‘তুফান’ থেকে ‘রিকশা গার্ল’, আলোচিত এই শিল্পনির্দেশককে চেনেন কি

আলোচিত বিভিন্ন সিনেমার শিল্প নির্দেশক শিহাব নূরুন নবী। কোলাজ

বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় স্নাতক করে তখন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন শিহাব নূরুন নবী। একটি ইভেন্টে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজ করতে মামুন নামের এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। গাও প্রোডাকশনসে কাজ করেন ভদ্রলোক। শিহাবকে তাঁর প্রতিষ্ঠানের হয়ে একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে শিল্পনির্দেশনার প্রস্তাব দেন তিনি। মোবাইল অপারেটর কোম্পানির বিজ্ঞাপন। ‘যেহেতু ইন্টেরিয়রের কাজ করতাম, তাই শিল্পনির্দেশনার অনেক কিছুই আমার জানা ছিল। বিজ্ঞাপনের জন্য সেবার একটি ব্যাংকের ফ্রন্ট ডেস্ক বানিয়েছিলাম। আমার কাজে সবাই বেশ সন্তুষ্ট হয়েছিলেন।’ ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলোর কথা বলছিলেন শিহাব নূরুন নবী।

প্রথম কাজের জোরেই চাকরি হয়ে যায়। এরপর সামির আহমেদের গাও প্রোডাকশনসের হয়ে বিজ্ঞাপনচিত্রে শিল্পনির্দেশনা দেন টানা দুই বছর। এরপর ফ্রিল্যান্সার হিসেবে একে একে গোলাম হায়দার কিসলু, পিপলু আর খান, ওয়াহিদ তারেক, অমিতাভ রেজা, আদনান আল রাজীবসহ বিজ্ঞাপনশিল্পের প্রথম সারির অনেক নির্মাতার সঙ্গে কাজ করেন। প্রায় এক হাজার বিজ্ঞাপনচিত্রে শিল্পনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

শুটিংয়ে শিহাব নূরুন নবী। শিল্পীর সৌজন্যে

আস্তে আস্তে সিনেমা, ওটিটি, নাটক থেকেও ডাক আসতে থাকে শিহাবের। এভাবেই মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অমিতাভ রেজা, রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত ও রায়হান রাফীদের সিনেমায় সুযোগ পান। ‘নোনা জলের কাব্য’, ‘শনিবার বিকেল’, ‘রিকশা গার্ল’, ‘তুফান’, ‘ফাতিমা’র মতো সিনেমা এবং ‘মহানগর ২’, ‘কালপুরুষ’, ‘ব্ল্যাক মানি’র মতো ওটিটির কাজ তাঁকে আলোচনায় এনেছে। কোক স্টুডিও বাংলায় তাঁর শিল্পনির্দেশনাও প্রশংসিত হয়েছে। ২০২১ সালে নোনা জলের কাব্য সিনেমার শিল্পনির্দেশনার জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

ক্যারিয়ারে তেমন সংগ্রাম না থাকলেও শুরুর সময়টা খুব সহজ ছিল না শিহাবের। দেশে শিল্পনির্দেশনায় প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার সুযোগ না থাকায় অনেক কিছুই তাঁকে নিজে নিজে শিখতে হয়েছে। জটিল সমস্যায় নিজেই বনে গেছেন নিজের শিক্ষক। শিহাবের কথায়, ‘ইন্টেরিয়রের কাজ করার কারণে ডিজাইন সম্পর্কে একটা ধারণা ছিল, তবে ক্যামেরায় কোন রং কেমন দেখাব, কোন সেট কী দিয়ে বানাব—এসব নিয়ে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়েছে। রাতের পর রাত জেগেছি।’

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সিনেমা থেকে ওটিটি—সব মাধ্যমের কাজেই বেড়েছে বাজেট। নির্মাণে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বিদেশের বড় বড় স্টুডিওতে সেট ফেলা হচ্ছে। সিনেমার বাজারও বাড়ছে, দেশের প্রেক্ষাগৃহের বাইরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ-আমেরিকায়ও মুক্তি পাচ্ছে সিনেমা। তবে শিহাবের মতো আড়ালে কাজ করা শিল্পীদের সুবিধা কতটা বেড়েছে? ক্যারিয়ার হিসেবে শিল্পনির্দেশনা নতুনদের জন্য কেমন? শিহাব নূরুন নবী বলেন, ‘দেখুন, আমরা ক্যামেরার পেছনে কাজ করি, সিনেমার পরিচালকও ক্যামেরার পেছনে কাজ করেন; তবে আমরা তাঁদেরও পেছনে থাকি। হয়তো কিছু মানুষ আমাকে এখন চেনেন। কিন্তু এই সেক্টরে বেশির ভাগ মানুষই অন্তরালে থেকে যান। আমি মনে করি, এখন আমাদের এখানে দরকার যথাযথ প্রতিষ্ঠানের, তাহলে শিল্পনির্দেশনার প্রতি নতুনদের আগ্রহ বাড়বে, ইন্ডাস্ট্রিও ভালো শিল্পনির্দেশক পাবে।’

শুটিংয়ে শিহাব নূরুন নবী। শিল্পীর সৌজন্যে

শাকিব খানের তুফান-এর প্রেক্ষাপট নব্বইয়ের দশকের ঢাকা। এই পিরিয়ড ছবিতে শিহাবের কাজ প্রশংসিত হয়েছে। সিনেমাটির কাজ হয়েছে ভারতে, সেখানে কাজ করতে গিয়ে দুই দেশের ইন্ডাস্ট্রির পার্থক্যও তাঁর চোখে পড়েছে, ‘কাজের পরিবেশে অনেক তফাত। আমরা সেট নির্মাণে বোর্ডসহ যেসব জিনিস ব্যবহার করি, এসবের জন্য তাদের আলাদা কোম্পানি আছে। অর্ডার দিলেই চলে আসে। প্রপসের অনেক সংগ্রহ। এসব দিক দিয়ে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি।’

ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত কোন কাজটি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল? শিহাব জানালেন, কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুমের ‘অবাক ভালোবাসা’ গানের শিল্পনির্দেশনা দিতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

শিহাব নূরুন নবী জানালেন, ‘সমুদ্রসৈকতের থিমে সেট বানিয়েছিলাম আমরা। সাধারণত স্টুডিও নিচতলায় থাকলেও এ গানের দৃশ্যধারণ যে স্টুডিওতে হয়েছিল, সেটা ছিল দ্বিতীয় তলায়। তাই বালু থেকে শুরু করে অন্যান্য জিনিস সেখানে নেওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। সেট বানানোর জন্য আমরা সময় পেয়েছিলাম মাত্র দুই রাত এক দিন।’

আরও পড়ুন

রায়হান রাফীর পরবর্তী সিনেমা তাণ্ডব-এর শিল্পনির্দেশনার পরিকল্পনা নিয়ে এখন ব্যস্ত শিহাব। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই সিনেমাটির শুটিং শুরু হবে।