ঈদের পর মধুমিতার পর্দা আর উঠবে না

ঢাকার অন্যতম প্রাচীন প্রেক্ষাগৃহ মধুমিতা।ছবি: প্রথম আলো

৫৮ বছর আগে চালু হয় দেশের ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহে। ৫৮ বছরের এই প্রেক্ষাগৃহ গেল কয়েক বছর ধরে কয়েক মাস বন্ধ, এরপর আবার চালু—এভাবেই চলছিল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেক্ষাগৃহের স্বত্বাধিকারী ইফতেখার নওশাদ জানালেন, আগামী ঈদুল আজহার পর তাঁদের প্রেক্ষাগৃহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর সেখানে গড়ে তোলা হবে বহুতল ভবন। তবে রাখা হবে সিনেপ্লেক্সও। পারিবারিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানালেন ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ।
গেল কয়েক বছরে বিশেষ দিবস ছাড়া মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহ ঠিক সেভাবে ব্যবসা করতে পারছিল না, এমনটাই জানিয়েছিলেন ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তারপরও পৈতৃক ব্যবসাকেই আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি পারিবারিক সিদ্ধান্তে বর্তমান প্রেক্ষাগৃহ ভেঙে বহুতল ভবন বানানোর প্রস্তাব তাঁকে মেনে নিতে হয়েছে।

ঢাকার মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহ
ছবি : প্রথম আলো

ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশে তো ছবি মুক্তি পাচ্ছে না। ছবি না থাকলে আমাদের সিনেমা হল রাখারও তো মানে হয় না। এখন আমরা শাকিবের ঈদের ছবির জন্য অপেক্ষা করব। শুনছি, কোরবানির ঈদেও শাকিবের ছবি মুক্তি পাবে। রোজার ঈদে শাকিবের ছবি মুক্তি পেলে তা টেনে দুই মাস নিয়ে যাব। এরপর কোরবানির ঈদে শাকিবের আরেকটি ছবি মুক্তি দিয়ে আমরা সিনেমা হল বন্ধ করে দেব। কারণ, এর বাইরে বছরের অন্য সময়ে তো ব্যবসা করার মতো কোনো সিনেমা পাই না। এভাবে মাসের পর মাস খালি রেখে এত বড় একটা সিনেমা হল চলতে পারে না, তাই না।’

কথা প্রসঙ্গে নওশাদ বললেন, ‘খুলে রেখে আমরা তো লস গুনে যাচ্ছি। তাই দুই সপ্তাহ আগে আমরা মধুমিতা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করি। তবে কয়েক বছর ধরে বন্ধ করার পক্ষে আমাদের পরিবারের অন্যরা, কিন্তু এত দিন আমিই না করতাম, এখন আমি আমার ভাইয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেছি। বলেছি, সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। ছবি নাই বন্ধ করে দিই। এর মধ্যে আমরা সাউন্ড সিস্টেম এনেছিলাম, আর অনেক সংস্কারও করেছি। এতে আমাদের অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও ছবি যদি নিয়মিত মুক্তি দিতে পারতাম এবং ব্যবসা করার মতো সিনেমা পেতাম, তাহলে বিনিয়োগে সমস্যা ছিল না। গেল দুই বছরে আমরা “প্রিয়তমা”, “তুফান” এবং “দরদ” সিনেমায় শুধু ব্যবসা করতে পেরেছি। এর বাইরে যত ছবি মুক্তি পেয়েছে, আমাদের ক্ষতি গুনতে হয়েছে। এখন তো ছবিই নাই। এভাবে একটা এত বড় প্রতিষ্ঠান ফেলে রাখার তো কোনো মানে হয় না। তবে আমরা বহুতল ভবন করলেও সেখানে সিনেমা হল রাখব।’

ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ
ছবি: সংগৃহীত

১৯৬৭ সালের ১ ডিসেম্বর মধুমিতা সিনেমা হল উদ্বোধন করেছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার বিচারপতি আবদুল জব্বার খান। ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘ওই দিনটির কথা এখনো পরিষ্কার মনে আছে। এলিজাবেথ টেইলর অভিনীত “ক্লিওপেট্রা” দিয়ে শুরু হয়েছিল শো। প্রথম দিনেই দর্শকের সে কী আগ্রহ। শুরুর দিনই আমরা আধুনিক শব্দ (ম্যাগনেটিক সাউন্ড) সুবিধা নিয়ে চালু করেছিলাম।’

পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী সিরাজ উদ্দিন হলটির প্রতিষ্ঠাতা। সিনেমা হলের নাম চেয়ে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে একটি বিজ্ঞাপন দেন। অনেকে নাম প্রস্তাব করে পাঠান। সেখান থেকে মধুমিতা নামটি পছন্দ করেন সিরাজ উদ্দিন এবং নাম প্রস্তাবকারীকে তখনকার দিনে ৫০০ টাকা পুরস্কৃত করেন। এখন হলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজ উদ্দিনের ছেলে ইফতেখান উদ্দিন। সিরাজ উদ্দিনের চার ছেলেই হলটির মালিক এখন। এই প্রেক্ষাগৃহে ১ হাজার ২২১ জন দর্শক একসঙ্গে বসে ছবি দেখতে পারে।