স্কুল-গোডাউন–কারখানার জন্য ভাড়া হবে রুনা সিনেমা হল

দুই সপ্তাহ ধরে একটি নোটিশ বোর্ড ঝুলছে ‘রুনা’ প্রেক্ষাগৃহের সামনেকোলাজ

নরসিংদীর মনোহরদীর ঐতিহ্যবাহী রুনা প্রেক্ষাগৃহ আর থাকছে না। ৩৯ বছরের পুরোনো এই প্রেক্ষাগৃহটি এখন মাদ্রাসা, স্কুল, অফিস, বিমা, ব্যাংক, কারখানা, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল ও গোডাউনের জন্য ভাড়া দেওয়া হবে। দুই সপ্তাহ ধরে এমন একটি নোটিশ বোর্ড  ঝুলছে ‘রুনা’ প্রেক্ষাগৃহের সামনে। প্রথম আলোকে ব্যবসার ধরন বদলের খবরটি জানিয়েছেন প্রেক্ষাগৃহের প্রতিষ্ঠাতা মালেক মিয়ার পুত্র ফারুক হোসেন, তিনিই এখন এই প্রেক্ষাগৃহ পরিচালনা করছেন।
রুনা প্রেক্ষাগৃহের অবস্থান নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার চালাকচর ইউনিয়নে। গত কয়েক বছর ক্রমাগত আর্থিক লোকসানে প্রেক্ষাগৃহটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

১৯৮৬ সালে ‘রুনা’ প্রেক্ষাগৃহ প্রতিষ্ঠা করেন মালেক মিয়া। বাবার পর ১৯৯৮ সাল থেকে এই প্রেক্ষাগৃহের যাবতীয় তদারকি করছেন পুত্র ফারুক হোসেন, তিনিই স্বত্বাধিকারী। প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে ফারুক হোসেন বলেন, ‘আর কত আর্থিক ক্ষতি গুনব? কর্মচারীর বেতন থেকে ইউটিলিটি বিল যদি পকেট থেকে দিতে হয়, তাহলে এ ব্যবসা করে কী হবে। তাই অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি।’
একসময় নরসিংদীর ছয় উপজেলায় সিনেমা হল ছিল ১৮টি। মনোহরদী উপজেলায় ছিল ‘পিপাসা’ ও ‘রুনা’ প্রেক্ষাগৃহ। এর আগে ‘পিপাসা’ বন্ধ হলেও টিকে ছিল ‘রুনা’। কিন্তু ২০২২–এর পর থেকে আশানুরূপ ব্যবসা হচ্ছিল না। নতুন কোনো ছবিও মুক্তি দেওয়া হয়নি বলে জানালেন প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষ। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। এবার তাই একেবারেই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়েই প্রেক্ষাগৃহটির ৩৯ বছরের পথচলা আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হচ্ছে।

কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়িক অবস্থা খারাপ হলেও একটা সময় রমরমা ছিল। দর্শকের উপচে পড়া ভিড় থাকত এই প্রেক্ষাগৃহে। রুনা প্রেক্ষাগৃহে ব্যবসায়িক ভালো সময়ও দেখার সুযোগ হয় ফারুক হোসেনের। তিনি জানান, আশপাশের উপজেলা থেকে নানা বয়সী দর্শকেরা ছুটে আসত। হাউসফুল থাকত প্রায় প্রতিটা শো। চেয়ার শেষ হয়ে, বেঞ্চিতে বসাতে হতো দর্শকদের। আত্মীয় থেকে বন্ধুরা আগে থেকেই টিকিটের জন্য অনুরোধ করতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর অনেক চেষ্টা করেও টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমি যত দূর জানি আমাদের এই হলটি সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে ‘লাইলী মজনু’ ও ‘বেদের মেয়ে জোস্‌না’ সিনেমায়। পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ব্যবসা করেছে শাকিব খান অভিনীত ‘নবাব’ সিনেমায়।’  

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, নব্বই দশকে দেশে প্রায় সাড়ে ১২০০ প্রেক্ষাগৃহ ছিল। একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে দেড় শতে। এর মধ্যে প্রায় ৬৫টি থেকে ৭০টি প্রেক্ষাগৃহ চলছে পুরোদমে। সবশেষ বন্ধ হয় ময়মনসিংহের ‘পূরবী’। তালিকায় এবার যুক্ত হলো মনোহরদী উপজেলার চালাকচরের ‘রুনা’ প্রেক্ষাগৃহ।