‘বরবাদ’ সিনেমার পরিচালক ও ভারতীয় চিত্রগ্রাহকের ‘ভুল–বোঝাবুঝি’র অবসান

‘বরবাদ’ সিনেমার বিভিন্ন দৃশ্য। কোলাজ

ঈদে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত মেহেদী হাসানের সিনেমা ‘বরবাদ’। ঢাকাসহ সারা দেশে সিনেমাটি দেখতে উপচে পড়ছেন দর্শক। এর মধ্যে আজ রোববার সিনেমার নির্মাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন ভারতীয় চিত্রগ্রাহক শৈলেশ আওয়াস্থি। নির্মাতা মেহেদী হাসানের এক ফেসবুক পোস্টে ‘সিনেমাটোগ্রাফির ক্রেডিট’ নিয়ে বিতর্ক উসকে দেন তিনি। শৈলেশ দাবি করেন, এ সিনেমার প্রকৃত সিনেমাটোগ্রাফার তিনিই। শুধু তা–ই নয়, সিনেমাটির সৃজনশীল ও ভিজ্যুয়াল নির্মাণে তাঁরই প্রধান ভূমিকা। অথচ চূড়ান্ত ক্রেডিট থেকে তাঁকে বাদ দিয়ে সিনেমাটোগ্রাফির স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে রাজু রাজকে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর সেই পোস্ট সরিয়ে ফেলা হয়। ফেসবুক পোস্টে শৈলেশ জানান, পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং পুরোটাই ছিল তাঁদের দুজনের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি।

ফেসবুক পোস্টে শৈলেশ লেখেন, ‘আমার এবং পরিচালক আমার ছোট ভাই হৃদয়ের মধ্যে একটি স্পষ্ট ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল, যা এখন সম্পূর্ণরূপে সমাধান করা হয়েছে। আমরা এক পরিবারের, যেকোনো পরিবারের মতোই এখানে মতবিরোধ হতে পারে। কিন্তু পরমুহূর্তেই আমরা ভাইয়ের মতো বসে খাবার ভাগ করে নিই। এটাই আমাদের বন্ধন। দুর্ভাগ্যবশত কিছু ব্যক্তি তাঁদের নিজস্ব সুবিধার জন্য পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমি সবাইকে অনুরোধ করছি, দয়া করে, “বরবাদ” চলচ্চিত্রটিকে ঘিরে অপ্রয়োজনীয় সমস্যা তৈরি করবেন না।’

‘সিনেমাটোগ্রাফির ক্রেডিট’ নিয়ে বিতর্ক উসকে দেন শৈলেশ। কোলাজ

পোস্টে শৈলেশ আরও লিখেছেন, ‘আমি গর্বের সঙ্গে ‘‘বরবাদ’ সিনেমার ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফি (ডিওপি) হিসেবে যুক্ত ছিলাম, সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে আমার কাজ শেষ করছি। একজন ডিওপির কাজই হলো সৃজনশীল ও ভিজ্যুয়াল নির্মাণে সহযোগিতা করা, এটি কাজেরই অংশ। তাই আসুন, এটিকে গুজব বা নেতিবাচক কিছুতে মোচড় না দিই। পরিচালক হিসেবে হৃদয় দুর্দান্ত কাজ করেছেন, আমি তাঁর প্রচেষ্টাকে আন্তরিকভাবে সম্মান করি।’

সিনেমার প্রযোজকদেরও কৃতজ্ঞতা জানান শৈলেশ। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের অসাধারণ প্রযোজক শাহরিন ও আজিম ভাইকে বিশেষ ধন্যবাদ। পুরো চিত্রগ্রহণ প্রক্রিয়াজুড়ে তাঁরা মা ও বাবার মতো আমাদের সমর্থন করেছেন। তাঁদের আস্থা ও যত্ন আমাদের বড় স্বপ্ন দেখতে এবং লার্জার দ্যান লাইফ চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে সাহায্য করেছে।’
সংবাদমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ রেখে শৈলেশ লিখেছেন, ‘অনলাইন মিডিয়ার কাছে আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, দয়া করে গুজব ছড়াবেন না বা সস্তা প্রচারের জন্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না। আসুন আমরা সবাই ঐক্য, সৃজনশীলতা এবং সিনেমার প্রতি ভালোবাসার চেতনায় একসঙ্গে কাজ করি। বাংলা সিনেমা দীর্ঘজীবী হোক। আসুন একসঙ্গে বেড়ে উঠি।’

উল্লেখ্য, আজ সকালে শৈলেশ নির্মাতা মেহেদী হাসানকে উদ্দেশ করে লিখেছিলেন, ‘যখন তোমার কঠোর পরিশ্রমকে উপেক্ষা করা হয় এবং অন্যরা তোমার কাজের কৃতিত্ব নেয়, তখন সেটা হতাশাজনক। ‘‘বরবাদ’’-এর সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে শতভাগ দিয়েছি। সৃজনশীল বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও ভিজ্যুয়াল নির্মাণে সাহায্য করেছি। অথচ সেগুলো আমার দায়িত্ব ছিল না। কিন্তু আমাকে সেই কৃতিত্ব দেওয়া হয়নি, যা দেওয়া হয়েছে অন্যকে।’

‘বরবাদ’ ছবির পোস্টারে শাকিব খান
ফেসবুক থেকে

শৈলেশ আরও লিখেছিলেন, ‘রাজু রাজ, যাঁকে ডিওপি হিসেবে কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি সিনেমার সঙ্গে খুব কমই যুক্ত ছিলেন। সত্যি বলতে, এই শিরোনাম (ডিওপি) দাবি করার আগে প্রথমে সিনেমাটোগ্রাফির মৌলিক বিষয়গুলো বুঝতে হবে। আমি মাঠে ছিলাম, শটগুলো আমি সাজিয়েছিলাম, ভিজ্যুয়াল ডিজাইন আমি করেছিলাম। আমার দায়িত্বের বাইরে গিয়েও আমি কাজ করেছিলাম। অহংকার নয়, এখানে ন্যায্যতার প্রশ্ন। আমি কেবল আমার দক্ষতা দিয়ে নয়, সততার সঙ্গে এই সিনেমায় কাজ করেছি। পোস্টার, উইকিপিডিয়া এবং আইএমডিবিতে নাম পরিবর্তন করা যেতে পারে, কিন্তু সত্য সর্বদা তার পথ খুঁজে নেয়।’

আরও পড়ুন

‘বরবাদ’ সিনেমায় শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ইধিকা পাল। এ ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, শহীদুজ্জামান সেলিম, ইন্তেখাব দিনার, মিশা সওদাগর, করভী মিজান, যীশু সেনগুপ্ত।