সারা দেশ থেকে নির্মাতা তুলে আনতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ
মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন কাজের বাইরে ‘দেশব্যাপী প্রতিভা সন্ধান’, তরুণদের জন্য ‘তারুণ্যের উৎসব’সহ সাতটি অগ্রাধিকার কার্যক্রম ঘোষণা করেছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অগ্রাধিকারের তালিকা তুলে ধরেন তিনি। সাতটি কার্যক্রমের মধ্যে একটি ছিল ‘রিমেম্বারিং মনসুন রেভল্যুশন’। এ কার্যক্রমের জন্য ৮ সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিবেকানন্দ রায় স্বাক্ষরিত চিঠিতে তা জানানো হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কমিটি ‘রিমেম্বারিং মনসুন রেভল্যুশন’-এর সার্চ কমিটি দেশের আট বিভাগে চলচ্চিত্রবিষয়ক কর্মশালা, কারা হবেন সেই আট বিভাগের আট নির্মাতা, কর্মশালা পরিচালনায় কারা যুক্ত থাকবেন, সেসব তদারক করবে।
আট বিভাগের কর্মশালা শেষে প্রতি বিভাগ থেকে ১০ জন করে তরুণ নির্মাতাকে বাছাই করা হবে। তাঁরা দেশের বর্তমান সময়ের একজন তরুণ নির্মাতার তত্ত্বাবধানে ৪০ মিনিট দৈর্ঘ্যের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থাকবেন। আগামী বছরের জুলাইয়ে আট বিভাগের আটটি চলচ্চিত্র নিয়ে একটি উৎসব হবে। এসব চলচ্চিত্র দেশে প্রদর্শনের পাশাপাশি দেশের বাইরের বিভিন্ন উৎসবেও প্রদর্শিত হতে পারে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাফরিজা শ্যামাকে আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের কমিটির মধ্যে আছেন সাহিত্যিক ও শিক্ষক সুমন রহমান; চলচ্চিত্র পরিচালক তানিম নূর, আদনান আল রাজীব; মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিনিধি; তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি; বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক।
এ মুহূর্তে দেশের বাইরে আছেন পরিচালক আদনান আল রাজীব। সেখান থেকে প্রথম আলোকে জানালেন, দেশে ফিরে এসে আটজন চলচ্চিত্র নির্মাতাকে একত্র করার ভাবনা রয়েছে তাঁদের। লক্ষ্য থাকবে দেশের আটটি বিভাগে তাঁদের সবাইকে নিয়ে যেন উন্মাদনাও তৈরি হয়। আদনান বললেন, ‘আমরা সেসব ফিল্মমেকারকে পছন্দ করতে চাই, যাদের দ্বারা তরুণ নির্মাতারা অনুপ্রাণিত হয়। আমরা তো সব সময় ঢাকাকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র বানাই। এটা যেহেতু নতুন ভাবনা, এটা যদি আমরা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে প্রতিটি বিভাগে একটা উন্মাদনা তৈরি হবে। প্রতিটি বিভাগের মানুষের চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা থেকে শুরু করে ডেডিকেশন আরও বাড়া শুরু করবে। একই সঙ্গে এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি বড় হওয়া থেকে শুরু করে পরিসর আরও বাড়বে।’
সার্চ কমিটির আরেক সদস্য নির্মাতা তানিম নূর বললেন, ‘আমার কাছে উদ্যোগটাই দারুণ লেগেছে। আমাদের বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজন। সবাই বলি কিন্তু করি না। আমাদের সবকিছু ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার বাইরেও তো একটা বড় বাংলাদেশ আছে, সেখানে প্রতিভাবান ছেলেমেয়েরা আছে। আমরা রাজশাহী থেকে তাওকীরের মতো পরিচালকের “শাটিকাপ” দেখছি। শুধু পরিচর্যা বা সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এসব প্রতিভা বিকশিত হতে পারছে না। এই উদ্যোগ বিকেন্দ্রীকরণে বিরাট ভূমিকা রাখবে এবং ফিল্মমেকিংয়ে নবজাগরণে সাহায্য করবে। আমরা এমন সব তরুণ ফিল্মমেকার পাব, যারা সময়কে উপস্থাপন করবে। এ রকম উদ্যোগ প্রথমবার কেউ নিল, তাই আশাবাদী তো অবশ্যই হব।’
সার্চ কমিটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে কথা হয় সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে। তিনি আজ রোববার বিকেলে প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমি নিশ্চিত, সার্চ কমিটি সেই আটজন ফিল্মমেকারকে খুঁজে বের করবে, যাঁরা এ সময়টাকে চেনেন। যাঁরা এনগেজিং ছবি বানাতে পারবেন এবং যে এনগেজিং ছবি আমাদের নিউ কালচারাল ন্যারেটিভ ও নতুন বাংলাদেশের ন্যারেটিভ নির্মাণের পক্ষে একটা দরকারি পদক্ষেপ হয়ে থাকবে। পাশাপাশি আরেকটা লক্ষ্য হচ্ছে, এই আটটা ছবির কোনোটা দেখে আমরা ট্র্যাডিশনাল সরকারি ছবি বলতে যা বুঝি, তা যেন মনে না হয়। এই ছবিগুলো যেন দীর্ঘদিন বাংলাদেশের রেফারেন্স প্লট হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সার্চ কমিটি এমন সব ফিল্মমেকার বের করবে, যারা এসব করতে পারবে।’
ফারুকী এ–ও বলেন, ‘সবশেষে বলতে চাই, আমার আরেকটা গোপন স্বপ্ন হচ্ছে, আল্লাহ যদি আমাকে আরও ১০ বছর বাঁচায়, ১০ বছর পর কোথাও এদের সঙ্গে দেখা হলে, একটা ছেলে যেন এসে বলে, ভাই, আমি ওই ছবিটার মেকার। ওই ছবিটা বানাইছি। আমি কিন্তু আপনাদের ওই ওয়ার্কশপে ছাত্র ছিলাম। কারণ, আমার বিশ্বাস, ৮ বিভাগে যে ৮০ জনকে আমরা প্রশিক্ষণ দেব, তাদের মধ্যে ৫০ জন দুর্দান্ত ফিল্মমেকার হয়ে বের হবে। আমি জানি এটা সম্ভব। আমি আমার জীবনে দেখেছি, তরুণদের বিশ্বাস করলে এটা সম্ভব হয়। আমার ছবিয়ালের ভাইবেরাদর থেকে এখন কতজন ডিরেক্টর। আমি বিশ্বাস করি, আটজন ফিল্মমেকার বাংলাদেশের আটটা বিভাগে ফিল্মমেকারদের মধ্যে সৃষ্টির আগুন জ্বালিয়ে দেবে। এটাই তো বিপ্লব।’