মধুবনে রেকর্ড ভেঙেছে ‘প্রিয়তমা’
‘হাওয়া’, ‘পরাণ’–এর পর বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্সে সিনেমা প্রদর্শন ব্যবসায় নতুন রেকর্ড গড়েছে এবারের ঈদের ছবি ‘প্রিয়তমা’। ঈদের দিন থেকে মধুবনে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘প্রিয়তমা’র সব কটি শো হাউসফুল যাচ্ছে। প্রতিটি শোতে দর্শকের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। প্রতিদিন এ সিনেমার অগ্রিম টিকিট কিনছেন দর্শক এবং এক দিন আগেই ফুরিয়ে যাচ্ছে টিকিট। দর্শক সামাল দিতে মধুবন সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ ‘বিশেষ শো’ দিয়েছে।
মধুবন সিনেপ্লেক্সের মালিক আর এম ইউনুস প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে মধুবনে অগ্রিম সব টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে ‘হাওয়া’ ছবিটি রেকর্ড করে। ‘পরাণ’ সিনেমার সময়ও অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়। এরপর দীর্ঘ সময় দর্শক–খরায় ছিল মধুবন সিনেপ্লেক্স। কিন্তু ঈদের দিন থেকে মুক্তি পাওয়া হিমেল আশরাফ পরিচালিত ‘প্রিয়তমা’ প্রেক্ষাগৃহে বাংলা সিনেমার প্রদর্শন ব্যবসায় নতুন এক ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে। ঈদের দিনে প্রথম শো থেকে সিঙ্গেল স্ক্রিনের ৩৪৫ আসনের এ প্রেক্ষাগৃহ হাউসফুল। প্রতিদিন চারটি করে শোর সব কটি টিকিট এক দিন আগেই ফুরিয়ে যাচ্ছে। অনেকে টিকিট না পেয়ে ছবি দেখতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। দর্শকের ভিড় সামাল দিতে বাধ্য হয়ে কোনো কোনো দিন বিশেষ শো দিতে হচ্ছে।
আশপাশের জেলা থেকে লোকজন গাড়ি ভাড়া করে, মোটরসাইকেলে ‘প্রিয়তমা’ দেখতে আসছেন। প্রতিটি শোতে নারী দর্শক ও তরুণ-তরুণীর উপচে পড়া ভিড়। তিনি আরও বলেন, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত বেশির ভাগ শোতে ৮০ শতাংশ আসনের অগ্রিম টিকিটের জন্য বুকিং দিয়ে রেখেছেন দর্শকেরা। ৩০০ টাকা মূল্যের ‘গোল্ড’ আসনের টিকিটের জন্য হাহাকার। যত দিন যাচ্ছে, দর্শকের চাপ তত বাড়ছে।
মঙ্গলবার রাত ১২টায় রাত্রিকালীন ‘বিশেষ শো’ এবং বুধবার দুপুর ১২টায় মধুবন সিনেপ্লেক্স প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখা যায়, প্রেক্ষাগৃহের সামনে দর্শকের ভিড়। এমনকি মঙ্গলবার রাত্রিকালীন শোতেও নারী দর্শকের ভিড় ছিল দেখার মতো। দল বেঁধে ‘প্রিয়তমা’ দেখতে এসেছেন অনেকে। দুপুরের শোতে তরুণ-তরুণীর ভিড় বেশি। শো শুরুর আগে কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকে বুকিং দেওয়া টিকিট সংগ্রহ করছেন। শো শেষে অনেক দর্শক ‘প্রিয়তমা’ ছবির পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিলেন। রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশ।
অনেকে সেই ছবি সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করছেন। প্রদর্শনী শেষে কথা হয় সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী মাহফুজের সঙ্গে। বলেন, ‘“প্রিয়তমা”য় অন্য এক শাকিব খানকে দেখলাম। বিরতির পর দুর্দান্ত নাটকীয়তায় ভরপুর সিনেমাটি। শেষ দৃশ্য দেখে বেশির ভাগ দর্শক কেঁদে ফেলেছেন। আমি নিজেও কেঁদেছি।’
রাত্রিকালীন বিশেষ শো দেখতে এসেছিলেন নারুলী এলাকার রিকশাচালক বাদেশ আলী (৫০)। তিনি বলেন, ‘আগে রিকশা চালিয়ে ৫০ টেকা কামাই হলে ১০ টেকা দিয়ে ছবি দেকিচ্চুনু। অনেক ছবি দেখে গামছা দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে হলত থ্যাকে বার হচি। ২৫ বছর আর হলত আসি না। আজক্যা হাউস করে ছবি দেকপার আসিচুনু। ছবিডা খুব ভালো লাগিচে।’
সপরিবার সিনেমা দেখতে আসা রুবি ইসলাম (৪৫) বলেন, ‘একসময় পরিবারের সবাই দল বেঁধে ছবি দেখতে আসতাম সিনেমা হলে। সর্বশেষ “হাওয়া” সিনেমাটি দেখতে এসেছিলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। আজ “প্রিয়তমা” দেখলাম। ভালো লেগেছে সিনেমাটি। এ রকম ছবি নির্মাণ হলে নিয়মিত সপরিবার সিনেমা হলে আসব।’
বুধবার দুপুর ১২টায় টিকিট বিক্রি শুরুর পর কাউন্টারে ‘প্রিয়তমা’র টিকিটের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন দর্শক। মুহূর্তেই ফুরিয়ে যায় ৩৪৫ আসনের সিনেপ্লেক্সের দুপুরের প্রদর্শনীর সব টিকিট। দুপুর, বৈকালিক, সান্ধ্যকালীন এবং রাত্রিকালীন সব শো-এর টিকিটের জন্য চাপ আছে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মী। শিক্ষার্থী ও তরুণেরা দলে দলে আসছেন অগ্রিম টিকিট কিনতে। কাঙ্ক্ষিত শো-এর টিকিট না পেয়ে অনেক দর্শক ফিরে গেছেন।
মধুবন সিনেপ্লেক্সের মালিক আর এম ইউনুস রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, সপ্তাহ শেষেও প্রতিটি শোতে ৮০ শতাংশ টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়েছে। প্রথমে দুই সপ্তাহ ‘প্রিয়তমা’ চালানোর সিদ্ধান্ত ছিল। দর্শক–জোয়ার অব্যাহত থাকলে টানা দুই মাস চলবে ‘প্রিয়তমা’।
মুক্তির আগেই ‘ও প্রিয়তমা’ গানটি ভাইরাল হয়েছে নেট দুনিয়ায়। আসিফ ইকবালের লেখা এই গানটি গেয়েছেন বালাম ও কোনাল। ছবি মুক্তির পর সোমেশ্বর অলির কথা এবং প্রিন্স মাহমুদের সংগীত পরিচালনায় ‘ঈশ্বর’ গানটিও এখন অনেকের মুখে মুখে।