শিমুর চরিত্র হয়ে ওঠার যাত্রা
রুবাইয়াত হোসেনের ‘শিমু’ সিনেমায় অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে যৌথভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু। এ ছাড়া চলমান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়ায় দেখানো হয়েছে তাঁর অভিনীত ‘ফেরেশতে’ সিনেমাটি।
তারেক মাসুদের ‘রানওয়ে’ দিয়ে শুরু, এরপর গত এক যুগে ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’, ‘শিমু’ সিনেমায় দেখা গেছে তাঁকে। মাঝে পশ্চিমবঙ্গের আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্তর ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ক্যালকাটা’য় অভিনয় করেছেন। রিকিতা নন্দিনী শিমুর ক্যারিয়ার গ্রাফ দেখলেই বোঝা যায়, মূলত শৈল্পিক ঘরানার সিনেমাই করেন তিনি।
শিমু অভিনীত সিনেমা কোনো না কোনো পুরস্কার পাবেই, এটাও যেন ধরাবাঁধা।
পুরস্কার পাবে, এমন না বুঝলে কি তিনি অভিনয় করতে রাজি হন না? গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে আলাপে প্রশ্নটা শুনে প্রথমে হাসলেন। পরে আলাপে আলাপে জানালেন, তারেক মাসুদের হাত ধরে এই ঘরানার সিনেমা করা শুরু করেছিলেন, পরে সেই ধারাকেই আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
শিমুর ভাষ্যে, ‘“রানওয়ে”তে কাজ করার সময় মনে হয়েছিল, সিনেমা বোধ হয় এ রকমই হয়। তার পর থেকে এ ধরনের চিত্রনাট্যই বেছেছি। যখন চিত্রনাট্য আসে, তখন বুঝতে পারি, এই সিনেমা হয়তো আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছাবে, এটা আমাকে আকৃষ্ট করে।’
শিমু কাজ করেন খুবই কম। দুই কাজের মাঝখানে এত বিরতিরই–বা কারণ কী। ‘আমি তো সব সময়ই করতে চাই কিন্তু গল্প পছন্দ না হলে রাজি হই না। গল্প পছন্দ হলে কিন্তু আর কিছু চিন্তা না করে মাঠে নেমে পড়ি। আমি সময় নিয়ে কাজ করতে চাই যেন চরিত্রকে পর্দায় বাস্তবসম্মতভাবে তুলে ধরতে পারি। সিনেমা, সিরিজ যা–ই করি, আগে নিজেকে প্রশ্ন করি—কাজটি বা চরিত্রটি কতটা বিশ্বাসযোগ্য? নিজের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হলে রাজি হয়ে যাই। কাজ আমার অনেক আসে, যে ধরনের গল্প বা চরিত্র চিন্তা করি, সে রকম কিছু পেলেই হ্যাঁ বলে দিই,’ বললেন শিমু।
গল্প নিয়ে তিনি খুঁতখুঁতে। তবে কি গল্প পছন্দ হলে ছোট দৈর্ঘ্যের চরিত্রেও অভিনয় করবেন? অভিনেত্রী বললেন, ‘অবশ্যই। “তাকদীর”-এ আমার মাত্র একটি দৃশ্য ছিল। শাওকী ভাই (পরিচালক সৈয়দ আহমেদ শাওকী) একটু দ্বিধায় ছিলেন, একটা দৃশ্যের জন্য রাজি হব কি না। আমি বলেছিলাম, অবশ্যই করব। গল্পটা তো সুন্দর।’
পর্দায় শিমু মানেই যেন সিরিয়াস, গ্ল্যামারহীন কোনো চরিত্র। তাঁর কি মাঝেমধ্যে মনে হয় এ ধরনের চরিত্র থেকে বিরতি নিয়ে ‘হালকা মেজাজের’ কিছু করতে? এই যেমন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স চলতি বছর ‘নো হার্ড ফিলিংস’ করলেন। উত্তরে শিমু জানালেন, সিরিয়াস সিনেমা করার ফাঁকে অন্য ধরনের কাজও তিনি করতে চান অবশ্যই, তবে আরও একটু সময় নিয়ে। এই সময়ে নিজেকে আরও প্রস্তুত করতে চান।
ছয় বছর বয়স থেকে মঞ্চে অভিনয় করেন রিকিতা নন্দিনী শিমু। তারপরও অভিনয়ের ক্ষেত্রে নিজেকে এখনো ‘শিক্ষানবিশ’ বলতে চান। তাঁর অভিনয়-যাত্রায় তারেক মাসুদের যেমন অবদান আছে, তেমনি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে রুবাইয়াত হোসেনের কথাও। পরিচালকের ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন ’ও ‘শিমু’—পরপর দুই সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।
অভিনেত্রী জানালেন, তাঁর আজকের অবস্থানের পেছনে বড় অবদান পরিচালকের। কেবল নির্মাতাই নন, রুবাইয়াত শিমুর মেন্টরও বটে। পরিচালক সম্পর্কে শিমু বললেন, ‘রুবাইয়াত আপুর সঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু শিখেছি। আমাদের দুই কাজের মাঝে অনেক সময়ের ব্যবধান আছে, কিন্তু ওনার সঙ্গে সব সময়ই যোগাযোগ ছিল। উনি বরাবরই আমাকে গাইড করেছেন। উনি আমার একজন অভিভাবক।’
এবার আসা যাক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রসঙ্গে। ‘শিমু’ সিনেমায় অভিনয়ের দুই কি তিন বছর আগেই চিত্রনাট্য হাতে পেয়েছিলেন অভিনেত্রী। এরপর নিজেকে বাস্তবের শিমু থেকে পর্দার শিমু হিসেবে তৈরি করেছেন। সে চেষ্টায় তিনি যে সফল, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিই তার প্রমাণ। তবে অভিনয়ের সময় মনে হয়েছিল, সিনেমাটি হয়তো পুরস্কার পাবে। কিন্তু তিনি নিজেই যে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পাবেন, সেটা ভাবেননি।
জাতীয় পুরস্কার তো হলো, এরপর কী? শিমু জানালেন, সরকারি অনুদানের একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘ফেরেশতে’ সিনেমাটি। ‘ফেরেশতে’ ছবিতে তিনি ছাড়াও অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, শহীদুজ্জামান সেলিম, শাহেদ আলী, শাহীন মৃধা, শিশুশিল্পী সাথী। পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজমের সঙ্গে সিনেমাটি লিখেছেন বাংলাদেশের মুমিত আল-রশিদ। ফারসি ও বাংলা অনুবাদ করেছেন মুমিত আল-রশিদ ও ফয়সাল ইফরান। জানা গেছে, শুধু গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নয়, আগামী জানুয়ারিতে ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৪-এর উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবেও ‘ফেরেশতে’ নির্বাচিত হয়েছে। ইরান-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘ফেরেশতে’ সিনেমাতে সহপ্রযোজক হিসেবে আছে ম্যাক্সিমাম এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশ।এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ওটিটির প্রজেক্ট নিয়েও সিদ্ধান্ত জানাবেন শিগগিরই।