বাবা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর অন্যতম প্রযোজক। মা গৃহিণী। মা-বাবা কেউ চাননি অভিনয়ে আসুক তাঁদের সন্তান। কিন্তু ১৯৭২ সালের ২৪ জুন আমার জন্মভূমি চলচ্চিত্রে শুটিংয়ের মধ্য দিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান আলমগীর। এরপর কীভাবে যে অভিনয়ের ৫০ বছর পার করে দিয়েছেন, টেরই পাননি। তাঁর অভিনয়জীবনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চ্যানেল আই তৈরি করেছে এক ঘণ্টার একটি অনুষ্ঠান, যেখানে উঠে আসবে অভিনয়জগতের নানা দিক। সাক্ষাৎকারধর্মী এ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেছেন চলচ্চিত্রের আরেক অভিনয়শিল্পী ইলিয়াস কাঞ্চন।
‘নায়ক আলমগীর এর অভিনয়ের ৫০ বছর’ নামে এ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। অনুষ্ঠানের প্রযোজক ইফতেখার মুনিম। ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে অনুষ্ঠানটি দেখানো হবে।
আলমগীরকে নিয়ে তৈরি আরেকটি অনুষ্ঠান এর আগে সঞ্চালনা করেছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এবারও যখন চ্যানেল আই থেকে এই অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার প্রস্তাব দেওয়া হয়, সানন্দে রাজি হন ইলিয়াস কাঞ্চন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আলমগীর ভাইয়ের সঙ্গে এমনিতে তো বিভিন্ন ইস্যুতে দেখা হয়। আড্ডা হয়। কিন্তু চ্যানেলের অনুষ্ঠানে আড্ডা তো বরাবরই ভিন্ন রকম। একটা স্ক্রিপ্ট অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি ছিল। কিন্তু আমি সেটা পুরোপুরি অনুসরণ করিনি। আলমগীর ভাইয়ের ৫০ বছরের অভিনয়জীবন হলেও তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ৪০-৪২ বছরের। এই লম্বা সময় পর্যন্ত তো আমি তাঁকে দেখছি—নানাভাবে, নানা রূপে। স্ক্রিপ্টের বাইরে গিয়ে আমি আমার মতো করে আরও নানা প্রসঙ্গে আলাপ করেছি।’
এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানে কতটা তুলে ধরতে পেরেছেন আলমগীরকে? এমন প্রশ্নে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘৫০ বছরের বর্ণাঢ্য জীবন তো আর মাত্র এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানে তুলে আনা সম্ভব নয়। এর মধ্যেও যতটুকু সম্ভব হয়েছে, তুলে ধরার চেষ্টা ছিল। সবচেয়ে বড় বিষয়, আড্ডা দিয়ে আমার দারুণ লেগেছে।’
আলমগীরের ৫০ বছরের অভিনয়জীবনের সঙ্গে চার দশকের বেশি সময় ধরে চেনাজানা ইলিয়াস কাঞ্চনের। অভিনয় করতে এসে একে অপরের চমৎকার সম্পর্কও তৈরি হয়। ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, একসঙ্গে ১০ থেকে ১৫টি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন তাঁরা। খসরু নোমানের ‘রাজা সাহেব’ চলচ্চিত্রে তাঁরা দুজন প্রথম একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। এরপর ডজন খানেকের বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও ‘অচেনা’ এবং ‘আইন আদালত’ ছবি দুটিতে তাঁর বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আলমগীর। মালেক আফসারীর ‘দূর্জয়’ চলচ্চিত্রকে দুজনের অভিনয়জীবনের উল্লেখযোগ্য একটি কাজ হিসেবে মনে করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। চলচ্চিত্রের এই দুই শিল্পী সর্বশেষ অভিনয় করেন মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘সুখের ঘরে দুখের আগুন’ (১৯৯৭) চলচ্চিত্রে।
‘নায়ক আলমগীর এর অভিনয়ের ৫০ বছর’ অনুষ্ঠানের পরিকল্পক চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমরা সোহেল রানার অভিনয়ের ৫০ বছর নিয়ে অনুষ্ঠান করেছি। দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের বরেণ্যদের বর্ণাঢ্য জীবন উদ্যাপন করতে চাই। তাঁদের অর্জন, শিল্পের পথে ভ্রমণ ও সাফল্যের গল্প সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। তারই অংশ হিসেবে অভিনয়শিল্পী আলমগীরকে নিয়ে এমন একটি আয়োজন। দিনব্যাপী আরও নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আলমগীরের ৫০ বছরের অভিনয়জীবন চ্যানেল আই সেদিন উদ্যাপন করবে। এটা দেশের কৃতী মানুষদের প্রতি সম্মাননা জানানোর সুযোগও।’
সম্প্রতি চ্যানেল আইয়ের স্টুডিওতে ‘নায়ক আলমগীর এর অভিনয়ের ৫০ বছর’ অনুষ্ঠানের দৃশ্যধারণ শেষ হয়েছে। অনুষ্ঠানে বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে কথা বলতে দেখা যাবে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ও তাঁর স্ত্রী রুনা লায়লাকে। এ ছাড়া আলমগীরকে নিয়ে কথা বলেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, কাজী হায়াৎ, শাহ আলম কিরণ ও সংগীতশিল্পী মেয়ে আঁখি আলমগীর।