ছবির ছোট্ট মেয়েটি এককালের জনপ্রিয় নায়িকা...
ছোটবেলা থেকে দেশ-বিদেশের নানা মঞ্চে নাচ করার আমন্ত্রণ পেতেন তিনি। ৯ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলে নৃত্য পরিবেশন করতে গিয়ে সোহেল রানার দৃষ্টি কাড়েন। সেদিন খুদে নৃত্যশিল্পীকে শুভকামনা জানিয়েছিলেন নায়ক সোহেল রানা। ১৪ বছর বয়সে আবার এক অনুষ্ঠানে দেখা হয় সোহেল রানার সঙ্গে। তাঁকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন সোহেল রানা। এই সোহেল রানাই তাঁকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। এখন দেশবরেণ্য অভিনয়শিল্পী তিনি। দেশের জনপ্রিয় এই অভিনয়শিল্পী অভিনয় দিয়ে যেমন মানুষের মন কেড়েছেন, তেমনি নাচ দিয়ে মন জয় করেছেন। শিশুশিল্পী হিসেবে অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তিনি চিত্রনায়িকা অঞ্জনা।
আজ সোমবার ‘আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস’। দিনটি উপলক্ষে নায়িকা অঞ্জনা নাচ নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন। সবাইকে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ফেসবুকে তিনি কয়েকটি স্থিরচিত্র পোস্ট করে লিখেছেন, ‘প্রথম যে ছবি, সেটি আমার একদম ছোট্টবেলা, মাত্র নাচ শিখছি। সে সময় বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর অল ইন্ডিয়া ডান্স কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আমার নৃত্যে এতটা মুগ্ধ হয়েছিলেন যে আমাকে ও বাবাকে পাশে ডেকে নিয়ে অনেক প্রশংসা করেছিলেন। সেই থেকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে আমার পদচারণ শুরু।’
অঞ্জনা নিজেকে নৃত্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বজয়া—এমনটাই মনে করছেন। আর এটা অসংখ্যবার পরীক্ষিত বলেও মনে করছেন তিনি। নাচ জানার কারণে চলচ্চিত্রেও তাঁর পথচলাটা বেশ চমৎকারভাবে হয়েছে বলে মনে করছেন অঞ্জনা।
বললেন, নৃত্যশিল্পের কারণে আমি অঞ্জনা। নৃত্যশিল্পী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে চলচ্চিত্রে পদার্পণ ছিল সুপ্রসন্ন। বাংলা চলচ্চিত্রের আমি একমাত্র নায়িকা, যার প্রথম চলচ্চিত্রে নামের পাশে নবাগতা টাইটেল ব্যবহার করা হয়নি। কারণ, সেই ছোট্ট বয়স থেকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে সারা বাংলাদেশ ও ভারতে সাড়া জাগানোর ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পাই। তারই সুফলস্বরূপ চলচ্চিত্রে আগমন ছিল আমার সহজ। বাংলা চলচ্চিত্রে আমার পদার্পণের জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি বাংলা চলচ্চিত্রে আমার ওস্তাদ কিংবদন্তি চিত্রনায়ক ড্যান্সিং হিরো মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ভাইয়ের প্রতি। কারণ, নৃত্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্যই তিনি আমাকে বাংলা চলচ্চিত্রে প্রধান নায়িকা হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দেন।’
কথায় কথায় অঞ্জনা জানালেন, নৃত্যে তিনি তিনবার জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছেন। বললেন, ‘জাতীয়ভাবে ৩ বার পুরস্কারপ্রাপ্তির পাশাপাশি ১০ বার আন্তর্জাতিক শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পীর পুরস্কার অর্জন করি। তার মধ্য একবার সারা এশিয়া মহাদেশের মধ্য প্রায় ১০০টি দেশের প্রতিযোগীর মধ্যে ১৯৭৯ সালে একমাত্র আমি বাংলাদেশ থেকে চ্যাম্পিয়ন হই। এ ছাড়া মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ড্যান্স কমপিটিশন, সার্ক ড্যান্স ফেস্টিভ্যালে, উপমহাদেশীয় ড্যান্স কমপিটিশন, ব্রিটিশ ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল, নিউইয়র্কের লস অ্যাঞ্জেলস ক্ল্যাসিক্যাল ড্যান্স কমপিটিশন, দক্ষিণ এশীয় ফোক ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল, জাপান ত্রিদেশীয় ড্যান্স কনফারেন্সসহ আরও অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছি।’
সোহেল রানা প্রযোজিত ‘দস্যু বনহুর’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে অঞ্জনার চলচ্চিত্রে অভিষেক। শামসুদ্দীন টগর পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে অঞ্জনা অভিনয় করেছিলেন সোহেল রানার বিপরীতে। ১৯৭৬ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সেই বছরের পবিত্র ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায়।