আজ ‘বলী’র বাংলাদেশ প্রিমিয়ার
২৮তম বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সিনেমার পুরস্কার জয় করে ‘বলী’। জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে আজ সিনেমাটির বাংলাদেশ প্রিমিয়ার হচ্ছে। আর ‘বলী’ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে আজ শেষ হচ্ছে ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।
এ উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে ছবির কলাকুশলীরা আজ উপস্থিত থাকবেন। তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ারে উপস্থিত থাকতে পারছেন না ছবিটির পরিচালক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী। বর্তমানে তিনি কানাডায় রয়েছেন।
সেখান থেকে ফোনে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভেবেছিলাম, প্রিমিয়ারে তো আমাদের টিম থাকবে; না থাকার বেদনা আমাকে আক্রান্ত করবে না। এখন শেষ মুহূর্তে এসে মনে হচ্ছে, যেকোনো মূল্যে আমার থাকা দরকার ছিল। বিরাট ভুল হয়ে গেছে।’ ইকবাল আরও বলেন, ‘টরন্টোতে এখন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের বেশ নিচে। এর মধ্যেও আমার সিনেমার শিল্পী–কলাকুশলীদের উত্তেজনা বেশ টের পাচ্ছি। সিনেমা দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন অনেক দর্শক। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ‘বলী’র পোস্টার প্রকাশ করে অপেক্ষার কথা জানাচ্ছেন। দূর থেকে বুঝতে পারছি এই উষ্ণ ভালোবাসার অনুভূতি, যা আমার বেদনাকে বাড়িয়ে তুলছে।’
বুসানের নিউ কারেন্টস পুরস্কার ঘোষণার সময়ে এই বিভাগের বিচারকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর ‘দ্য রেসলার’ (‘বলী’) ছবিটি যেন দুর্দান্ত এক সিঙ্গেল রাউন্ড ম্যাচ, যেখানে জাদুকরিভাবে গল্প বলা হয়েছে।’ সেই সময় হলিউড রিপোর্টার, ভ্যারাইটি, স্ক্রিন ডেইলিসহ আন্তর্জাতিক একাধিক গণমাধ্যমে সিনেমাটির সমালোচনা প্রকাশ করে। ভ্যারাইটিতে লেখা হয়, ‘ধীরে ধীরে মনোজগৎকে নাড়া দেয় গল্পটি।’
বলিউডের ছায়া থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশের সিনেমার উত্থানকে সমালোচনায় সামনে এনেছিল জাপানের অন্যতম পত্রিকা নিক্কেই এশিয়া। পত্রিকাটি লিখেছিল, ‘সম্পূর্ণ নতুন লুকের সিনেমা “বলী”। কী আছে এই “বলী”তে? পরিচালক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরঘেঁষা বাঁশখালীর মানুষ। সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন তাঁরা। এই সময়ে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও পরবর্তী সময়ে নিখোঁজ মানুষের আহাজারি কাছ থেকে শুনেছেন। এ জন্য প্রথম সিনেমা বানানোর সময় তাঁকে সবচেয়ে বেশি তাড়িত করেছে সমুদ্র ও তাঁর শিকড়ের যোগসূত্র। চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমুদ্রঘেঁষা মানুষের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে থাকা বলীখেলাকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে বলীর গল্প। পাশাপাশি দেশের লোকসংস্কৃতির নানা গল্প উঠে এসেছে।’
‘বলী’র বাংলাদেশ প্রিমিয়ার বিষয়ে ছবিটির প্রযোজক পিপলু আর খান বলেন, ‘অবশেষে ঢাকার দর্শক সিনেমাটি দেখতে পারবেন। এটাকে কেন্দ্র করে আমরা আশু মুক্তির ব্যবস্থা করছি। চট্টগ্রামের ভাষায় নির্মিত সিনেমাটি দর্শকদের মায়ার মধ্যে আটকে রাখবে। বিদেশি দর্শকদের সিনেমাটি আকৃষ্ট করেছে, একইভাবে প্রত্যাশা করছি দেশের দর্শকও এটি পছন্দ করবেন।’ ছবিটির সহপ্রযোজক সাইফুল আজিম ও গাউসুল আলম শাওন।
২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকারের অনুদান পায় ‘বলী’। পরে ছবিটির চিত্রনাট্য পড়ে ভারতের এনএফডিসি ফিল্ম বাজারসহ বেশ কিছু আয়োজনের কো-প্রোডাকশন মার্কেটেও নির্বাচিত হয়। পরের বছরই কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুরু হয় সিনেমাটির শুটিং। বুসানে নির্বাচিত হওয়ার পর পরিচালক সিনেমা নির্মাণের খবরটি গণমাধ্যমকে জানান। সিনেমায় মূল বলীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসির উদ্দীন খান। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন প্রিয়াম অর্চি, ইতমাম, এনজেল। বাংলাদেশ থেকে সিনেমাটি এবার অস্কারে প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রযোজক জানালেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ‘বলী’।