মৃত্যু পর্যন্ত তুমিই থাকবে, বলেছিলেন মাহি, এক বছরে বিচ্ছেদের খবর!
‘তাঁর সংসার কেন ভাঙে। কেন হাজবেন্ডের সঙ্গে থাকতে পারল না বা হাজবেন্ড কেন তাঁকে সহ্য করতে পারছে না। অথবা তাঁর ওয়াইফটা কেন তাঁর হাজবেন্ডকে সহ্য করতে পারছে না। অথবা দুজন কেন ভালো নাই। দুজনের মধ্যে আসলে কী ঝামেলা হয়েছে—এগুলো তো আমরা আসলে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বুঝব না। তাই আমরা কাউকে নিয়ে যেন জাজ না করি।’
গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে এসব কথা ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান সরকার রাকিবের সঙ্গে বৈবাহিত সম্পর্কের ইতি টানার আভাস হিসেবে এসব কথা বলেন তিনি।
ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান সরকার রাকিবের সঙ্গে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি দুই বছর আগে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়ান। দুজনেরই প্রথম বিয়ের বিচ্ছেদের পর তাঁরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তিন বছরের মাথায় তাঁদের সংসারে ভাঙনের সুর শোনা গেল। মাহিয়া মাহি ভিডিও বার্তায় তাঁদের বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ্যে আনেন। হঠাৎ কী এমন হলো তাঁদের বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে হলো—সেই বিষয়ে পরিষ্কার কিছু না বললেও শুধু এটুকু বললেন, ‘আমাদের দুজনের মধ্যে একটু সমস্যা আছে, তাই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি।’
ভিডিও বার্তায় বিচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেও বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন মাহিয়া মাহি। তাঁর ফেসবুক স্টোরিতে থাকা স্থিরচিত্র ও ভিডিও ক্লিপ তেমনটাই বলছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে মজার সময় পার করছেন তিনি।
রাকিব সরকারের সঙ্গে আট বছরের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল বলে বিয়ের সময় মাহি প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন। সেই বন্ধুত্বের সম্পর্কের একটা পর্যায়ে সিলেটের পারভেজ মাহমুদ অপুর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি টানলে মাহি অনেকটা গোপনে রাকিবের সঙ্গে বিয়ের সম্পর্কে জড়ান। এটি ছিল রাকিবেরও দ্বিতীয় বিয়ে।
কী কারণে রাকিব সরকারকে বিয়ে করেছিলেন, এমন প্রশ্নে মাহি তখন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘ওর সঙ্গে তো আমার প্রেম ছিল না। বন্ধু হিসেবে একটু ঘুরতাম। এই নিয়ে এত নিউজ হয়েছে, চারদিকে এত গুজব ছড়াচ্ছিল, সেই নিউজ দেখেই কথা বলতে বলতে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, চলো, বিয়ে করি। আমিও একা ছিলাম, সে-ও একা ছিল। আমাদের মধ্যে অনেক মতের মিল ছিল। তখন ওর তরফ থেকেও বিয়েতে রাজি হয়। কোনোভাবেই এটা প্রেম-ভালোবাসার বিয়ে না, আবার অ্যারেঞ্জও না। দুজনের দুই দিক থেকে মনে হয়েছে, একসঙ্গে থাকা যায়। আমি তো সারা জীবন নায়িকা থাকব না। ঘরসংসার তো করতেই হবে। সেদিন থেকেই মনে হয়েছে, সে-ই সেরা। একটা মানুষ দুপুর ১২টা, কখনো বেলা ২টায় ঘুম থেকে উঠত। আমি পছন্দ করি বলে সে সকাল ৭টায় ঘুম থেকে ওঠে। সে আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দেয়। আমাকে কেয়ার করে। প্রতিদিন আমাকে ফুল দেয়। এটা আমাকে মুগ্ধ করেছে। মনে হয়েছে, মানুষটাকে নিয়ে সংসার করা যায়।’
এদিকে এক বছরের মাথায় গতকাল মধ্যরাতে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে দেওয়া ভিডিও বার্তায় মাহি বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তবে রাকিব খুব ভালো মানুষ। তাকে আমি সম্মান করি। অনেক কেয়ারিং সে।’কেঁদে মাহি বলেন, ‘খুব দ্রুতই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদে যাচ্ছি। কবে আর কীভাবে হবে, সেটিও দুজন মিলেই ঠিক করব।’
মাহি এ–ও বললেন, ‘আমি আর রাকিব আমরা আসলে খুব ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং থেকেই বিয়ের সিদ্ধান্তে এসেছিলাম এবং আমরা খুব ভালোই ছিলাম। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে মনে হয়েছে যে আমরা আসলে দুজন দুজনের জন্য “না”। সে খুব ভালো একজন মানুষ। খুবই পরোপকারী একজন মানুষ। খুবই কেয়ারিং একজন মানুষ। এই পর্যন্ত যতগুলো দিন আমি কাটিয়েছি, সে আমার অনেক যত্ন নিয়েছে, আমারও অনেক টেক কেয়ার করেছে, আমার পুরো পরিবারের মানুষকে সম্মান করেছে। যেকোনো প্রয়োজনে সে পাশে দাঁড়িয়েছে। সব সময় সে আমাকে ছাতার মতো করে আগলে রেখেছিল।’
২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের ব্যবসায়ী রাকিব সরকারকে বিয়ে করেছেন মাহি; এটি তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে। এই দম্পতি ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেন। নাম ফারিশ।
এদিকে মাহি-রাকিবের বিয়ের খবরটি প্রকাশ্যে আসার পর ফেসবুকে সমালোচনায় পড়েন তাঁরা। অনেকে অনেক ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। বিয়ের পর রাকিব সরকার তাঁর ফেসবুক আইডিতে মাহির একটি ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আমার একমাত্র বউয়ের আলোকচিত্রী আমি।’
লাইনটির শেষে ভালোবাসার ইমোজিও জুড়ে দিয়েছেন তিনি। সেই স্ট্যাটাসের নিচে এমডি জুনায়েদ নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘দুইমাত্র হবে কাকা।’ পাল্টা মন্তব্যে রাকিব সরকার লিখেছেন, ‘আমার বউ একটাই। ডিভোর্সের পর বউ থাকে না।’ ওই দিনই রাকিব সরকারের স্ট্যাটাস এবং রাকিব ও জুনায়েদের মন্তব্যগুলোর স্ক্রিনশট মাহিয়া মাহি তাঁর ফেসবুকে শেয়ার করেন। রাকিবের উদ্দেশে ভালোবাসার ইমোজি জুড়ে দেওয়ার স্ট্যাটাসে মাহি লিখেছিলেন, ‘আজকের তারিখটা স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখব প্রিয় ডায়েরিতে। তোমার এই একটা লাইন কথার জন্য আমি যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করে ছিলাম। প্রিয়তম, তোমার এই একমাত্র বউয়ের একমাত্র ব্যক্তিগত আলোকচিত্রী মৃত্যু পর্যন্ত তুমিই থাকবে ইনশা আল্লাহ, অনেক ভালোবাসি তোমাকে।’
কথায় কথায় মাহি সেদিন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘রাকিবের এই স্ট্যাটাস, মন্তব্য দেখার পর আমার জীবনে এত খুশি কখনো হইনি। আমার প্রতি রাকিবের ভালোবাসায় কোনো খাদ নাই। আমাকে সব সময়ই ছায়া দিয়ে রাখে সে। কিন্তু আমাদের বিয়ের পরও তার আগের বউয়ের বিচ্ছেদের ব্যাপারটা সে এভাবে প্রকাশ করেনি কখনো। সেটি নিয়ে মনে মনে আমার অভিমান ছিল, একটু কষ্টও ছিল। রাকিব নিজে থেকেই তা দূর করে আমাকে আনন্দের কান্না উপহার দিয়েছে।’
এর আগে ২০১৬ সালে সিলেটের ব্যবসায়ী পারভেজ মাহমুদ অপুকে ভালোবেসে বিয়ে করেন মাহি। পাঁচ বছর সংসার করার পর ২০২১ সালের ২২ মে বিবাহিত সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেন তিনি। অপুর সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানার আগেই রাকিবের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে। এদিকে মাহিও রাকিবের দ্বিতীয় স্ত্রী। রাকিবের আগের সংসারে দুই সন্তান আছে।