পরীমনির বিরুদ্ধে গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ, পুলিশ যা বলছে
আলোচিত ও সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এক বছরের সন্তানকে খাবার খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে গৃহকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে নায়িকার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পিংকি আক্তার গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার ভাটারা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগের কথা তুলে ধরে গৃহকর্মী পিংকি আক্তার জানান, এক মাস আগে কাদের নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসায় কাজে যোগ দেন তিনি। তাঁর দায়িত্ব ছিল পরীমনির এক বছর বয়সী মেয়ের দেখাশোনা করা এবং তাকে খাবার খাওয়ানো। পরীমনির বাচ্চাকে দুই ঘণ্টা পরপর খাওয়ানোর নিয়ম। তিনি সেটা মেনে প্রতিদিন বাচ্চাকে দুই ঘণ্টা পরপর খাবার খাওয়াতেন। তবে তাঁকে বাচ্চার দেখাশোনার জন্য নিয়ে যাওয়া হলেও, বাসার অন্য কাজও করানো হতো।
গণমাধ্যমে পিংকি দাবি করেছেন, ২ এপ্রিল তিনি পরীমনির বাসায় তাঁর বাচ্চাটিকে বসিয়ে বাজারের লিস্ট করছিলেন। এ সময় বাচ্চাটি কান্না শুরু করে। এর মধ্যে কান্না শুনে সৌরভ নামের এক ব্যক্তি, যিনি পরীমনির পরিচিত এবং মাঝেমধ্যেই তাঁর বাসায় আসেন, তাঁকে বলেন, ‘বাচ্চাটাকে একটু সলিড খাবার দাও।’ তখন তিনি সৌরভকে বলেন, বাচ্চাটা কিছুক্ষণ আগে সলিড খাবার খেয়েছে; দুই ঘণ্টা হয়নি এখনো। কাজ শেষ করে তারপর তাকে দুধ খাওয়াবেন।
পিংকি গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি এখানে এসে জেনেছি, আমার আগে যে গৃহকর্মী ছিলেন, তিনিও বাচ্চা কান্না করলে মাঝেমধ্যে দুধ দিতেন। এই কথা বলে আমি বাচ্চাটার জন্য দুধ রেডি করছিলাম। এরই মধ্যে পরীমনি মেকআপ রুম থেকে বের হয়ে আমাকে তুই-তোকারি করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন—আমি কেন বাচ্চার জন্য দুধ নিয়েছি। আমি তখন তাঁকে বললাম, যেহেতু সলিড খাবার দেওয়ার সময় এখনো হয়নি, তাই আমি দুধ নিয়েছি। তখন পরীমনি গালি দিয়ে বলেন, “বাচ্চাটা কি তোর না আমার?” এরপরই তিনি আমাকে থাপ্পড় দিতে থাকেন এবং মাথায় জোরে জোরে আঘাত করতে থাকেন। মারধরের পর আমি জোরে জোরে কান্না করতে থাকি এবং তাঁকে বলি, আমি আর পারছি না, আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলেন, “তুই এখান থেকে কোথাও যেতে পারবি না। তোকে এখানেই মারব এবং এখানেই চিকিৎসা করব।” এই কথা বলে তিনি আবার আমাকে মারতে আসেন। তখন সৌরভ তাঁকে বাধা দেন। সৌরভ কেন বাধা দিলেন, এই কারণে পরীমনি তাঁকেও গালাগাল করেন।
একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যাই। প্রায় এক ঘণ্টা পর আমার জ্ঞান ফেরে। তখন বাসার আরেকজন গৃহকর্মী বৃষ্টিকে আমি বলি, আমাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তখন বৃষ্টি আমাকে বলেন, “পরীমনি ঘুমিয়েছেন, তাঁকে এখন ডিস্টার্ব করা যাবে না।” তখন আমি বাথরুমে গিয়ে লুকিয়ে কাদের ভাইকে ফোন দিই, তাঁকে পুরো ঘটনা জানাই এবং সাহায্য চাই—তিনি যেন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু তিনিও আমাকে বলেন, “পরীমনি এখন যদি ঘুমিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকে ডিস্টার্ব করা যাবে না।” আর কোনো উপায় না দেখে আমি বাধ্য হয়ে জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করি এবং পুলিশকে জানাই, যেন তারা আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এর মধ্যে আমি আমার এক কাজিনকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। তিনিও ঘটনা জানতে পেরে পরীমনির বাসার সামনে আসেন।
একই সময়ে পুলিশও আসে পরীমনির বাসার সামনে। এসব ঘটনা পরীমনি জানার পর তিনি বাসার আরেক গৃহকর্মী বৃষ্টিকে বলেন আমাকে বাসার নিচে নামিয়ে দিতে। পরে বৃষ্টি আমাকে বাসার নিচে নামিয়ে দেন। আমি তখন রিকশা নিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিই। আমি প্রাথমিকভাবে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি। পরে আমি আরও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব তাঁর বিরুদ্ধে।’
ভাটারা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করা হবে। তদন্তের কাজ চলছে।’
অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য পরীমনির মুঠোফোন নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কয়েকবার কল করা হয়। পাঠানো হয় খুদে বার্তা। তবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।