‘এই রকম মানহানিকর কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অধিকার কারও নেই’

‘আশীর্বাদ’ ছবির পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঢাকাই ছবির কয়েক নায়িকাকোলাজ

‘আশীর্বাদ’ চলচ্চিত্রের প্রযোজকের সঙ্গে ছবির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, নায়ক-নায়িকা রোশান ও মাহিয়া মাহির মধ্যে নানা বিষয়ে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মুক্তির আগে ছবির চেয়ে বরং বেশি আলোচনা হচ্ছে তাঁদের কাজিয়া। দুই পক্ষই পরস্পরকে দায়ীকে করে বক্তব্য দিয়েছে। সবশেষ গত মঙ্গলবার এফডিসিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে ছবির প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌস পরিচালক ও নায়ক-নায়িকা সম্পর্কে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। এই প্রথম নয়, আগেও সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজুর, রোশান ও মাহির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন বলে অভিযোগ, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ অবস্থায় ‘আশীর্বাদ’ ছবির পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঢাকাই ছবির কয়েক নায়িকা। ফেসবুক পোস্টে তাঁরা শিল্পী সম্পর্কে প্রযোজকের ‘নোংরা’ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

তমা মির্জা

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় পুরস্কার পাওয়া অভিনেত্রী তমা মির্জা তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘“আশীর্বাদ” চলচ্চিত্রটি আশা করি হলে গিয়ে দর্শক দেখবেন। কিন্তু একজন চলচ্চিত্রশিল্পী হিসেবে আমি শিল্পীদের এভাবে ছোট করার ঘটনাকে ধিক্কার, তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই। একজন চলচ্চিত্রের শিল্পী হিসেবে এতটুকু বলতে পারি, একজন সত্যিকারের প্রযোজক কখনো তাঁর ছবির পরিচালক বা শিল্পীদের এভাবে অসম্মান করে কথা বলবেন না, বলতে পারেন না।’

তমা আরও লিখেছেন, ‘নিজেদের মধ্যে কোনো ভুল–বোঝাবুঝি থাকলে সেটার সমাধান হতে পারত অন্যভাবে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এখনো যা চলছে, তা কখনোই কাম্য নয়। একপক্ষ যখন কিছু বলেন, তখন আরেক পক্ষ তার উত্তর দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে এভাবে একজন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক ও দুজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীকে যা ইচ্ছে তাই বলবেন একজন প্রযোজক, তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সম্মান পেতে চাইলে তার আগে সম্মান দেওয়া শেখাটাও জরুরি।’

মিষ্টি জান্নাত

সহশিল্পীকে নিয়ে প্রযোজকের এ ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁর ফেসবুক পেজে চিত্রনায়িকা মিষ্টি জান্নাত লিখেছেন, ‘অনুদানের ছবির প্রযোজক হয়ে ছবির নায়ক, নায়িকা ও পরিচালককে নিয়ে পাবলিকলি এই রকম মানহানিকর কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অধিকার কারও নেই। একজন প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমি এর প্রতিবাদ জানালাম।’

‘আশীর্বাদ’ ছবির প্রযোজককে ‘বসন্তের কোকিল’ হিসেবে আখ্যায়িত করে মিষ্টি জান্নাত আরও লিখেছেন, ‘মনে রাখবেন, আপনি বসন্তের কোকিলের মতো প্রযোজক। পারলে আরও কিছু নিজের টাকায় সিনেমা বানান। তারপর কথা বলবেন। তারপরও এ রকম বাজে মন্তব্য করবেন না আশা করি। আপনার একারই ক্ষমতা আছে, ব্যাপারটা তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশ খুবই ছোট, সবার কিন্তু কম–বেশি আত্মীয়স্বজন আছেন। আর আপনাদের মতো কিছু মানুষের জন্য সিনেমা আজ হাসির পাত্র হয়ে গেছে।’

এদিকে এ বিষয়ে গতকাল বিকেলে আরেক অভিনেত্রী জাহারা মিতু চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি একজন নবীন শিল্পী। “কুস্তিগির” ও “জয় বাংলা” নামে আমার দুটি চলচ্চিত্র সেন্সর পেয়েছে। আরও চারটি নির্মাণাধীন। অর্থাৎ বড় পর্দায় অভিষেকের জন্য আমি এখন মুখিয়ে আছি। যদি বড় পর্দাকে মা হিসেবে ধরা হয়, তবে আমি সেই মায়ের গর্ভে আছি। সব ঠিকঠাক থাকলে আর মাত্র কিছুদিন পরই বড় পর্দায় আমার জন্ম নেওয়ার কথা। সেই গর্ভাবস্থায় থাকা একটি শিশুর আকুতি–মিনতির জায়গা থেকে বলছি, দয়া করে আমার মতন নবীনদের জন্য একটু সুস্থ জায়গা তৈরি করে দিন। যাতে জন্মানোর পর একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে পারি।’

জাহারা মিতু

কোনো বিষয়ে ঝামেলা হলে, সেটা প্রকাশ্যে না আনার আহ্বান জানিয়ে জাহারা মিতু লিখেছেন, ‘একজন প্রযোজক থেকে শুরু করে একজন প্রোডাকশন বয় পর্যন্ত সবাই শুধু ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেন। চলচ্চিত্র কারও একার না। এটি একটি পরিবার, একটি টিম। সেই পরিবারে মনোমালিন্য হবে, তবে তা এভাবে প্রকাশ্যে না আনাই শ্রেয়। ছোট মুখে আবারও বলতে চাই—এ পৃথিবীকে তোমরা এতটা কলুষিত কোরো না, যে গর্ভে থাকা সন্তান পৃথিবীতে আসতে ভয় পায়।’