চলচ্চিত্রে সার্টিফিকেশনের মোড়কে সেন্সরই রয়ে গেল

সেন্সর বোর্ডের নাম সার্টিফিকেশন বোর্ড হলেও সেন্সরের খড়্গ থেকে চলচ্চিত্রের মুক্তি মিলবে কি?

২০ সেপ্টেম্বর দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন করেছে সরকারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

চার দশক আগে সেন্সর যুগের ইতি টেনেছে ভারত। ১৯৮৩ সালে সেন্সর বোর্ডের নাম বদলে সার্টিফিকেশন বোর্ড করেছে দেশটি। বলিউড, তামিল, তেলেগু কিংবা টালিগঞ্জের সিনেমায় রেটিং (সার্টিফিকেশন) প্রথার চল রয়েছে। সেন্সর বোর্ডের প্রধান কাজ ছবির ছাড়পত্র দেওয়া বা আটকানো। সার্টিফিকেশন বোর্ডের প্রধান কাজ কোন ছবি কোন বয়সের দর্শকের জন্য উপযোগী, তা নির্ধারণ করে দেওয়া।

ভারতীয় সিনেমার ওপর চার ভাগে রেটিং দেয় ‘দ্য সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন’ (সিবিএফসি)। ১. ‘ইউ’ রেটিং পাওয়া ছবি সব বয়সী মানুষ দেখতে পারবেন। ২. ‘ইউএ’ রেটিং পাওয়া ছবিতে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য অস্বস্তিকর দৃশ্য থাকতে পারে; প্যারেন্টাল গাইডেন্স অনুসরণ করতে হয়। ৩. ‘এ’ বিভাগের সনদপ্রাপ্ত ছবি শুধু প্রাপ্তবয়স্ক দর্শকের জন্য। ৪. ‘এস’ সনদ পাওয়া ছবি শুধু বিশেষ শ্রেণি–পেশার মানুষের দেখার উপযোগী।

ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের বহু দেশে সার্টিফিকেশন (রেটিং) প্রথাই চালু রয়েছে। তবে বাংলাদেশে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সেন্সর প্রথা গেঁড়ে ছিল। চলচ্চিত্রকর্মীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের মুখে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২৩’ পাস করে বিগত সরকার।

১. ‘ইউ’ রেটিং পাওয়া ছবি সব বয়সী মানুষ দেখতে পারবেন। ২. ‘ইউএ’ রেটিং পাওয়া ছবিতে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য অস্বস্তিকর দৃশ্য থাকতে পারে; প্যারেন্টাল গাইডেন্স অনুসরণ করতে হয়। ৩. ‘এ’ বিভাগের সনদপ্রাপ্ত ছবি শুধু প্রাপ্তবয়স্ক দর্শকের জন্য। ৪. ‘এস’ সনদ পাওয়া ছবি শুধু বিশেষ শ্রেণি–পেশার মানুষের দেখার উপযোগী।
আরও পড়ুন

সে আইনেই ২০ সেপ্টেম্বর দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন করেছে সরকার। সার্টিফিকেশন বোর্ডে গঠনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও সেন্সর বোর্ডের অবসান ঘটল।

সার্টিফিকেশন বোর্ড নিয়ে আলোচনার মধ্যে সার্টিফিকেশন আইনকেও সামনে আনছেন নির্মাতারা, শিল্পীরা। আইনের বেশ কয়েকটি ধারা নিয়ে চলচ্চিত্রকর্মীদের জোরালো আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আইনটি করেছিল বিগত সরকার।

চলচ্চিত্র বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট, ১৯৬৩’-এর বেশিরভাগ ধারাই সার্টিফিকেশন আইনে রেখে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও কড়া করা হয়েছে। ফলে সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠিত হয়েছে কেবল নামেই। এর আইন সংশোধন না করা হলে সেন্সরের খড়্গ থেকে ঢাকার চলচ্চিত্রের মুক্তি আর মিলবে না।

চলচ্চিত্র বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট, ১৯৬৩’-এর বেশিরভাগ ধারাই সার্টিফিকেশন আইনে রেখে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও কড়া করা হয়েছে। ফলে সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠিত হয়েছে কেবল নামেই।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সেন্সর প্রথা গেঁড়ে ছিল।
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

সার্টিফিকেশনের মোড়কে সেন্সর

‘দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট, ১৯৬৩’ এবং ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২৩’ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দুই আইনের কোনো কোনো ধারা প্রায় হুবহু মিল রয়েছে। আবার সার্টিফিকেশন আইনের কোনো ধারা সেন্সর আইনের চেয়েও বেশি ‘দমনমূলক’।

দুটি আইন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সার্টিফিকেশন আইনের ২১ ধারার মধ্যে ১৩ ধারাই সেন্সর–সংক্রান্ত; সার্টিফিকেশন বা রেটিংয়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

সার্টিফিকেশন বোর্ডের চেয়ারম্যান কে হবেন, এর সদস্য সংখ্যা কত হবে, সার্টিফিকেশন বোর্ডের কার্যাবলি, সার্টিফিকেশন স্থগিত বা বাতিল কিংবা আইন লঙ্ঘনে শাস্তির ধারাগুলো নেওয়া হয়েছে প্রায় হুবহু সেন্সর আইন থেকে।

উল্টো সার্টিফিকেশন আইনের সংজ্ঞায় ‘চলচ্চিত্রের’ পরিধি আরও বাড়ানো হয়েছে। সেন্সর আইনে শুধু পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকেই ‘চলচ্চিত্র’ বলা হতো। সার্টিফিকেশন আইনে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পাশাপাশি স্বল্পদৈর্ঘ্য, প্রামাণ্যচিত্র, কার্টুনচিত্র, অ্যানিমেশন চিত্রসহ সব ধরনের চলচ্চিত্রকেই সার্টিফিকেশন আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

দুটি আইন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সার্টিফিকেশন আইনের ২১ ধারার মধ্যে ১৩ ধারাই সেন্সর–সংক্রান্ত; সার্টিফিকেশন বা রেটিংয়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

চলচ্চিত্র নির্মাতা বেলায়াত হোসেন মামুন মনে করেন, ‘সার্টিফিকেশনের ধারণা হলো, এটি আপনাকে উন্মুক্ত পরিসর দেবে, স্বাধীনতা দেবে। সেন্সর আইনে এই স্বাধীনতা সংকুচিত ছিল, সার্টিফিকেশন আইনে তা–ও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’

বেলায়াত হোসেন মামুন বলেন, আগে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বা প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে সেন্সর বোর্ড খুব মাথা ঘামাত না। এ আইনে সেগুলোও সরকারি অনুমোদনের আওতায় আনা হলো। সার্টিফিকেশন বোর্ডের ‘অনুমোদন’ ছাড়া কেউ আর তা কোথাও দেখাতে পারবে না।

সার্টিফিকেশনের ধারণা হলো, এটি আপনাকে উন্মুক্ত পরিসর দেবে, স্বাধীনতা দেবে। সেন্সর আইনে এই স্বাধীনতা সংকুচিত ছিল, সার্টিফিকেশন আইনে তা–ও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
বেলায়াত হোসেন মামুন, চলচ্চিত্র নির্মাতা

সার্টিফিকেশন আইন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ডিজিটাল মাধ্যমের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্রের জন্য সার্টিফিকেশন বোর্ডের অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন ছাড়া ওটিটি বা কোনো ডিজিটাল মাধ্যমেই ছবি প্রদর্শন করা যাবে না।

নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন বলছেন, ‘এর ধারাগুলা এত বিস্তৃত ও মারাত্মক যে যেকোনো ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাতাই এই আইনের আওতায় বন্দী হবেন। সার্টিফিকেশন বোর্ডের কাজ ছবির গ্রেডিং করা, অথচ এই নতুন আইনের সুযোগে বোর্ড এখন ডিজিটাল কনটেন্টেরও ভাগ্যবিধাতা। কোনটা দেখানো যাবে আর কোনটা যাবে না, সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক সর্বময় ক্ষমতা এখনো এই বোর্ডের।’

চলচ্চিত্র বিশ্লেষকেরা বলছেন, সার্টিফিকেশন বোর্ডের প্রধান কাজ কখনোই ছবি আটকানো নয়, ছবিটি কোন বয়সের দর্শকেরা দেখতে পারবেন, সেটা নির্ধারণ করা। অথচ সার্টিফিকেশনের নামে সেন্সর আইনকেই আরও কঠোরভাবে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ফলে নির্মাতারা চলচ্চিত্র নির্মাণে আগের স্বাধীনতাও কতটা পাবেন, তা নিয়ে নতুন করে সংশয় তৈরি হয়েছে।

ঢাকার সিনেমার রেটিং কেমন হবে, তা নিয়ে বিধিমালা করছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। তবে সেটা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সার্টিফিকেশন বোর্ডের কাজ ছবির গ্রেডিং করা, অথচ এই নতুন আইনের সুযোগে বোর্ড এখন ডিজিটাল কনটেন্টেরও ভাগ্যবিধাতা।
কামার আহমাদ সাইমন, নির্মাতা

চেয়ারম্যানই ভাগ্যবিধাতা

গত দেড় দশকে একের পর এক ছবি আটকে দিয়ে বারবারই শিরোনামে এসেছে ঢাকার সেন্সর বোর্ড। ‘নমুনা’, ‘রানা প্লাজা’, ‘অমীমাংসিত’, ‘শনিবার বিকেল’, ‘মেকআপ’, ‘মং থেংগারি’র মতো সিনেমা বছরের পর বছর ধরে সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে।

১৯৬৩ সালের ‘দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্টে’ ছবি আটকে দেওয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা ছিল সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানের। সার্টিফিকেশন আইনেও বোর্ডের চেয়ারম্যানকে একচেটিয়া ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

সার্টিফিকেশন আইনেও পদাধিকারবলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব সার্টিফিকেশন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও সচিবই থাকতেন।

বোর্ডের চেয়ারম্যান চাইলে সার্টিফিকেশন দেওয়ার পরও সার্টিফিকেশন আইনের ৮ ধারা বলে কোনো ছবির সার্টিফিকেশন সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারেন।

সার্টিফিকেশন আইনের ৯ ধারায় সার্টিফিকেশন পাওয়া চলচ্চিত্রের সার্টিফিকেশন বাতিলের এখতিয়ার রয়েছে সরকারের।

১৯৬৩ সালের ‘দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্টে’ ছবি আটকে দেওয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা ছিল সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানের। সার্টিফিকেশন আইনেও বোর্ডের চেয়ারম্যানকে একচেটিয়া ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

কী কী কারণে কোনো ছবির সার্টিফিকেশন স্থগিত কিংবা বাতিল করা যাবে, তার একটা ফিরিস্তি সেন্সর আইনে ছিল। সার্টিফিকেশন আইনেও আছে। চাইলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বোর্ডের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারেন। পাশাপাশি সেন্সর বোর্ডের মতো সার্টিফিকেশন বোর্ডেরও একটি আপিল কমিটি গঠনের কথা রয়েছে। এতে আপিলও দায়েরের সুযোগ রয়েছে।

নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন বলেছেন, নাম পাল্টালেই জেলখানা যেমন সরাইখানা হয়ে যায় না, তেমনি সেন্সরের জায়গায় সার্টিফিকেশন নাম দিলেই এটা সিনেমাবান্ধব হয়ে যায় না।

নির্মাতা সাইমন বলেন, ‘এখনো আমলারাই এই বোর্ডের চেয়ারম্যান। যেহেতু পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান যেকোনো সিদ্ধান্ত বাতিল বা উল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, তাই দিনের শেষে নতুন এই বোর্ডের সব ক্ষমতা আমলাদের হাতেই থেকে গেল।’

এর আগে সেন্সর বোর্ডে চলচ্চিত্রকর্মীদের তুলনায় সরকারি কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি ছিল। নবগঠিত সার্টিফিকেশন বোর্ডেও সরকারি কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি। সংখ্যায় কম হওয়ার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারি কর্মকর্তাদের তুলনায় চলচ্চিত্রবোদ্ধারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন না।

নাম পাল্টালেই জেলখানা যেমন সরাইখানা হয়ে যায় না, তেমনি সেন্সরের জায়গায় সার্টিফিকেশন নাম দিলেই এটা সিনেমাবান্ধব হয়ে যায় না।
কামার আহমাদ সাইমন, নির্মাতা

ভারতে আমলা নন, নির্মাতা, প্রযোজক বা চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরই ‘দ্য সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন’ (সিবিএফসি)–এর চেয়ারপারসনের দায়িত্বে থাকেন। বর্তমানে এর দায়িত্বে আছেন কবি, গীতিকবি ও চিত্রনাট্যকার প্রসূন জোশি।

গত দুই দশকের সিবিএফসির চেয়ারপারসন ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক পেহলাজ নিহালানি, নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার লীলা স্যামসন, অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর, অভিনেতা অনুপম খের, অভিনেতা বিজয় আনন্দ, অভিনেত্রী আশা পারেখ, অভিনেতা অরবিন্দ ত্রিবেদী।

ভারতের সার্টিফিকেশন বোর্ডে সচিব হিসেবে রাখা হয় সরকারি কর্মকর্তাকে।চেয়ারম্যান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ায় শিল্পী, নির্মাতা, প্রযোজকেরা চলচ্চিত্রের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন। তবে ভারতেও মাঝেমধ্যে সার্টিফিকেশন বাতিলের খবর মেলে।


শাস্তি বেড়েছে

সেন্সর আইনের মতো সার্টিফিকেশন আইনেও আইন লঙ্ঘনের শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে সার্টিফিকেশন আইনে শাস্তির মেয়াদ আরও বেড়েছে। সেন্সর আইনে সেন্সর সনদ ছাড়া কোনো ছবি প্রদর্শন করলে সর্বোচ্চ তিন বছর, ন্যূনতম এক বছর কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান ছিল।

সার্টিফিকেশন আইনে সার্টিফিকেশনবিহীন ছবি প্রদর্শনে শাস্তি বাড়িয়ে অনধিক পাঁচ বছর করা হয়েছে। সার্টিফিকেশন পাওয়ার পর বোর্ডের দেওয়া প্রতীক পরিবর্তন করলে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

বেলায়াত হোসেন মামুন বলেন, সেন্সর থেকে সার্টিফিকেশনে উত্তরণের যে মর্ম, তা এ আইনে কার্যকর করা সম্ভব হবে না৷ এ আইনের মূল ভিত্তি এখনো সেন্সর আইন।

সার্টিফিকেশন আইন সংশোধনের প্রশ্নে ১৮ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানান, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সার্টিফিকেশন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।


আইন সংশোধন করবে সরকার

‘সার্টিফিকেশন আইন আসলে ব্রিটিশ উপনিবেশের প্রভুদের বানানো শতবর্ষ পুরোনো নিপীড়নমূলক আইনের উত্তরাধিকার। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশের আইনটি ব্রিটিশদের আইনের চেয়েও নিবর্তনমূলক।’ বলছিলেন নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন।

চলচ্চিত্র বিশ্লেষকেরা বলছেন, সার্টিফিকেশন আইনের প্রয়োজন চলচ্চিত্র নির্মাণ, প্রদর্শন ও চলচ্চিত্র সংস্কৃতিকে উৎসাহিত ও সুরক্ষিত করার জন্য, চলচ্চিত্র–সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নয়।

চলচ্চিত্র সংগঠক মামুন বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের সংবিধানে বাক্‌ ও চিন্তার স্বাধীনতার যে অঙ্গীকার করা হয়েছে, চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন সে আলোকে তৈরি হোক।’

‘সিনেমা বা কনটেন্টকে আইনি কাঠামোয় আমলাদের হাত থেকে মুক্ত করে এর অংশীজনের হাতে ছেড়ে দেওয়া দরকার। নতুনদের শুধু সদস্য বানালে হবে না, তাঁদের ক্ষমতায়িত করতে হবে। সমস্যার গোড়া দুইটা—আমলা ও আইন। বিকল্প প্রস্তাব দিতে হবে, কার্যকর একটি সমাধানে আসতে হবে,’ বলেছেন নির্মাতা সাইমন।

সার্টিফিকেশন আইন সংশোধনের প্রশ্নে ১৮ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানান, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সার্টিফিকেশন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০২৩ সালের যে আইন রয়েছে, সেই আইনও অনেক ত্রুটিপূর্ণ। সেই আইনের অনেক ত্রুটি নিয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে। নানা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে আইনটি সংশোধনের জন্য কাজ করব। সেই প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে।’

সিনেমাটোগ্রাফ অ্যাক্ট ১৯১৮-এর মাধ্যমে এ দেশে চলচ্চিত্র সেন্সরের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল। ১৯৫২ সালে ‘ইস্ট বেঙ্গল বোর্ড অব ফিল্ম সেন্সরস’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডের সূচনা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড নামটি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন