এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে
২০২১ সালে দেশের চলচ্চিত্র করোনার ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। যদিও করোনার রেশ তখনো পুরোপুরি কাটেনি। তারপরও মহামারির ছোবল থেকে বেরিয়ে আসতে ২০২১ সালে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা বেশ লক্ষণীয়! দেশের প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র যেমন মুক্তি পেয়েছে, তেমনি বিশ্ব চলচ্চিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা ছিল। দেশের বাইরে বিভিন্ন উৎসবে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র প্রশংসা কুড়িয়েছে। ২০২১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে দেশে ও দেশের বাইরে প্রশংসিত হওয়া ছবিগুলো প্রাধান্য পেতে পারে বলে একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে।
২০২১ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ৩২টি চলচ্চিত্র, যার মধ্যে ২টি ছিল আমদানি। এর মধ্যে বছরের শেষ দিকে মুক্তি পাওয়া ‘রেহানা মরিয়ম নূর’,‘লাল মোরগের ঝুঁটি’, ‘নোনাজলের কাব্য’, ‘মৃধা বনাম মৃধা’, ‘পদ্মপূরাণ’, ‘রাত জাগা ফুল’ ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারেও এই ছবিগুলো থেকে একাধিক বিভাগে পুরস্কার প্রাপ্তি সম্ভাবনাই বেশি শোনা যাচ্ছে।
প্রতি বছর চলচ্চিত্র শিল্পে অবদান রাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ বছর ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩৪ টি পুরস্কার দেওয়া হবে। সম্প্রতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি চূড়ান্ত তালিকার অনুমোদন দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গেল কয়েক বছরের মতো এ বছরও যুগ্মভাবে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হবে। এবার অভিনেত্রী ডলি জহুর ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবিটি এবারের পুরস্কার দৌড়ে এগিয়ে আছে। সেরা চলচ্চিত্র ও সেরা পরিচালকের পুরস্কার প্রাপ্তি এই ছবি সংশ্লিষ্টদের কারও না হলেও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বাঁধন, শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী (আফিয়া তাবাসসুম) ও শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক (শৈব তালুকদার) এর পুরস্কার ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-ই ঘরে তুলতে পারে।
বিশ্বের একাধিক উৎসবে প্রশংসিত হয়েছে রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত পরিচালিত ‘নোনাজলের কাব্য’। বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পরও ছবিটি প্রশংসা কুড়িয়েছে। এবার এই ছবিটির সবচেয়ে বেশি পুরস্কার ঘরে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে।
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (তাসনোভা তামান্না), পার্শ্ব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (ফজলুর রহমান বাবু), শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার (রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক (শিহাব নুরুন নবী) এবং শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা (ইদিলা কাছরিন ফরিদ) পুরস্কার ঘরে তোলার সম্ভাবনা ‘নোনাজলের কাব্য’ চলচ্চিত্রেরই বেশি।
২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া নূরুল আলম আতিক পরিচালিত ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ চলচ্চিত্রও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আলো ছড়াতে পারে। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা (জয়রাজ), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার (নূরুল আলম আতিক), শ্রেষ্ঠ সম্পাদক (সামির আহমেদ), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক (সৈয়দ কাশেফ শাহবাজি, সুমন কুমার সরকার ও মাজহারুল ইসলাম রাজু) ও শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান (মো. ফারুখ, মো. ফরহাদ রেজা মিলন) এর পুরস্কার ঘরে তোলার সম্ভাবনা ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ চলচ্চিত্রেরই বেশি। শ্রেষ্ঠ গায়ক (মুহিন), শ্রেষ্ঠ গায়িকা (চন্দনা মজুমদার) এবং পার্শ্ব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (শম্পা রেজা) এর পুরস্কার যাওয়ার সম্ভাবনা রশিদ পলাশ পরিচালিত ‘পদ্মপূরাণ’- চলচ্চিত্রে।
‘যৈবতী কন্যার মন’ বানাবেন বলে সরকারের কাছ থেকে অনুদান নেন নার্গিস আক্তার। সেটা ২০১২-১৩ সালের কথা। নির্ধারিত সময়ে ছবি তো বানাতে পারলেনই না, সময়ক্ষেপণের অপরাধে মামলাও হয় তাঁর নামে। ছবির গল্পের অন্তরালে এটি নির্মাণ করতে গিয়ে আরেক গল্প তৈরি হয়ে যায়।
অবশেষে ২০২১ সালের এপ্রিলে ছবিটি মুক্তি পায়। পরিচালক জানিয়েছিলেন, নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের গল্প থেকে ছবির চিত্রনাট্য লিখতেই কেটে যায় আড়াই বছর। ছবির গল্পের জন্য জুতসই অভিনয়শিল্পী, লোকেশন আর ১০০ বছর আগের আবহ সৃষ্টি করতে বেগও পেতে হয় তাঁকে। একপর্যায়ে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে অভিনয়শিল্পী নিয়ে শুরু হয় শুটিং।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর এই পরিচালকও হাসি হাসতে পারেন। কারণ তাঁর পরিচালিত এই ছবিটি একাধিক বিভাগে পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক (সুজেয় শ্যাম), শ্রেষ্ঠ গীতিকার (গাজী মাজহারুল আনোয়ার) এবং শ্রেষ্ঠ সুরকার (সুজেয় শ্যাম) এই তিনটি বিভাগে যৈবতী কন্যার মন চলচ্চিত্রের পুরস্কার প্রাপ্তির সম্ভাবনা বেশি।
২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুক্তি পায় রনি ভৌমিকের ‘মৃধা বনাম মৃধা’ ছবিটি। ব্যবসায়িক সফলতা না পেলেও পারিবারিক গল্পের এই ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে আসা দর্শকদের কাঁদিয়েছে। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ নায়ক (সিয়াম আহমেদ) এবং শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা (প্রভাষ কুমার ভট্টাচার্য মিলন) পুরস্কার পেতে পারেন। বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর মুক্তি পায় ‘রাত জাগা ফুল’ ছবিটি। টেলিভিশন নাটকে অভিনয় ও পরিচালনা করে হাত পাকানো মীর সাব্বির পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র এটি। এই ছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার দৌড়ে আছেন মীর সাব্বিরও।
তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘স্ফুলিঙ্গ’ চলচ্চিত্রও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা (তৌকীর আহমেদ) বিভাগে পুরস্কার পেতে পারে। ‘যা হারিয়ে যায়’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিকের।
এর বাইরে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আকা রেজা গালিব (ধর), শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র হিসেবে কাওসার চৌধুরীর (বধ্যভূমিতে একদিন) এর নাম শোনা যাচ্ছে। খুব শিগগিরই প্রজ্ঞাপন আকারে ২০২১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা হবে। শেষ মুহূর্তে কোনো বিভাগে রদবদল হলেও হতে পারে। দেখা যাক, শেষ হাসি কারা হাসেন।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের জন্য গত ১৬ আগস্ট তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ১৩ সদস্যের জুরি বোর্ড গঠন করে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য ২০২১ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত ২১টি পূর্ণদৈর্ঘ্য, ১৭টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও ৭টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্রসহ মোট ৪৫টি চলচ্চিত্র জমা পড়ে। পুরস্কার হিসেবে মূল্যমান নির্বাচিত প্রত্যেককে ১৮ ক্যারেট মানের ১৫ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ দিয়ে তৈরি একটি পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও এককালীন নির্ধারিত পরিমাণ সম্মানী ও সম্মাননাপত্র প্রদান করা হবে। আজীবন সম্মাননার জন্য ৩ লাখ, শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রযোজক, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকের জন্য ২ লাখ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ১ লাখ টাকা দেওয়া হবে।