কারও তিনি খুব আপন, কারও প্রিয় নায়িকা
প্রায় ৪ দশক আগে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে আবির্ভূত হন পারভীন সুলতানা দিতি। একের পর এক সিনেমায় অভিনয় করে নিজেকে নিয়ে যান অনন্য এক উচ্চতায়। দেশের মানুষের কাছে হয়ে ওঠেন দারুণ জনপ্রিয় এক অভিনেত্রী। শুধু দেশের মানুষের কাছে নয়, দিতি জনপ্রিয় ছিলেন তাঁর সমসাময়িক, আগের ও পরের প্রজন্মের শিল্পীদের কাছেও প্রিয় ও আপন। কারও সঙ্গে ছিল তাঁর দারুণ পারিবারিক সম্পর্কও।
বাংলাদেশি সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা রাজ্জাকের কথায় তার সত্যতা মেলে। জীবনকালে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই অভিনেতা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘দিতি আমাকে বাবা বলে ডাকত। দিতির স্বামী সোহেল চৌধুরী (প্রথম স্বামী) ও আমার ছেলে বাপ্পা একসঙ্গে পড়ালেখা করেছে। সেই হিসেবে দিতি আমাদের পরিবারের সবার খুব আপন। আমাদের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।’
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন দিতি। তাঁদের সংসারে লামিয়া ও দীপ্ত নামের দুই সন্তান রয়েছে। সোহেল চৌধুরীর মৃত্যুর পর চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন দিতি, কিন্তু তাঁদের সে বিয়ে টেকেনি। ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে জুটি হয়ে অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। শুরুতে তাঁরা ভাই–বোনের চরিত্রে অভিনয় করতেন। দিতিকে একজন গুণী শিল্পী মনে করেন এই অভিনেতা। এসব স্মৃতি মনে করে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমাদের প্রথম ছবিটি ছিল ভাই-বন্ধু। সব মিলিয়ে আমাদের দুজনের অভিনীত ছবির সংখ্যা ৩০-এর মতো। দিতির সঙ্গে আমার শেষ ছবিটি আমার নিজেরই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে বানানো হয়েছে। নাম মুন্না মাস্তান। অভিনয়শিল্পী হিসেবে সে খুব ভালো ছিল। জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল। মানুষের ভালোবাসার পাশাপাশি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছে সে। সে হিসেবে গুণী শিল্পীও বটে।’
দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০১৬ সালের ২০ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চিত্রনায়িকা দিতি। তাঁর শেষ ইচ্ছানুযায়ী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে দত্তরপাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে মা–বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয় দিতিকে।
১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে দিতির জন্ম। ১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন তিনি। তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ডাক দিয়ে যাই। যদিও ছবিটি মুক্তি পায়নি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল আজমল হুদার আমিই ওস্তাদ।
গ্ল্যামারের সঙ্গে অভিনয় দক্ষতাকে মিশিয়ে সফল ছিলেন দিতি। ৩১ বছরের অভিনয়জীবনে নিজেকে শুধু সিনেমায় ব্যস্ত রাখেননি এই অভিনেত্রী। নাটকেও অভিনয় করেছেন এবং পরিচালনাও করেছেন। রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনায়ও দেখা গেছে তাঁকে। অভিনয়ের বাইরে মাঝেমধ্যে গান গাইতেও দেখা গেছে তাঁকে। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একক গানের অ্যালবামও। বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেলও হন তিনি।