যেভাবে হলিউডে নুহাশ হুমায়ূন
রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকার সদস্যপদ পেয়েছেন নুহাশ হুমায়ূন। হলিউড ও দেশের কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে বর্তমানে ব্যস্ত এই বাংলাদেশি নির্মাতা। গত বুধবার নির্মাতার সঙ্গে কথা বলে এসব কাজের খবর জানলেন মনজুরুল আলম
দুই বছর আগে অস্কার কোয়ালিফাইড চলচ্চিত্র উৎসব ‘সাউথ বাই সাউথওয়েস্টে’ পুরস্কার জেতে নুহাশ হুমায়ূনের ‘মশারি’। স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমাটি পরে আরও কয়েকটি উৎসবে পুরস্কৃত হয়। তারপর থেকেই হলিউডে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সির নজরে পড়েন নুহাশ। সে সময় নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে ছবিটির সঙ্গে যুক্ত হন অস্কারজয়ী নির্মাতা জর্ডান পিল ও অভিনেতা রিজ আহমেদ।
হলিউডের অন্যতম শীর্ষ এজেন্সি অ্যানোনিমাস কনটেন্টের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন নুহাশ। তরুণ এই নির্মাতা বলেন, ‘এই চুক্তির পরে হলিউড মার্কেটে আমার যোগাযোগ বাড়তে থাকে। এজেন্সির মাধ্যমে হলিউড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে পুরোদমে কাজ শুরু হয়। অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এটাই ছিল শুরু।’
যেভাবে রাইটার্স গিল্ডের সদস্য
রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইন গণমাধ্যমের লেখকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন। এর সদস্য হওয়ার জন্য সরাসরি হলিউড স্টুডিওর জন্য নির্মিত পেইড প্রজেক্টে কাজ করতে হয়। নুহাশ ইতিমধ্যে দুটি ফিল্ম রাইটিং প্রকল্পে কাজ করেছেন।
এই চুক্তির পরে হলিউড মার্কেটে আমার যোগাযোগ বাড়তে থাকে। এজেন্সির মাধ্যমে হলিউড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে পুরোদমে কাজ শুরু হয়। অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এটাই ছিল শুরু
চলছে আরও কাজ। এভাবেই কাজ করে ধাপে ধাপে এগিয়েছেন। নুহাশের ভাষ্যে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রোডাকশন হাউসের সঙ্গে ‘মশারি’ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে লেখা নিয়েও চুক্তি হয়েছিল। রাইটার্স গিল্ডের সদস্য হওয়ার জন্য হলিউডের কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করতে হয়। যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হলে অনেক লাভ, এর মধ্যে হলিউডে কাজ করার সুযোগ তো রয়েছেই।’
এ-২৪ ফিল্মসে কী কাজ?
প্রখ্যাত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি এ-২৪। তাদের প্রযোজিত পরিবেশিত ছবির মধ্যে রয়েছে ‘টিউজডে’, ‘লেডিবার্ড’, ‘এভরিথিং এভরিহয়ার অল অ্যাট ওয়ানস’, ‘সিভিল ওয়ার’, ‘আনকাট জেমস’, ‘মুনলাইট’, ‘টক টু মি’, ‘হেরিডিটারি’, ‘মিডসমার’, ‘এক্স মেশিনা’, ‘দ্য হোয়েল’–এর মতো সিনেমা। ফেসবুকে সেই হাউসে ঘোরাঘুরির ছবি দিয়েছেন নুহাশ। তাহলে কি এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কোনো সিনেমায় যুক্ত হচ্ছেন?
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বছর পিলারস ফেলোশিপ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলাম। তারা সারা বিশ্ব থেকে ১০ জন মুসলিম ফিল্ম নির্মাতাকে বাছাই করে। তাদের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সিনেমার অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ২৫ হাজার ডলারের একটি তহবিল দেয়। এর স্পনসর করে নেটফ্লিক্স, আমাজন ও এ-২৪ ফিল্মস। যে কারণে তাদের সঙ্গে আমাদের একটি মিটিং হয়েছিল। আমাকে যে স্পনসর করছে, সেটির অংশ হিসেবেই এ-২৪ ফিল্মসে যেতে হয়েছিল।’
রাইটার্স গিল্ডের সদস্য হওয়ার জন্য হলিউডের কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করতে হয়। যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হলে অনেক লাভ, এর মধ্যে হলিউডে কাজ করার সুযোগ তো রয়েছেই।
হলিউডে পরিচালনা
চিত্রনাট্যকার হিসেবে তো থাকবেনই, ভবিষ্যতে হলিউডের সিনেমা বানানোর ইচ্ছা রয়েছে। একই সঙ্গে অবশ্যই বাংলাদেশেও কাজ করবেন। ‘শুধু যে বাইরের দেশে কাজ করব সেটি নয়। নিজের দেশে নিজের ভাষাতেও কাজ করব। এটিও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। একসঙ্গে বাংলাদেশ ও মূলধারার হলিউডে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে’, বলেন নুহাশ।
নবীন–প্রবীনের মেলবন্ধন
শুরু থেকেই তরুণ ও নবীনদের নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন নুহাশ। তার ‘হোটেল আলবাট্রোস’ নাটকে যেমন ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর, তেমনি ছিলেন শান রহমান, অ্যালেন শুভ্ররাও। আবার পেট কাটা ষ–এ সোহেল মন্ডল, নভেরা রহমান, শিরিন শীলাদের পাশাপাশি আফজাল হোসেন, চঞ্চল চৌধুরীকেও দেখা গেছে।
তরুণ ও অভিজ্ঞ শিল্পীদের মিশ্রণ প্রক্রিয়া নিয়ে নুহাশ বলেন, ‘এই মেলবন্ধনটা আমাকে খুবই টানে। এতে যা হয়, সিনিয়রদের কাছ থেকে শিখতে পারে তরুণেরা। আবার উল্টো সিনিয়র শিল্পীও কিন্তু তরুণদের কাছ থেকে শিখতে পারেন। সামনে আমার দ্বিতীয় সিনেমার শিল্পীদের নাম ঘোষণা করব। সেখানেও এই মেলবন্ধন থাকবে।’
মোশাররফ করিমের সঙ্গে কাজ আমাদের জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা। তিনি একদমই অন্যরকম, যাকে কারও সঙ্গে তুলনা করা যায় না। শুটিংয়ের সময়টা ভালো কেটেছে। অনেক কিছু তাঁর কাছ থেকে শিখতে পেরেছি। দারুণ অভিজ্ঞতা।
প্রসঙ্গ মোশাররফ করিম
প্রথমবারের মতো নুহাশের পরিচালনায় কাজ করেছেন মোশাররফ করিম। আগে পরিচয় থাকলেও এবার প্রথম কাজ। তবে এই কাজ নিয়ে এখনোই কোনো কথা বলতে চান না নুহাশ। শুধু বললেন, ‘মোশাররফ করিমের সঙ্গে কাজ আমাদের জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা। তিনি একদমই অন্যরকম, যাকে কারও সঙ্গে তুলনা করা যায় না। শুটিংয়ের সময়টা ভালো কেটেছে। অনেক কিছু তাঁর কাছ থেকে শিখতে পেরেছি। দারুণ অভিজ্ঞতা।’
ভৌতিক গল্পে কেন টানে?
‘মশারি’, ‘পেট কাটা ষ’, ‘ফরেনার্স অনলি’—নুহাশের নির্মিত অনেক কাজই হরর ঘরানার। শুরুতে কিন্তু তাকে ফ্যামিলি ড্রামা, রোমান্টিক, কমেডি জনরার কাজ করতে দেখা গেছে। ভৌতিক গল্পের প্রতি প্রেম কি হঠাৎ করে?
নুহাশ বললেন, ‘শৈশবে আমরা পরিবার থেকে ভৌতিক গল্প শুনে বড় হই। কাজিনরা যখন এক হতাম, কম্বলের ভেতরে কিন্তু ভৌতিক গল্পগুলোই বলেছি বা শুনেছি। আমাদের সংস্কৃতি বা উপন্যাসে সব সময়ই ফোকলোর, ফোক টেল বা আধুনিক ভূতের গল্পগুলো ছিল; কিন্তু ভিজ্যুয়ালি আমরা এই গল্পগুলো তুলে ধরতে পারিনি। সেই জায়গা থেকেই মনে হয়েছে, দেশীয় ভূতের গল্প তুলে ধরা উচিত।’
এই গল্পগুলো ঠিকমতো তুলে ধরতে না পারলে কমেডি হয়ে যায়। ঝুঁকি থাকে। এই ঝুঁকি নিতে আমার মজা লাগে।
হরর কনটেন্ট নির্মাণের চ্যালেঞ্জও নুহাশকে টানে। নির্মাতার ভাষ্যে, ‘এই গল্পগুলো ঠিকমতো তুলে ধরতে না পারলে কমেডি হয়ে যায়। ঝুঁকি থাকে। এই ঝুঁকি নিতে আমার মজা লাগে।’
বর্তমান ব্যস্ততা?
একসময় প্রযোজক পাওয়া নিয়ে সংশয়ে থাকলেও দুই বছর আগেই সেটা কেটে গেছে। বিশ্বের একাধিক জায়গা থেকে প্রথম সিনেমা ‘মুভিং বাংলাদেশ’–এর জন্য তহবিল পেয়েছেন। প্রযোজক প্রস্তুত থাকলেও চিত্রনাট্য এখনো মনমতো না হওয়ায় আরও সময় নিচ্ছেন নুহাশ। পাশাপাশি হলিউডের জন্য দুটি কাজ করছেন। এদিকে চরকির আলোচিত সিরিজ ষ–এর দ্বিতীয় মৌসুমের কাজ শেষ করছেন, এখন চলছে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ।
‘একসঙ্গে শুটিং কিন্তু একটিই করা যায়। এখন ষ–এর সম্পাদনা করছি। পাশাপাশি চিত্রনাট্য লিখছি। বিভিন্ন প্রকল্প বিভিন্ন পর্যায়ে থাকলে সেগুলো নিয়ে মনে শান্তি থাকে। কারণ একটি ভালো প্রজেক্ট করতে অনেক সময় লাগে। সেই সময়টার সদ্ব্যবহার করা যায়।’নুহাশ হুমায়ূন
একই সঙ্গে দেশ–বিদেশের একাধিক প্রজেক্টে যুক্ত থাকা নিয়ে নুহাশ বলেন, ‘একসঙ্গে শুটিং কিন্তু একটিই করা যায়। এখন ষ–এর সম্পাদনা করছি। পাশাপাশি চিত্রনাট্য লিখছি। বিভিন্ন প্রকল্প বিভিন্ন পর্যায়ে থাকলে সেগুলো নিয়ে মনে শান্তি থাকে। কারণ একটি ভালো প্রজেক্ট করতে অনেক সময় লাগে। সেই সময়টার সদ্ব্যবহার করা যায়।’