শুটিংয়ের ফাঁকে অনেক গোপন ক্ষতের কথা বলে কেঁদেছিলেন আজম ভাই: ফারুকী

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও আজম খান। ছবি: কোলাজ

সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা ও পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের আজম ভাই যখন প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালে তখন তাঁকে ট্রিবিউট দিয়ে বাংলালিংকের জন্য একটা বিজ্ঞাপন বানাই। নড়াইলে শুটিংয়ের ফাঁকে অনেক গোপন ক্ষতের কথা বলে কেঁদেছিলেন আজম ভাই। আজকে তাঁর মেয়ে অরণীর স্বাধীনতা পুরস্কার নেওয়ার দৃশ্য দেখে আমার চোখ ভিজে উঠেছে অজান্তেই। বাংলাদেশ লাভস ইউ, আজম ভাই।’

বাংলা পপ গানের সম্রাট আজম খান। যিনি স্বপ্ন দেখিয়েছেন দেশের তরুণদের। পপ গানকে লালন করেছেন, শ্রোতা তৈরি করেছেন। শুধু তা–ই নয়, বাংলা এই পপ গানের ধারা যেন সময়ের সঙ্গে প্রবহমান থাকে, সেই পথও তৈরি করে গেছেন। সেই গায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন।

আজম খান
ফাইল ছবি

পুরস্কার গ্রহণের সেই দৃশ্য দেখে মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী লিখেছেন, ‘আজকে আজম খানের পক্ষে তাঁর মেয়ের স্বাধীনতা পুরস্কার নেওয়ার দৃশ্য দেখছিলাম টিভিতে। কিছু জটিলতায় পড়ে সশরীরে থাকতে পারি নাই এই অনুষ্ঠানে। দেখতে দেখতে আমার এই সব কথা মাথায় আসল। কেন আসল সেটা কোনো একদিন বলা যাবে।’

সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
কোলাজ

ফারুকী আরও লিখেছেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, জীবিত মানুষদের আমরা বেশি দিন নিতে পারি না। প্রথম প্রথম আমরা কাউকে গ্রহণ করি তাঁর কবিতা, গান বা অন্য যেকোনো কর্মের জন্য। তারপর আমরা ভালোবেসে তাঁকে লিজেন্ড বানাই। বানানোর পরপরই তাঁর উপস্থিতি আমাদের পীড়া দিতে থাকে। তখন আমরা চেষ্টা করি তাঁকে অবজ্ঞা দিয়ে কিংবা কখনো কখনো নিন্দা দিয়ে টেনে নিচে নামাতে। আমাদের মতো দেখতে একটা মানুষ আমাদের চেয়ে বিশাল কী করে হয়ে যাচ্ছে—এই বেদনার ভার আমাদের বিহ্বল করে দেয়। তারপর ওই মানুষটার মৃত্যু এসে আমাদের মুক্তি দেয়। আমরা আমাদের ক্ষুদ্রতা থেকে বড় হয়ে তাঁকে আবার গ্রহণ করি।’

আজম খান
ফাইল ছবি

আজম খানের গাওয়া জনপ্রিয় গান ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘এত সুন্দর দুনিয়ায়’, ‘অভিমানী’, ‘অনামিকা’, ‘পাপড়ি’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’, ‘আমি যারে চাইরে’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘ও চাঁদ সুন্দর’, ‘ও রে সালেকা ও রে মালেকা’সহ একাধিক গান দর্শকেরা এখনো শোনেন। সেই গায়কসহ স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের উদ্দেশে ফারুকী লিখেছেন, ‘আমরা ভাগ্যবান যে আজম ভাই, আল মাহমুদ, নভেরা আহমেদ, ফজলে হাসান আবেদ, জামাল নজরুল ইসলাম, বদরুদ্দীন উমরের মতো মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে পেরেছি। তবে এর মাঝে পাঁচজনই জানলেন না বাংলাদেশ তাঁদের প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ।’