সন্ত্রাসীদের তাড়া, নায়িকার দৌড়

এফডিসিতে ‘বউ’ সিনেমার শুটিং চলছে। নাজমুল হক

প্রাণপণে ছুটছেন এক নারী, পেছনে তাড়া করছে একদল সন্ত্রাসী। পুলিশ দেখেই সাহায্য চাইলেন তিনি। পরিস্থিতি টের পেয়ে সেখান থেকে সটকে পড়ে সন্ত্রাসীরা। টান টান উত্তেজনায় ততক্ষণে কানে ভেসে আসে ‘কাট’ শব্দ, হাততালি পড়ে উৎসুক দর্শকের। সিনেমার শুটিংয়ের দৃশ্য এটি। গতকাল বুধবার কে এ নিলয় পরিচালিত ‘বউ’ সিনেমার দৃশ্যধারণ চলছিল বিএফডিসির চত্বরে, যেখানে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করছেন ববি। সিনেমার চেজিং দৃশ্যের শুটিং চলছিল। নায়িকার উপস্থিতি টের পেয়ে গেটের বাইরে ততক্ষণে জমে গেছে হালকা ভিড়। কেউবা ফোনে ছবি তুলছেন, আবার কেউ করছেন ভিডিও। নিরাপত্তারক্ষীদের কাছেও কেউ রাখছেন আবদার। দৃশ্যের বিরতিতে হাসিমুখে সেলফির আবদারও রাখছেন নায়িকা।

গেট দিয়ে ঢুকতেই বিএফডিসির কর্মচঞ্চলতা চোখে পড়েছে। নিরাপত্তারক্ষীদের অন্য সময় গেটে অলস সময় কাটাতে দেখলেও গতকাল দেখা গেছে বেশ ব্যস্ত। নতুন এন্ট্রি গেটে নতুন পোশাকে ডিউটিতে দেখা গেছে তাঁদের। ‘বউ’ সিনেমার সেট পার হওয়ার পরই প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিশাল কর্মযজ্ঞ চোখে পড়েছে, সেখানে বিজ্ঞাপনের সেট বানানোর কাজ করতে দেখা গেছে বেশ কয়েকজন কর্মীকে। আরেক দিকে চলছে রঙের কাজ।

পাশেই ৭ নম্বর ফ্লোর, সেখানে চলছে মিউজিক ভিডিওর শুটিং। ব্যাকগ্রাউন্ডে সবুজ গাছের সঙ্গে সাদা ফেনা আর গোলাপের আবহে সাজানো হয়েছে সেট। শুনলাম ১০০ গানের দৃশ্যধারণ হচ্ছে এখানে। নির্মাতার চেয়ারে ডি জে রাহাত। একসঙ্গে ছয়টা ক্যামেরায় চলছে শুটিং। শিল্পীদের সঙ্গে কলাকুশলীদের বড় বহর, সবার পরনে কালো পোশাক। নির্মাতা জানান, ১০০টি গানের দৃশ্যধারণ হবে এখানে। ভোর থেকে চলছে শুটিং, চলবে মাঝরাত পর্যন্ত। গানগুলোয় পিন্টু ঘোষ, পারভেজ সাজ্জাদ, লুইপা, শান সায়েকসহ জনপ্রিয় আরও অনেক শিল্পী কণ্ঠ দিয়েছেন। চলতি বছরই গানগুলো প্রকাশ পাবে।

শুটিংয়ে ববি। নাজমুল হক

এর বাইরে আরও দুই সেটে চলছে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের শুটিং। শিল্পী সমিতিতে দেখা গেছে সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরীকে। আর পরিচালক সমিতির বাইরে রোদ পোহাচ্ছিলেন নির্মাতা ছটকু আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান মানিকসহ একাধিক নির্মাতা। ক্যানটিনেও বিশাল চাপ চোখে পড়েছে, চা, পুরি, সিগারেটে বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দোকানি। সব মিলিয়ে দিনটি এফডিসির জন্য ছিল বেশ ব্যস্ততার।

ভাড়া কমায় বেড়েছে ব্যস্ততা
প্রায় কর্মশূন্য বিএফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এখন অনিয়মিত। সম্প্রতি সার্বিক বিবেচনায় বিএফডিসিকে আবার চাঙা করতে ভাড়া কমিয়ে শুটিং বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ছয় মাসের জন্য শুটিং যন্ত্রপাতি ও ফ্লোর ভাড়ার হার পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরই ব্যস্ততা বেড়েছে এখানে। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বিএফডিসির আয় ৩০ লাখ পার হয়েছে।

আরও পড়ুন

চলতি মাসে আয় ৫০ লাখ ছুঁতে পারে বলে আশাবাদী কর্মকর্তারা। পরিচালক (উৎপাদন) মামুনূর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজ অনেক বেড়েছে, তবে ভাড়া কমানোর ফলে টাকার পরিমাণ কমেছে। তবে আমরা আশা রাখছি, শুটিংয়ের সংখ্যা আরও বাড়বে।’ নতুন যন্ত্রপাতি কেনায় মনোযোগ দিচ্ছে বিএফডিসি। প্রতিযোগিতায় টিকতে এর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন এই কর্মকর্তা।

মিউজিক ভিডিওর শুটিং সেট। প্রথম আলো

তাঁর কথায়, ‘দেখুন আমাদের ইক্যুইপমেন্ট অনেক পুরোনো, এগুলো নিয়ে তো মার্কেটে টেকা যায় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখানেও আপনার তাল মেলাতে হবে। তবে আমাদের কেনাকাটা তো একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে হয়, তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পেছনেই থাকি।’ শিগগির বিএফডিসির ক্যামেরাবহরে নতুন দুটি ক্যামেরা ও লেন্স যুক্ত হওয়ার খবরও দেন এই কর্মকর্তা।

সংকট কি কাটল
আয় বাড়লেও কর্মীদের বেতন পরিশোধের দিক থেকে ঘাটতিতে আছে বিএফডিসি। সম্প্রতি অন্য খাত থেকে লোন নিয়ে গত তিন মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। সামনে পবিত্র রমজান মাস, পবিত্র ঈদুল ফিতর; এ সময়ে বেতনের সমাধান কী হবে জানেন না কর্মকর্তারা। বোনাসের চিন্তাও করা যাচ্ছে না। বিএফডিসি কমপ্লেক্স নিয়ে একসময় আশার আলো দেখলেও তা এখন রূপ নিয়েছে অন্ধকারে। দফায় দফায় সময় ও প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির পরও শেষ হচ্ছে না কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ।

৭ বছর ১০ মাসে বিএফডিসি কমপ্লেক্স প্রকল্পের নির্মাণকাজের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৩৯ শতাংশ। এবার তৃতীয়বারের মতো ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করা হচ্ছে ৪৮ কোটি ৯৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। তবে এ সময়ে নির্মাণকাজ শেষ হবে না বলে মনে করছেন একাধিক কর্মকর্তা।

চলছে নির্মাণকাজ। নাজমুল হক

গতকাল সাততলার ঢালাইয়ের কথা থাকলেও সরেজমিন দেখা যায়, সিমেন্ট না থাকায় পিছিয়ে গেছে ঢালাইয়ের কাজ, অলস সময় কাটাচ্ছেন ১৬ জন শ্রমিক। কমপ্লেক্সের নির্মাণের এ সংকট নিয়ে মামুনূর রশীদ বলেন, ‘দেখুন, আমাদের আয় বাড়ানোর জন্যই এই কমপ্লেক্সের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। আমরাও আশায় ছিলাম, এটা নির্মাণ হলে নিশ্চিত কিছু আয়ের দেখা পাবো আমরা। কিন্তু দফায় দফায় সময় পেছানোর ফলে সংকট বেড়েছে। কমপ্লেক্সের কাজ দ্রুত শেষ হলে আমরা সংকট কাটাতে পারব।’