ইরানি পরিচালকের মামলার হুঁশিয়ারিতে যা বললেন অনন্ত জলিল
ইরানি প্রযোজক ও পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজমের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে মামলার হুঁশিয়ারি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্য বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন দিন: দ্য ডে-এর অভিনেতা ও বাংলাদেশ অংশের প্রযোজক অনন্ত জলিল। বৃহস্পতিবার রাতে অনন্ত জলিল তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ সামনে এনেছেন মুর্তজা। তাঁর অভিযোগ, অনন্ত জলিল সিনেমার চুক্তি ও শর্ত ভঙ্গ করেছেন, সিনেমার প্রধান প্রযোজক হওয়া সত্ত্বেও অর্ধেক নির্মিত সিনেমা তাঁর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন অনন্ত। তবে প্রথম আলোর সঙ্গে গতকাল আলাপে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেন অনন্ত জলিল। এদিকে মুর্তজা অতাশ জমজম জানান, বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিষয়টির সুরাহার জন্য অনন্ত জলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর সাড়া মেলেনি। সে কারণেই তিনি বাংলাদেশি এ অভিনেতার বিরুদ্ধে ইরানের তেহরানে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সঙ্গে একজন আইনজীবী নিয়োগ করে বাংলাদেশের আদালতেও মামলা করবেন।
এদিকে মুর্তজা অতাশ জমজমের সঙ্গে অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনন্ত জলিল লিখেছেন, ‘দিন: দ্য ডে’র শুটিং শুরু হয় ২০১৯ সালে ইরান থেকে। শেষ হয় ২০২০ সালে। বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশে আমরা সিনেমাটির শুটিং করি। আমি শুরু থেকেই বলে এসেছি, সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে ইরান। আমার সঙ্গে চুক্তি আছে যে সিনেমাটির বাংলাদেশে যেসব কাজ হবে (শুটিং, ডাবিং), সেগুলোর ব্যয়ভার আমি বহন করব। আমি সেটাই করেছি।
চুক্তি অনুযায়ী ইরানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে শুটিংয়ের খরচ বহন করবেন ইরানি প্রযোজক। ইরান যে সিনেমাটির মূল প্রযোজক, সেটা পরিচালকই তাঁর স্ট্যাটাসে দেওয়া একটি বাক্যের (আমি ছিলাম সিনেমাটির মূল প্রযোজক) মাধ্যমে স্বীকার করেছেন। এর মাধ্যমে একটা বিষয় পরিষ্কার হয় যে সিনেমাটিতে আমি শুধু বাংলাদেশের খরচ বহন করেছি এবং এটাই ছিল চুক্তি। ২০১৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশি–বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশন চ্যানেল—সব জায়গায়ই সাক্ষাৎকারসহ বিভিন্ন প্রচরাণায় আমি বলেছি দিন: দ্য ডে সিনেমার মূল প্রযোজক ইরানি। আমি শুধু বাংলাদেশের শুটিংকৃত অংশটুকুর খরচ বহন করেছি।’
অনন্ত জলিল এ–ও লিখেছেন, ‘সিনেমার নামের ক্ষেত্রে আমি বাংলায় একটি নাম ব্যবহার করেছি। তাও “ডে”-এর বাংলা, অর্থাৎ “দিন”। ইরানি প্রযোজকের দেওয়া নামও (ডে) কিন্তু সিনেমায় রয়ে গেছে। এটাও আমাদের মৌখিক আলোচনায় ছিল। যেহেতু সিনেমাটি বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়া হবে, তাই বাংলা নাম থাকাটাই যুক্তিযুক্ত। আর আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তির জন্য সঙ্গে ইংরেজি নামও রয়েছে। সুতরাং নাম নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অবান্তর। তিনি (ইরানি নির্মাতা) যে গল্পের কথা বলেছেন, সেটা আমাদের দুজনেরই ভাবনা। সিনেমার গল্প আমি আর মুর্তজা সাহেব দুজন মিলে আলোচনা করে ঠিক করেছি। ইরানের শুটিং শুরুর পর ইরানি প্রযোজক আমাদেরকে সম্মানের সঙ্গে পাঁচতারকা হোটেলে রেখেছেন। আমরাও বাংলাদেশে শুটিংয়ের সময় ইরানি ইউনিটকে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে রেখেছিলাম। সম্মান এবং আতিথেয়তায় কোনো ঘাটতি রাখিনি।’
জলিল এ–ও লিখেছেন, ‘২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আমরা যখন বাংলাদেশের হোটেল লা মেরিডিয়ানে এই সিনেমার গান ও প্রাথমিক ট্রেলারের উদ্বোধন করি, তখনো তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং সিনেমাটি যে আমরা বাংলাদেশে মুক্তি দেব, সে ব্যাপারে কোনো আপত্তি জানাননি। আমি এটাও বলেছি যে ইরান যদি সময়মতো মুক্তি দিতে না পারে, তাহলে আমি বাংলাদেশে মুক্তি দেব। এসব নিয়েও তখন কোনো আপত্তি করেননি তিনি। ইরান সময়মতো মুক্তি দিতে পারছে না বলে আমরা তিনবার মুক্তির তারিখ ঘোষণা দিয়েও সেটা পরিবর্তন করি। বাংলাদেশে মুক্তির সময় পরিবর্তনের কারণে আমার ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে জেনেও শুধু তাঁদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি সেটা মেনে নিয়েছি। শুরু থেকেই সব সময় আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল এবং সেটা এখনো আছে বলে আমি মনে করি।’
বাংলাদেশ ও ইরানের যৌথ প্রযোজনায় তুরস্ক, আফগানিস্তান, ইরানে সিনেমার পাশাপাশি বাংলাদেশেও সিনেমার দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। সিনেমায় অনন্ত জলিলের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী চিত্রনায়িকা বর্ষাসহ আরও অনেকে অভিনয় করেছেন। ছবিটি গেল ঈদুল আজহায় দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। মুক্তির আগে থেকেই ছবিটি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়।