তুই চোর...ক্যামেরার সামনে বলা প্রথম সংলাপ,শাবনুরের স্মৃতিচারণ
ঢালিউডের একসময়ের দাপুটে অভিনেত্রী শাবনূর এখন সন্তানসহ থিতু হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। বেশ কয়েক বছর ধরে চলচ্চিত্রে অনিয়মিত তিনি। সম্প্রতি আবার অভিনয়ে ফেরার আভাসও দিলেন। শোনা যাচ্ছে, মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে বড় পর্দায় ফেরা হতে পারে তাঁর। তবে যখনই ফিরুক না কেন, আজ এই অভিনয়শিল্পী চলচ্চিত্রে তাঁর পথচলার ৩০ বছর পূর্ণ করলেন। ১৯৯৩ সালের এই দিনে তাঁর অভিনীত এহতেশাম পরিচালিত ‘চাঁদনী রাতে’ ছবিটি মুক্তি পায়।
ছবি মুক্তির প্রথম দিনের কথা মনে করে শাবনূর ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সবার ভালোবাসায় চলচ্চিত্রজীবনের তিন দশক পার করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভোলেননি তিনি। এরপর প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় শাবনূরের সঙ্গে। বাংলাদেশ সময় আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টায় ফোন করতেই বললেন, ‘পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমি এখন সিডনির মারুব্রা সৈকতপারে আছি। বারবিকিউ পার্টি চলছে। সপ্তাহের তিন দিন পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে বের হই। আজও তা–ই।’
চলচ্চিত্রে তিন দশকের পথচলায় অভিনন্দন জানাতেই বললেন, ধন্যবাদ। কথায় কথায় বললেন, কবে যে এতটা বছর পার করলাম, টেরই পেলাম না। মনে হচ্ছে এই তো সেদিন ফিল্মে এলাম। কাজ করলাম। সিনেমা মুক্তি পেল। অবিশ্বাস্য। তবে ভক্ত-দর্শকের নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় আমার একমুহূর্তও মনে হয় না, অনেক দিন অভিনয়ে নেই। আশা করছি, শিগগিরই ফিরব।’
‘চাঁদনী রাতে’ ছবির প্রথম দিনের শুটিংয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই শাবনূর বললেন, ‘আমরা পুরো দলবল নিয়ে নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুরে যাই। প্রথম দিনের শুটিং সেখানেই করি। টানা এক মাসের বেশি শুটিং করি। প্রথম দিনের শুটিংয়ে প্রথমে সংলাপ দিয়ে শুরু হয়। সংলাপটি ছিল, তুই চোর বেটা। এটার পরই গান। সহশিল্পী ছিল সাব্বির।’
এদিকে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে শাবনূর লিখেছেন, ‘স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রয়াত এহতেশাম দাদুর ‘চাঁদনী রাতে’ ছবির মাধ্যমে ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর আমার চলচ্চিত্রযাত্রা শুরু হয়। আমার সহশিল্পী ছিলেন নায়ক সাব্বির। আমার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে অনেক গুণী পরিচালকের ছবিতে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। ২০০৬ সালে মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘দুই নয়নের আলো’ আমাকে এনে দিয়েছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সম্মান। তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে ১০ বার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছি। এ ছাড়া তিনবার বাচসাস পুরস্কার লাভ করি।’
শাবনূর জানান, দর্শক–চাহিদার কারণে প্রযোজক-পরিচালকেরা তাঁকে নিয়ে ছবি নির্মাণে খুব আগ্রহী হয়। এই আগ্রহের কারণে ১৫৮ ছবিতে কাজ করার একটি মাইলফলক ছোঁয়া সম্ভব হয়েছে। শাবনূরের মতে, তিনি যে ১৫৮টি ছবিতে অভিনয় করেছেন, তার মধ্যে ব্যবসাসফল ও দর্শক-সমালোচক জরিপে অন্যতম সেরা ছবিগুলো হচ্ছে ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘তোমাকে চাই’, ‘তুমি আমার’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘সুজন সখী’, ‘জীবন সংসার’, ‘মহামিলন’, ‘বিক্ষোভ’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘বিচার হবে’, ‘দুই নয়নের আলো’, ‘নিরন্তর’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘নারীর মন’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘ফুল নেব না অশ্রু নেব’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘পৃথিবী তোমার আমার’, ‘কাজের মেয়ে’, ‘বস্তির মেয়ে’, ‘মধুর মিলন’, ‘বুকভরা ভালোবাসা’, ‘স্বপ্নের বাসর’, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘স্বপ্নের ভালোবাসা’, ‘তোমার জন্য পাগল’, ‘চার সতীনের ঘর’, ‘আমার স্বপ্ন তুমি’, ‘আমার প্রাণের স্বামী’, ‘১ টাকার বউ’, ‘তুমি শুধু তুমি’, ‘কঠিন প্রেম’, ‘ঢাকাইয়া পোলা বরিশালের মাইয়া’ ও ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’।
তিন দশকের অভিনয়জীবনে শাবনূর ও সালমান শাহ সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি জুটি। এর বাইরে আরও অনেক নায়কের সঙ্গে তিনি অভিনয় করেছেন। সেই প্রসঙ্গ মনে করে শাবনূর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সহশিল্পীদের মধ্যে প্রয়াত সালমান শাহর সঙ্গে আমার জুটি ছিল সব থেকে বেশি দর্শকপ্রিয়। সালমানের অকালমৃত্যুর আগপর্যন্ত মাত্র চার বছরে আমি ও সালমান দর্শক নন্দিত ও ব্যবসাসফল ১৪টি ছবিতে জুটি বেঁধে কাজ করেছিলাম। আমার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে আরও যেসব সহশিল্পীর অবদান অনেক বেশি রয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মান্না ভাই, ওমর সানী, বাপ্পারাজ, আমিন খান, অমিত হাসান, রিয়াজ আহমেদ, ফেরদৌস আহমেদ, শাকিল খান, শাকিব খান প্রমুখ।
ফেসবুকে শাবনূর লিখেছেন, আল্লাহর রহমত ও সবার দোয়ায় চলচ্চিত্রে এখনো যথেষ্ট সম্মান নিয়েই বেঁচে আছেন।
তিনি বললেন, ‘আমার অভিনয় জীবনের দীর্ঘ ৩০ বছরের পথচলায় চলচ্চিত্রের সব প্রযোজক, পরিচালক, সহশিল্পী, চিত্রনাট্যকার, নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী, ক্যামেরাম্যান ও ছবির সঙ্গে জড়িত কলাকুশলীসহ সবার কাছে আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ ও ঋণী। বিশেষ করে আমার ছবির দর্শক ও অগণিত ভক্তদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও সমর্থনে আমি আজকের শাবনূর। সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত হওয়ার পর থেকে উপলব্ধি করছি, আমাকে নিয়ে তাঁদের ভালোবাসা আজও বদলায়নি, বরং বেড়েই চলেছে। আশা করি, আমার প্রতি আপনাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। আমি সাংবাদিক ভাই-বোনদের প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার প্রতি আপনারা প্রায় সবাই যেভাবে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে আমাকে এত দূর এগিয়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছেন, তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আজকের এই বিশেষ দিনে রইল সবার প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা, সবার প্রতি অনেক শুভকামনা।’