ঢালিউডের কোনো পরিচালক নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন প্রযোজক, নিকট অতীতে এমন ঘটনা খুব বেশি দেখা যায়নি। গত ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’-এর জন্য যা করলেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লাইভ টেকনোলিজসের পরিচালক তামজিদ অতুল। ফেসবুকে তিনি ‘পরাণ’পরিচালক রায়হান রাফির উদ্দেশে লিখেছেন, ‘রাফি, তোমার ওপর ভরসা রেখেছি এবং তুমি তোমার কথা যে শুধু কথা নয়, সেটা পর্দায় প্রমাণ করেছ। এখন বাংলাদেশের আপামর সিনেমাপ্রেমী মানুষ তোমার ওপর ভরসা রাখে, আর সেটা তুমি তোমার কাজের প্রতি দক্ষতা ও সততা দিয়ে অর্জন করে নিয়েছ।’ প্রযোজকের কাছ থেকে এমন কথা শুনে খুশি পরিচালক রায়হান রাফি, ‘সামনে আরও ভালো ভালো ছবি বানিয়ে দর্শককের মন জয় করার চেষ্টা করব। প্রযোজকদের এভাবেই খুশি করার চেষ্টা করব।’
রায়হান রাফি পরিচালিত ‘পরাণ’ ছবিটি মুক্তি পায় গত ঈদে। ১০ জুলাই মাত্র ১১টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া ছবিটি এখন দর্শক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। মুক্তির চতুর্থ সপ্তাহেও ৬০ প্রেক্ষাগৃহে চলে ত্রিভুজ প্রেমের ছবিটি। দর্শক ছবিটি নিয়ে যেভাবে মেতে উঠেছেন, ফেসবুকে ভালো লাগার কথা জানাচ্ছেন, তা পরিচালককে যেমন আনন্দিত করেছে, তেমনি ব্যবসায়িক দিক নিয়েও ভীষণ উচ্ছ্বসিত প্রযোজক। তাই তো নিজের ভালো লাগার কথা জানাতে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘রাফি তোমার “পরাণ” এখন হিট। শুধু হিট বললে ভুল হবে, “পরাণ” এখন সুপারডুপার বাম্পার হিটের পথে। বিশ্বাস করি তোমার এই কন্টেন্টের পাশাপাশি যদি এখন বলিউড কনটেন্টও চলে, তাহলেও দেশি কনটেন্টেরই জয় হবে। এর কারণ হলো, মানুষের মনে যে রাফির “পরাণ” গেঁথে গেছে সফল বাণিজ্যিক ছবি হিসেবে।’
গেল ঈদে মুক্তি পায় তিনটি ছবি ‘পরাণ’, ‘দিন দ্য ডে’ ও ‘সাইকো’। এই তিনটি ছবির মধ্যে সবচেয়ে কমসংখ্যক হলে (১১টি) মুক্তি পেয়েছিল ‘পরাণ’। এর পর থেকে প্রতি সপ্তাহে এই ছবির দর্শক-আগ্রহ বেড়েই চলেছে। দর্শক চাহিদায় তৃতীয় সপ্তাহে এসে ছবিটি এখন চলছে ৬০টি প্রেক্ষাগৃহে। তামজিদ অতুল ছবির সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘কনটেন্ট ম্যাটার, কনটেন্ট ফ্যাক্ট, কনটেন্ট কথা বলে, কনটেন্ট দৌড়ায় আর কনটেন্ট নিয়ে কাজ করতে যে মেধা ডেডিকেশন আর ভালোবাসা লাগে, তার সবকিছুই আমাদের রায়হান রাফির মাঝে আছে। সে কপি পেস্টে বিশ্বাসী না, ও কনসেপ্ট চুরি করা কাজ সে নিজে এড়িয়ে চলে এবং প্রচণ্ড অপছন্দ করে। সব থেকে বড় হলো সে নিজের দেশকে ভালোবাসে আর বিশ্বাস করে নিজের দেশের অরিজিনাল কনটেন্টের ওপর।’
কথায় কথায় ‘পরাণ’ পরিচালক সম্পর্কে অতুল আরও বললেন, ‘রায়হান রাফিকে কখনো বলতে শুনিনি অমুক দেশি কলাকুশলী লাগবে। অমুক দেশের অমুক স্পটেই এই দৃশ্য না করলে হবেই না। রাফির একটাই কথা, যা হবে ভাই সব আমার দেশেই হবে। ভাই আমরা পারি, খালি ভরসাটা রাখেন। রাফি তোমার ওপর ভরসা রেখেছি এবং তুমি তোমার কথা যে শুধু কথা নয়, সেটা পর্দায় প্রমাণ করেছ।’
অতুল এ–ও বলেন, ‘এটা মানতেই হবে যে কনটেন্টের জোরেই ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল তৈরি হয়, কিন্তু ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের জোরে কোনো কনটেন্ট হিট হয় না। আবার বলছি, ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের জোরে কোনো কনটেন্ট হিট হয় না। শুধু কাজের ক্ষেত্রে পেশাদার সম্পর্ক নিয়ে নয়, আমরা রাফির পাশে থাকব মন থেকে।’
প্রযোজকের এমন প্রশংসা পেয়ে রাফি বলেন, ‘প্রযোজক আমাদের সিনেমায় বিনিয়োগ করেন। সেই প্রযোজক যখন সিনেমা মুক্তির পর এত খুশি হন, পরিচালকের সঙ্গে আরও সিনেমা বানাতে চান—এটা নিঃসন্দেহে ভীষণ আনন্দের। প্রযোজকেরা যে টাকা ইনভেস্ট করেন, তা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করি। প্রযোজক যখন বলেন, বিনিয়োগের তিন–চার গুণ টাকা ফেরত পেয়েছি, পরিচালক হিসেবে এটাই আমার শান্তি, এটাই আমার তৃপ্তি। চেষ্টা করি আমার প্রযোজকেরা আরও ইন্সপায়ার হয়। প্রযোজক আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছেন। আমিও বিশ্বাসের চেয়ে বড় জায়গায় যেতে পেরেছি। নিজেও ভাবিনি, ‘পরাণ’ এমন জায়গায় যাবে। এই ‘পরাণ’ আমাকে অবশ্য অনেক বড় দায়িত্ব দিয়ে দিল, সামনে যেন আরও ভালো ভালো কাজ করতে পারি। দর্শকের এই ভালোবাসা ভুলতে পারব না। সাধারণত ছবি মুক্তির পর হিরো–হিরোইন জনপ্রিয় হয়। আমাদের এখানেও হয়েছে। কিন্তু ‘পরাণ’ মুক্তির পর যেখানেই যাচ্ছি, সবাই আমার সঙ্গে ছবি তুলছে। তাঁরা বলছেন, আপনার জন্য ছবিটি দেখব। এসব দর্শকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। দর্শক আসলে আমাকে বিশ্বাস করেছেন, আমি দর্শকদের পালস বুঝতে পেরেছি। সামনে আরও ভালো ভালো ছবি বানিয়ে দর্শকদের মন জয় করার চেষ্টা করব। প্রযোজকদের এভাবেই খুশি করার চেষ্টা করব।’