প্রশংসায় ভাসছে ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’
কক্সবাজার ঘুরে ট্রলারে করে সেন্ট মার্টিন যাচ্ছে চার বন্ধু। বাতাস আর ঢেউয়ের শব্দে ফোনের অপর প্রান্তের কিছুই শোনা যায় না। নেটওয়ার্কও যায় যায় অবস্থা। এ রকম এক সময়ে মুন্নাকে ফোন করে তানিয়া।
বেড়াতে আসার পথে বাসে তাদের পরিচয়। যাত্রাপথে ঘুমিয়ে পড়েছিল মুন্না। তানিয়াও কিছু না বলে নিজ গন্তব্যে নেমে যায়। তারপর তাকে খুঁজে বের করে মুন্না। যদিও তানিয়া তাকে পাত্তা দেয় না। বয়সে মুন্নার পাঁচ বছরের বড় সে। তবু অসম বয়সী তানিয়ার প্রেমে পড়ে যায় মুন্না। সেই মেয়ের ফোন পেয়ে চমকে ওঠে সে। ফোনের ওপাশ থেকে তানিয়াকে সে বলতে শোনে, ‘আমি আপনাকে মিস করছি কেন বলুন তো?’ মুন্না বলে, ‘ছি, কিস কেন করবেন?’, তানিয়া বলে, ‘কিস না, মিস।’ মুন্না বলে, ‘কি কিশমিশ...।’
‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ চার তরুণ–তরুণীর গল্প। পুরো সিনেমায় তাদের সাবলীল সংলাপই যেন দর্শকদের ডুবিয়ে রাখবে রোমাঞ্চে।
অসম বয়সী তানিয়া–মুন্না জুটির প্রেমের সমাপ্তি হয়তো ভিজিয়ে দেবে চোখ। চাকরি খুঁজে না পাওয়া বেকার রাতুল একপর্যায়ে বসতে রাজি হয় বাবার সবজির দোকানে। বারবার প্রেমে ব্যর্থ হওয়া আবির কথা দিয়েছিল, আর ব্রেকআপ নয়, এবার বিয়ে করবে সে। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ে সব এলোমেলো হয়ে যায়। চার যুবকের গল্পে চরকির পর্দায় সিনেমা বুনেছেন মিজানুর আরিয়ান।
৯০ মিনিটের ওয়েব ফিল্ম ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’। প্রাধান্য পেয়েছে সমসাময়িক নানা বিষয়। ভ্রমণ–রোমাঞ্চ–ট্র্যাজেডি, নানা ঘরানার এ ছবিতে অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ, নাজিয়া হক অর্ষা, নাজিফা তুষি, ইয়াশ রোহান, তাসনিয়া ফারিণ, তাসনুভা তিশা, খায়রুল বাশার, জোনায়েদ বোগদাদীসহ প্রায় সবাই বেশ শক্তিশালী অভিনয় উপহার দিয়েছেন।
অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা লিখেছেন, ‘মিজানুর রহমান আরিয়ানের নিশ্চয়ই গল্প বলার একটি অনন্য স্টাইল আছে। “নেটওয়ার্কের বাইরে” তাঁর প্রতিভার আরেকটি অংশ। একটি সহজ গল্প সহজভাবে বলা সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন কাজ। আরিয়ান তা দক্ষতার সঙ্গে করেছেন। পরিচালক এবং পুরো অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের অভিনন্দন। এটি মাস্ট ওয়াচ ফিল্ম।’
আহমেদ মোস্তাক লিখেছেন, ‘কী দারুণ মেকিং, ডিরেকশন, সিনেমাটোগ্রাফি, অভিনয়, কালার টোন, সাউন্ড ডিজাইন, এডিটিংয়ের কাজ। সবকিছুই বেশ গুছিয়ে করা। দেখেই একটা প্রিমিয়াম ফিল পাওয়া যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, চরকি সত্যিই বাংলা কনটেন্টের রাজধানী হয়ে উঠবে।’ আবদুল খালেক লিখেছেন, ‘আমি কখনো মিডিয়ার কোনো কাজ নিয়ে ফেসবুকে লিখি না, বলিও না। কিন্তু বাংলা নাটক ইন্ডাস্ট্রির নির্মাতা আরিয়ান তাঁর প্রথম ওয়েবফিল্ম “নেটওয়ার্কের বাইরে” বানিয়েছেন। সিনেমাটি দেখা অবস্থায় একেকটি দৃশ্য যেন কলিজায় আঘাত করছিল। ছাত্রজীবনে যাঁরা মেস বা হোস্টেলে থেকেছেন, তাঁদের জন্য এটা সব সময় মনে রাখার মতো এবং হৃদয়ে দাগ লাগার মতো কাজ।’
আরমান লিখেছেন, ‘হাসি–কান্নামাখা বন্ধুত্বের বন্ধনটাকে আরেকবার মনে করিয়ে দিল। মনে হলো ৮৯ মিনিটের জন্য কয়েক বছর পেছনে চলে গেছি। শেষের দিকে নিজের অজান্তেই চোখের কোণে জল চলে আসছে। ওই মুহূর্তটায় আসলেই নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গেছিলাম।’
গতকাল থেকেই চরকির এই ওয়েব ফিল্ম নিয়ে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি। রাতে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘“নেটওয়ার্কের বাইরে” ওয়েব ফিল্মের জন্য দারুণ সাড়া পাচ্ছি। অনেক তাড়াতাড়িই আমি আমার অনুভূতি জানিয়ে দিলাম। অনুভূতি প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। ছবিটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বাংলা অরিজিনাল কনটেন্টের জন্য আশানুরূপ সাড়া জাগাবে। আগের রেকর্ডও ভাঙতে পারে। শুভকামনা নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান এবং তাঁর শুটিং ইউনিটকে।’
সিনেমার চিত্রগ্রহণ, সংগীতায়োজন আকর্ষণীয়। বলাই বাহুল্য, কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনকে আগে কেউ পর্দায় এভাবে দেখাননি। ১৯ আগস্ট রাত ৯টায় ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি।
সিনেমাটি দেখার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিভিউ দিয়েছেন দর্শকেরা। কেউ কেউ সিনেমাটিকে দিয়েছেন ১০–এ ১০, গড়ে এর রেটিং ৮–এর বেশি। কী লিখেছেন দর্শকেরা? ফয়সাল খলিলুর লিখেছেন, ‘আমি প্রথম সেন্ট মার্টিন যাই ভার্সিটি থেকে এক ট্যুরে। অনার্স–লাইফের শেষে বন্ধুদের নিয়ে আমিও গিয়েছিলাম “নেটওয়ার্কের বাইরে”। প্রতিটা মুহূর্ত ছিল স্বপ্নের মতো সুন্দর। মিজানুর রহমান আরিয়ানের “নেটওয়ার্কের বাইরে” আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে ফিরিয়ে নিয়েছে।’