টিকিটে বেড়েছে ৫০–৩০০ টাকা, যা জানাল সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ
আগাম ঘোষণা ছাড়াই ঢাকার মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ সিনেমার টিকিটের দাম বাড়িয়েছে। কোনো টিকিটের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। আবার কোনোটির দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। হঠাৎ করে দাম বাড়ার কারণে সিনেমা দেখতে আসা দর্শকেরা বিপাকে পড়েছেন। এ নিয়ে অনেকে ফেসবুকে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। টিকিটের দাম বাড়তি হলেও ঈদের সিনেমা মুক্তির ১৪তম দিনেও বাংলাদেশি ছবিগুলো হাউসফুল যাচ্ছে।
দেশের অন্যতম এই মাল্টিপ্লেক্স চেইন ছয়টি বাংলা সিনেমা মুক্তির মধ্য দিয়ে ঈদ উৎসব শুরু করলেও এ সপ্তাহ থেকে প্রদর্শিত হচ্ছে চারটি চলচ্চিত্র। ‘জ্বীন ৩’ ও ‘অন্তরাত্মা’ ছবি দুটিতে দর্শক আগ্রহ না থাকায় প্রদর্শনী বন্ধ করে দিয়েছে তারা। চারটি ছবির মধ্যে তিনটি সিনেমায় দর্শক আগ্রহ বেশি। মুক্তির ১৪ দিনে এসেও টিকিটের সংকট আছে। কোনো ছবির টিকিট দর্শক দুই দিন আগে কিনে রেখেছেন, আবার কোনোটির এক দিন আগে। বাংলাদেশি সিনেমার এমন দর্শক চাহিদায় খুশি সংশ্লিষ্ট চলচ্চিত্রের প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীরা। এদিকে হলিউডের ছবি নামিয়ে দেশীয় ছবিকে অগ্রাধিকার দেওয়াতে সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রযোজক-পরিচালকদের কেউ কেউ। পাশাপাশি কোনো ধরনের আগাম নোটিশ ছাড়া টিকিটের দাম বাড়ানোর ব্যাপারটি সিনেমাপ্রেমী দর্শকের পাশাপাশি বিনোদন অঙ্গনের মানুষদের বিস্মিত করেছে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপে এ নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে স্টার সিনেপ্লেক্সে সর্বনিম্ন টিকিটের দাম ৪০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০০ টাকা, যা ঈদের আগেও ছিল ৩৫০ এবং ১ হাজার ৫০০ টাকা। দর্শক চাপ যে শোতে হয়, সেই শোর টিকিটের দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। একই প্রেক্ষাগৃহে সকালের টিকিটের দাম যা বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় তা ৫০ থেকে ১৫০ টাকা, কখনো আবার ২০০–২৫০ টাকাও বাড়ে। স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভেবে টিকিটের এই দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
এদিকে স্টার সিনেপ্লেক্সে টিকিটের দাম বাড়তি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিনোদন অঙ্গনের মানুষেরাও ফেসবুকে লেখালেখি করেছেন।
পরিচালক দীপঙ্কর দীপন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ঢাকায় দুজন মানুষের সিনেমা দেখতে যেতে প্রায় দুই হাজার টাকা খরচ হয়। এক হাজার টাকা টিকিট এবং এক হাজার টাকা খাওয়া ও যাতায়াত। একটা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এটা অনেক টাকা। যাঁরা হিসাব করে চলেন, একটা ভালো খাবার খেলে হিসাব করে খান—তাঁদের কাছে এই দুই হাজার টাকা কম না। এবারে ঈদের চারটা সিনেমা দেখতে প্রায় আট হাজার টাকা খরচ। ধরুন, যদি এমন হতো সিনেমা হল ধারেকাছেই, ১০০ টাকার মধ্যে যাওয়া–আসার রিকশা ভাড়া হয়ে যায়, দুইটা পপকর্ন বা চিপস আর ড্রিংকস ১০০ টাকা আর সিনেমার টিকিট ২০০ করে ৪০০ টাকা, মানে ৬০০ টাকায় যদি দুজনের সিনেমা দেখা হয়ে যেত, তাহলে ২ হাজার ৪০০ টাকায় স্বামী–স্ত্রী চারটা সিনেমাই দেখতে পেতেন। তাহলে এবারের ঈদের সিনেমা কত মানুষ দেখতেন, ধারণা করতে পারেন। সংখ্যাটা অনেক। একটা বড় অংশ মাল্টিপ্লেক্সে যেতে পারে না, তারা আবার সিঙ্গেল স্ক্রিনেও যেতে পারে না পরিবেশের কারণে। তাদের যদি আমরা সিনেমা হলে আনতে পারতাম, তাহলে এবারের ঈদের সিনেমাগুলো মোট কত টাকা ব্যবসা করত, একবার ধারণা করুন। বাংলাদেশে ২০–৩০ কোটি টাকা গ্রস সেল করা কোনো বিষয় না। স্ট্যান্ডার্ড অনুপাতে প্রযোজকের ঘরে ১০–১২ কোটি টাকা তোলাটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়।’
ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছে পরিচালক শরাফ আহমেদ জীবন পরিচালিত ‘চক্কর’। মোশাররফ করিম অভিনীত এই ছবিটি যে কয়টি শো পেয়েছে, হাউসফুল যেমন যাচ্ছে তেমনি প্রশংসিতও হচ্ছে। ‘চক্কর’ ছবির পরিচালক শরাফ আহমেদ ৮ এপ্রিল ফেসবুকে সিনেপ্লেক্সে সিনেমার টিকিটের দাম বেশি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘কথায় আছে, অভাগী যেদিকে যায় নদী শুকিয়ে যায়!’...আমার অবস্থাও অনেকটা ওই রকমই! মণিতেই “চক্কর”-এর শো সংখ্যা তুলনামূলক কম। যাও আছে তা–ও অভাগীর নদী শুকিয়ে যাওয়ার মতোই!’
ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে শরাফ আহমেদ লিখেছেন, ‘ঈদের পরপরই উত্তরার সেন্টার পয়েন্টে শো ছিল এক–দুই দিন। যতদূর জানি, হাউসফুল ছিল। তারপর হুট করেই অফ! কারণ জানি না। জানার চেষ্টাও করিনি। আবার দেখা যাবে এক দিন পর এখান থেকেও উধাও! এরপর রাত ১১টায় সিনেপ্লেক্সের সাইটে দেখতে পেলাম সকালের শোর টিকিটের দাম ৯০০ টাকা আর বিকেলের শো ১ হাজার ২০০ টাকা। আমার দর্শক হচ্ছে মধ্যবিত্ত, তরুণ, শিক্ষার্থী এবং চাকরিজীবী। শিক্ষার্থীদের পক্ষে এত টাকা ব্যয় করা যেমন কঠিন, তেমনি একজন চাকরিজীবীর পক্ষে অফিস ফেলে সিনেমা দেখাটাও একটা বিলাসিতা! তবে এটুকু চাইব, সিস্টেমে কিছু পরিবর্তন আসুক। তাহলে বেঁচে যাবে আমার মতো অনেক স্বপ্নপিয়াসী অনেক তরুণ নির্মাতা, বেঁচে যাবে বাংলা সিনেমা!’
টিকিটের দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ আহমেদ। প্রথম আলোকে তিনি বললেন, ‘টিকিটের দাম কিছুটা বেড়েছে। সার্বিকভাবে আমাদের এই দামটা বাড়ানো হয়েছে।’ দাম বাড়ানোর বিষয়টা তো আগে থেকে জানাননি—এমন প্রশ্নে মেজবাহ আহমেদ বললেন, ‘জানানোর কিছু নেই। আমরা আসলে সবকিছুর সঙ্গে সমন্বয় করে এই দামটা নির্ধারণ করেছি।’
আপনাদের এখানে এখন সর্বোচ্চ টিকিটের দাম ১ হাজার ৮০০ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা—এমন প্রসঙ্গ তুলতেই মেজবাহ আহমেদ বললেন, ‘এটা তো আসলে এভাবে দেখলে হবে না। ১ হাজার ৮০০ টাকার টিকিট ভিভিআইপি। এর বাইরে ৩৫০ টাকার টিকিট ৪০০ হয়েছে। দর্শকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব যাতে না পড়ে, তাই সামান্য একটা অ্যামাউন্ট বাড়ানো হয়েছে।’
কথা প্রসঙ্গে মেজবাহ আহমেদ জানালেন, এখন সর্বনিম্ন টিকিটের দাম ৫০০ টাকা, এমনিতে ৪০০। সকালে ও দুপুরে যে টিকিটের দাম ৪০০, বিকেল ও সন্ধ্যায় গিয়ে তা ৫০০ টাকা—আগে এই টিকিটের দাম ছিল ৩৫০। সবকিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা দাম বাড়িয়েছি।’