‘জিল্লু’ থেকে ‘লিখন’ ঈদের সিনেমার আলোচিত ৭ পার্শ্বচরিত্র
নায়ক তো থাকেনই তবে সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রের ভূমিকাও কম নয়। তবে বাংলা সিনেমায় পার্শ্বচরিত্র অনেক সময়ই থেকেছে উপেক্ষিত। ব্যতিক্রম এবারের ঈদের সিনেমায়, নজর কেড়েছেন পার্শ্বচরিত্রের অভিনয়শিল্পীরাও। ঈদে মুক্তি পাওয়া প্রায় সব সিনেমাতেই ছিল তাঁদের সরব উপস্থিতি। জেনে নেওয়া যাক পার্শ্বচরিত্রে আলো ছড়ানো ৭ অভিনয়শিল্পীর কথা।
শহীদুজ্জামান সেলিম
গত কয়েক বছর বড় পর্দায় নিয়মিত শহীদুজ্জামান সেলিম। দুর্দান্ত অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু অনেক সময়ই তাঁর চরিত্রগুলো একই রকম হয়ে যায়। এবারের ঈদের তিন সিনেমায় ‘বরবাদ’, ‘দাগি’ ও ‘জংলি’তে দেখা গেছে। এর মধ্যে ‘বরবাদ’ ও ‘জংলি’তে তাঁকে আইনজীবীর ভূমিকায় দেখা গেছে। ‘বরবাদ’-এর চরিত্রটিতে ছোট্ট হলেও দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছেন তিনি তবে ‘জংলি’তে তাঁর চরিত্রটি হঠাৎ কেন খলনায়কের ভূমিকা নেয় পরিষ্কার নয়।
‘দাগি’তে নির্মাতা শহীদুজ্জামান সেলিমকে ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছেন। ভারতীয় চোরাকারবারির চরিত্র, হিন্দি-বাংলা মেশানো সংলাপ মিলিয়ে খলচরিত্রে তিনি বেশ মানিয়ে গেছেন। একই কথা রাশেদ মামুন অপুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক সিনেমা ও সিরিজে খলচরিত্রে তাঁকে দেখা গেছে, যেগুলোর বেশির ভাগই ক্লিশে। কিন্তু এই সিনেমায় তাঁকে দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন নির্মাতা। তাঁর ক্রূর হাসি আর চোরা চাহনি ভয় ধরিয়ে দেয়।
সুনেরাহ বিনতে কামাল
‘দাগি’ সিনেমার সবচেয়ে বড় চমক সুনেরাহ বিনতে কামাল। কথা বলতে না-পারা তরুণী লিখনের চরিত্রে তিনি অসাধারণ কাজ করেছেন। শুধু অভিব্যক্তি দিয়ে কিছু না বলেও অনেক কথা বলেছে তাঁর চোখ। সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার যে তিনি এমনি পাননি, সেটা প্রমাণ করেছেন সুনেরাহ। ‘অন্তর্জাল’-এর গ্ল্যামারাস চরিত্র থেকে ‘দাগি’র ‘লিখন’ হওয়া, সুনেরাহর ক্যারিয়ারে যোগ করেছে নতুন পালক।
রাজীব সালেহীন
‘দাগি’তে নিশানের (আফরান নিশো) বন্ধু বাবুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজীব সালেহীন। এই চরিত্রটি বলা যায় পুরোপুরি বাস্তব জীবন থেকে তুলে আনা।
বোধ করি সবার জীবনেই একজন করে ‘বাবু’ থেকে যে খারাপ, ভালো সব সময়ই বন্ধুকে আগলে রাখে। মফস্সল শহরের তরুণ বাবুর চরিত্রে রাজীব সালেহীনের কাস্টিংকে যথাযথ বলতেই হবে।
স্যাম ভট্টাচার্য
ভারতীয় এই অভিনেতা ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন ‘বরবাদ’ দিয়ে। সিনেমাটিতে শাকিব খানের ব্যক্তিগত সহকারী ‘জিল্লু’ চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে।
তাঁকে উদ্দেশ্য করে ‘জিল্লু, মাল দে’ সংলাপটি নিয়ে সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে বিস্তর চর্চা হয়েছে। জিল্লু চরিত্রটির সঙ্গে শাকিব অভিনীত চরিত্র আরিয়ান মির্জার পর্দার রসায়নও পুরোপুরি জমে গেছে। সব মিলিয়ে সিনেমা শেষ হওয়ার পরও চরিত্রটি দর্শকের মনে থাকবে।
সুমন আনোয়ার
খলচরিত্র গন্ডার বাবু হিসেবে সুমন আনোয়ারের উপস্থিতি ছিল সত্যিই ছাপ ফেলার মতো। ইদানীং তিনি খলচরিত্রে প্রচুর কাজ করছেন, বেশির ভাগই মনে রাখার মতো হয় না। তবে ‘চক্কর’ উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। চরিত্রটি ঠান্ডা মাথার, সংলাপ পরিমিত; যার সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে গেছেন এই নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী। লঞ্চে মোশাররফ করিমের সঙ্গে তাঁর একটি টক্কর আছে, সে দৃশ্যটিও হয়েছে দেখার মতো। পর্দায় মোশাররফ আর সুমন আনোয়ারের দ্বৈরথ জমে উঠেছিল।
নৈঋতা হাসিন রৌদ্রময়ী
‘জংলি’ বাবা-মেয়ের গল্প। এখানে সিয়ামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে গেছে ছোট্ট নৈঋতা। পাখি নামের ছোট্ট মেয়ের চরিত্রে সে ছিল সাবলীল।
রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে খাবার কুড়িয়ে খাওয়া, জংলির ঘরে গিয়ে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে আসা—এমন কিছু দৃশ্য চোখে লেগে থাকে। শেষ দিকে এই পাখির জন্যই চোখের পানি আটকে রাখতে পারেন না দর্শক।
রাশেদ মামুন অপু
সাম্প্রতিক সময়ে অনেক সিনেমা ও সিরিজে খলচরিত্রে তাঁকে দেখা গেছে রাশেদ মামুন অপুকে যেগুলোর বেশির ভাগই ক্লিশে।
কিন্তু ‘দাগি’ সিনেমায় তাঁকে দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন নির্মাতা। তাঁর ক্রূর হাসি আর চোরা চাহনি ভয় ধরিয়ে দেয়। একই কথা প্রযোজ্য ‘জংলি’ সিনেমার ক্ষেত্রেও। ভাইরাল সাংবাদিক চরিত্রটি ছোট হলেও এতে ছাপ রাখার মতো অভিনয় করেছেন তিনি।