে।’
অঞ্জন দত্তের ফোনকল
ওপার বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী অঞ্জন দত্তকে নির্মাতাকে হিসেবেও পাওয়া গেছে। তাঁর নির্মাণে ‘দ্য বঙ কানেকশন’, ‘চৌরাস্তা ক্রসরোডস অফ লাভ’, ‘ব্যোমকেশ বক্সী’, ‘রঞ্জনা আমি আর আসবো না’, ‘আবার ব্যোমকেশ’, ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’, ‘ব্যোমকেশ ও চিড়িয়াখানা’, ‘ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ’–এর মতো চলচ্চিত্র পেয়েছেন দর্শকেরা। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি শুটিং শুরু করেন ‘দুই বন্ধু’ ওয়েব সিরিজের। এতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তমা। টানা আট দিন এই সিরিজের শুটিং করেন তিনি। অঞ্জন দত্তের পরিচালনায় কাজ করতে পেরে তমা ভীষণ আনন্দিত।
বললেন, ‘এর আগে আমি কলকাতার কোনো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করিনি। তাই অঞ্জন দত্তের সঙ্গে কাজের প্রস্তাবে একটু ভয়ে ছিলাম। কারণ, তাঁর সঙ্গে সেখানকার বড়মাপের সব অভিনয়শিল্পী কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতা শেষ পর্যন্ত অসাধারণ। তিনি অসাধারণ পরিচালক যেমন, তেমনি অসাধারণ একটা শিল্পী। ক্যাপ্টেন অব শিপ হিসেবে তিনি আমাকে মুগ্ধতায় ভাসিয়েছেন।’
২০১৫ সালে শাহনেওয়াজ কাকলী পরিচালিত ‘নদীজন’ সিনেমায় অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তমা। কিন্তু গতানুগতিক নায়িকাসুলভ চরিত্র থেকে বের হতে পারছিলেন না। তারপর চরকি প্রযোজিত ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’তে নিজেকে ভেঙে নতুন করে জন্ম দেন তমা। পরে ‘সাত নম্বর ফ্লোর’ দিয়ে আবারও জ্বলে ওঠেন। সময় যত যাচ্ছে, ক্রমেই যেন জ্বলে উঠছেন তমা। কারও কারও মতে, তমাকে নতুন করে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করেছেন রায়হান রাফী। সেই রাফীরই ‘ফ্রাইডে’, ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’, ‘সুড়ঙ্গ’তে বাজিমাত করেন তমা। এই কাজগুলোতে তমার অভিনয় দেখে একদিন ফোনকল আসে ওপার বাংলার অঞ্জন দত্তর কাছ থেকে।
প্রসঙ্গ উঠতেই তমা বললেন, ‘তিনি আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, আমি আমার দুই বন্ধু সিরিজের একটা চরিত্রে তোমাকেই দেখি। আমরা বেশির ভাগ সময় ভিডিওকলে কথা বলেছি। কী টাইপের লুক চাচ্ছেন, সংলাপ কীভাবে দেব, এসব নিয়ে কথা বলতেন। সিরিজে কী কী গান আছে, সেগুলো গিটার বাজিয়ে শোনাতেন। আমি যখন কথা বলতাম, তখন তিনি বলতেন, আমি এই সংলাপটা ঠিক এভাবেই চাই।’
কলকাতায় ‘দুই বন্ধু’ সিরিজের ৯ দিন শুটিং করেছেন তমা মির্জা। পুরো কাজটা করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছেন বলেও জানালেন তিনি। বললেন, ‘আমাদের এখান থেকে তাদের কাজের ধরনটা একটু ভিন্ন। এক শিফট করে কাজ করেছি। রাত আটটার মধ্যে প্যাকআপ। খুব সকালে আবার শুটিং শুরু হয়। টিম গোছানো। কী হবে সবাই জানে। তিনি যে একজন অঞ্জন দত্ত, এত গ্রেট মানুষ, এটা মনেই করতে দেননি। সুন্দর সুন্দর জোকস বলছেন। আমি আনন্দ নিয়ে কাজটা শেষ করেছি।’
বেড়েছে সম্মানী
‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তির পর সম্মানী বাড়িয়েছেন তমা মির্জা। তবে তা কত, সেটা বলতে চাইছেন না। কথায় কথায় এ–ও বললেন, ‘সম্মানী নিয়ে দর–কষাকষি করা আমার মোটেও পছন্দ না। এটা নিয়ে কথা বলার চেয়ে গল্প নিয়ে কথা বলাটা আমার জন্য ভীষণ আরামের ও আনন্দের। চরিত্র ও গল্প পছন্দ হলে সম্মানী আমার কাছে ম্যাটারই করে না। আমার কাছে মনে হয়, একটা ভালো কাজ কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান করতে চাইছে যেহেতু, সেখানে সম্মানীর জন্য বাড়তি চাপ দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না।’