গুলশান থানায় শাকিবের প্রযোজক, ঈদের সিনেমা নিয়ে কী হয়েছে
ঈদের সিনেমা ‘বরবাদ’ মুক্তির প্রথম দিনে মাল্টিপ্লেক্স ও সিঙ্গেল স্ক্রিনে আশানুরূপ সাড়া পেয়েছে। স্টার সিনেপ্লেক্সের কোনো শাখায় আগামী দুই দিনের কোনো টিকিট নেই। প্রদর্শনীর সংখ্যাও বাড়িয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্স। প্রদর্শনী বাড়িয়েছে ব্লকবাস্টার সিনেমাস ও লায়ন সিনেমাস কর্তৃপক্ষ। দর্শকের চাহিদায় গাইবান্ধার রোমা প্রেক্ষাগৃহে মধ্যরাতেও প্রদর্শনী হয়েছে। ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ‘বরবাদ’ ছবির যখন এই অবস্থা, পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে প্রযোজক–পরিচালক ছুটলেন ঢাকার গুলশান থানায়। এরপর তাঁরা ছুটে যান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগে। উদ্দেশ্য— মুক্তি পাওয়া বরবাদ ছবির পাইরেসির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া।
‘বরবাদ’ ছবির পাইরেসি নিয়ে গুলশান থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি নম্বর ১৭। সাধারণ ডায়েরিতে ‘বরবাদ’ ছবির প্রযোজক শাহরিন আক্তার একাধিক ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটক অ্যাকাউন্টের লিংকের কথা উল্লেখ করেছেন, যেখান থেকে ছবিটির পাইরেসির সূত্রপাত।
গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি শেষে প্রযোজক শাহরিন আক্তার বলেন, ‘সিনেমা মুক্তির আগে পাইরেসি সুরক্ষার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি। এ কারণে সোশ্যাল মিডিয়াতে যত ভালো ফুটেজ ছিল, তা নামিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সিনেমা হল থেকে মোবাইল ফোন, ক্যামেরা দিয়ে যাঁরা কপি করেছেন, সেটির জন্য আমাদের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া খুবই দরকার ছিল। আমরা এ বিষয়ে একটা ফেসবুক পোস্টও দিয়েছিলাম, বলেছিলাম, আপনারা যারা এ ধরনের অপরাধ করছেন, তাঁরা বিরত থাকেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। আজ সকালে আমরা দেখছি, সিনেমার কপি মোবাইলে মোবাইলে ঘুরছে! এটা তো শুধু আমাদের নয়, পুরো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি।
আমরা সিনেমা বানিয়েছি, মানুষ প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখবে তা–ই। তা নাহলে প্রেক্ষাগৃহ মালিকেরা কীভাবে ব্যবসা করবেন। সিনেমা হলের মালিকেরা ব্যবসা করলে আমাদেরও ব্যবসা হবে। আমাদের ব্যবসা হলে আমরা ভবিষ্যতে মানুষের জন্য আরও সিনেমা নিয়ে আসব। হয়তো একটা গ্রুপ চাচ্ছে না, আমরা আর ছবি বানাই। আমরা আগে থেকেই এটা আভাস পাচ্ছিলাম, কিন্তু কখনো এই ব্যাপারে কোনো কথা বলিনি। আমাদের পেছনে কেউ লেগে আছে, এটা আমি বিশ্বাস করতে চাইছিলাম না।
আমি এমন একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছি, যেখানে শুধু আমার একার ব্যবসা না, সারা দেশের হলমালিকের ব্যবসাও জড়িত। সারা দেশের সিনেমা হলের সঙ্গে শত শত লোকের পরিবারের আয়-রোজগারও জড়িত। আপনারা যাঁরাই এই পাইরেসির সঙ্গে জড়িত, তাঁরা খুবই খারাপ কাজ করেছেন। তাই আমাদের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। আমরা একটা জিডি করেছি, সাইবার ক্রাইমেও অভিযোগ করেছি। যাঁরা এটা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার আশা থাকবে, পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ খুব দ্রুত জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
জানা গেছে, ‘বরবাদ’ মুক্তির প্রথম দিন সন্ধ্যায় পাইরেসি হয়েছে। ছবির বিভিন্ন দৃশ্যের ভিডিও ক্লিপ ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। টিকটকেও দেখা গেছে এই ছবির বিভিন্ন দৃশ্যের ভিডিও ক্লিপ।
পরিচালক মেহেদি হাসান বলেন, ‘সিনেমার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ আমাদের নজরে এসেছে, যা আমাদের সিনেমার জন্য হুমকি মনে করছি। তাই আমরা সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি। আমরা চাই, এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক। যাতে পরবর্তী সময়ে আর কেউ পাইরেসির মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়ার সাহস না দেখায়।’
এদিকে গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করার আগে ‘বরবাদ’ পরিচালক মেহেদী হাসান ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘বরবাদ বড় পর্দায় দেখুন। পাইরেসি থেকে বিরত থাকুন, শিল্প ও শিল্পীর প্রতি সম্মান করুন। সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে অসংখ্য কলাকুশলীর কঠোর পরিশ্রম ও সৃজনশীলতায়। আপনার এক মুহূর্তের পাইরেসি পুরো টীমের পরিশ্রমকে বরবাদ করে দিতে পারে। পাইরেসি বা অননুমোদিত ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করা শুধু আইনবিরুদ্ধ নয়, এটি শিল্পের প্রতি অবজ্ঞাও। আসুন আমরা দায়িত্বশীল দর্শক হই, বড় পর্দায় বরবাদ চলচ্চিত্রের আসল অভিজ্ঞতা উপভোগ করি, চলচ্চিত্রের প্রতি সম্মান দেখাই। কোনো ধরনের ভিডিও ধারণ বা পাইরেসি থেকে বিরত থাকি।’
মেহেদী হাসান পরিচালিত ‘বরবাদ’ সারা দেশের ১২০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ইধিকা পাল। আরও আছেন মামুনুর রশীদ, ইন্তেখাব দিনার, মিশা সওদাগর, যিশু সেনগুপ্ত, নুসরাত জাহান প্রমুখ।