যোগ্যতা নিয়ে অযোগ্য হয়ে গেলাম: মৌসুমী হামিদ

৬ ডিসেম্বর শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে মৌসুমী হামিদ অভিনীত সিনেমা নয়া মানুষ। সোহেল রানা বয়াতির সিনেমাটি নিয়ে ব্যস্ত এই অভিনেত্রী। সিনেমায় তাঁর অভিনয় প্রশংসা পেয়েছে। মৌসুমী বর্তমানে কাজ করছেন বিশ্বাস বনাম সরকারসহ একাধিক ধারাবাহিকে। নয়া মানুষ সিনেমার শুটিং অভিজ্ঞতা, ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুরুল আলম
মৌসুমী হামিদ। ছবি: ফেসবুক থেকে

সিনেমার প্রচারণার বেশ কদিন ধরেই ঠিকমতো বাসায় থাকা হচ্ছে না। এই সময়ে সকালে বের হয়ে রাতে ফিরতে হয়েছে। ঘরটাও এলোমেলো হয়ে ছিল। সম্প্রতি কিছুটা সময় মেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন ঘর গোছাতে। তাঁর সঙ্গে যখন কথা হয়, তখনো ঘর গোছাতেই ব্যস্ত। মৌসুমী হামিদ বলছিলেন, সিনেমার প্রচারে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছুটতে হচ্ছে, কখনো ব্যস্ত নিজের কাজে। কাজের এতই চাপ, নিজেকেও সময় দিতে পারছেন না। ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই ব্যস্ত। আজ সকালে কিছুটা সময় পেয়েছি। ঘর গোছানো শেষ করেই হলে ছুটতে হবে। শ্যামলী স্কয়ারে যাব। সিনেমা নিয়ে দর্শকদের সঙ্গে কথা বলছি। ফিডব্যাক ভালো পাচ্ছি, এটাই ভালো লাগার। যদিও সিনেমাটি শুটিং থেকে নানা কারণে আলোচনায় ছিল। শেষ পর্যন্ত সিনেমা দর্শক দেখতে পারছেন, সেটাই আনন্দের,’ বলেন মৌসুমী হামিদ।

খেয়ে না–খেয়ে শুটিংয়ে
সিনেমাটির শুটিংয়ে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন মৌসুমী। চাঁদপুরের প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে শুটিংয়ে যেতে হয়েছিল। সেখানে তিন–চার দিন পর্যন্ত বসে থাকতে হয়েছিল। অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী সবাই আছে কিন্তু শুটিং হয়নি! কারণ, পরিচালকের কাছে শুটিংয়ের টাকা ছিল না। তাঁর প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হয় কলাকুশলীদের। মৌসুমী বলেন, ‘এমনও হয়েছে, সকালের নাশতা খাওয়া হয়নি। দুপুরের খাবার রাতে খেয়েছি। এক বেলা শুটিংয়ের খাবার খেয়েছি। পরে নিজেরাই গ্রামের কাউকে টাকা দিয়ে রান্না করিয়েছি। যেখানে শুটিং ইউনিট আমাদের খাবার, থাকার কথা ভাববে, সেখানে সবকিছু নিয়ে নিজেদেরই চিন্তায় অস্থির হতে হয়েছে।’

মৌসুমী হামিদ। ছবি: ফেসবুক থেকে

সিনেমা নিয়ে আক্ষেপ
অনিমেষ আইচের ‘না মানুষ’ দিয়ে সিনেমায় ক্যারিয়ার শুরু করেন এই অভিনেত্রী। পরে সিনেমা নিয়ে আগ্রহ বাড়লেও পছন্দের সিনেমায় এখনো অভিনয় করা হয়নি। ভালো সিনেমার গল্পের জন্য এখনো অপেক্ষা, আক্ষেপ রয়ে গেছে। বিরূপ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার শিক্ষাটাই ছিল অভিনয়ে নিজেকে উন্নত করা। নিজেকে যোগ্য করে তোলা। এক সিনিয়র বলেছিলেন, কাজ জানলে কাজের অভাব হবে না। আমাকে খুঁজে নেবে। কিন্তু প্রযোজক, পরিচালক থেকে নাটকের কাজে শিল্পীদের কাছে যাওয়ার পর দেখলাম, ইন্ডাস্ট্রিতে যোগ্যতার চেয়ে লবিং, দলাদলি, যেকোনো গ্রুপের খাতির রাখা—এগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে। সেখানে যোগ্যতা নিয়ে অযোগ্য হয়ে গেলাম।’

আরও পড়ুন

হতাশার দিনগুলো
একটা সময় ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন মৌসুমী হামিদ। পরিচিত সহকর্মী ও মিডিয়ার বন্ধুদের অনেকে অপরিচিত হয়ে যান। মৌসুমী জানান, ‘তখন জুটি ও তারকাদের পছন্দেই কাস্টিং হতে থাকে। যাদের পাশে রেখেছি, তারাই একটা সময় আমাকে আঘাত করে। এমনকি আত্মহত্যা করতেও আমাকে উসকে দিয়েছে। ২০২১ সালে এক অভিনেত্রী আত্মহত্যা করেন। তখন আমাকে কাছের একজন বলেন, “তুই আবার আত্মহত্যা করে বসবি না তো!” কথাটা আমাকে মারাত্মক আহত করে। এমন অনেক ঘটনায় টানা দুই বছর তেমন কাজও করিনি, ঘর থেকে বের হইনি।’

মৌসুমী হামিদ। ছবি: ফেসবুক থেকে

সাহস নিয়ে ফেরা
এই অভিনেত্রী জানান, দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কখনোই বিবেক বিসর্জন দেননি। শুটিংয়ে কাউকে বিপদে ফেলেননি। সব সময় মানসিক শান্তি খুঁজেছেন। যে কারণে তিনি বিরতি দিয়ে আবার নিজের জগতে ফেরেন। মৌসুমী হামিদ বলেন, ‘সেই দুই বছরে আমার এমন অবস্থা হয়েছিল যে মাঝেমধ্যে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যেত। আমাকে অক্সিজেন দিতে হতো। তখন মনে হলো, নিজেকে ভালোবাসতে হবে। আমি মেডিটেশন শুরু করলাম। আবার প্রকৃতির কাছে ফিরলাম। মিউজিক শোনা শুরু করলাম। ভালো গুণগুলো আরও বেশি সমৃদ্ধ করলাম। পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে গেলাম। হিংসা কম, এমন মানুষদের সঙ্গে আমি মিশতে শুরু করি। এভাবেই আমি আবার সাহস নিয়ে ফিরি।’

নতুন নির্মাতাদের প্রতি অনুরোধ
সোহেল রানা নতুন পরিচালক। অভিজ্ঞতা কম। তাঁর সঙ্গে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানালেন অভিনেত্রী। নতুন নির্মাতাদের উদ্দেশে মৌসুমীর অনুরোধ, ‘শিল্পীদের পারিশ্রমিক দুই দিন পরে দেন। তারপরও শুটিংয়ে নিয়ে শিল্পীদের বিপদে ফেলে অবিচার করবেন না। অন্তত শুটিংয়ের খরচের অর্থ যেন সঙ্গে থাকে। সেটা নিশ্চিত করেন। ৬০ জনের টিম নিয়ে পকেটে ৩৭ হাজার টাকায় শুটিং হয় না। এটা বলা যায় শুটিংয়ে গিয়ে সবাইকে বিপদে ফেলা।’ নয়া মানুষ মৌসুমীর অষ্টম সিনেমা। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘অনেক তরুণ সিনেমা বানানোর জন্য মরিয়া। কিন্তু প্রযোজক কতটা সততার সঙ্গে কাজটি করতে চান, সেটা বিবেচনায় রেখে শুটিংয়ের টাকা আগে সংগ্রহ করুন।’

মৌসুমী হামিদ। ছবি: ফেসবুক থেকে

এখন কাজ ও সংসার নিয়েই ভালোই আছেন মৌসুমী। বৃন্দাবন দাসের লেখা ও সকাল আহমেদের পরিচালনায় বিশ্বাস বনাম সরকার ধারাবাহিক ও ওটিটির কাজ নিয়েই এখন ব্যস্ত অভিনেত্রী। পাশাপাশি সংসারটাকেও সামনের বছর আরও গোছাতে চান।