সেই নোরা থেকে এই নোরা
স্কুলজীবনে নোরা ফাতেহির নাচ দেখে খুব হাসাহাসি করেছিল সহপাঠীরা। বাড়ি ফিরে সেদিন খুব কান্নাকাটি করেছিলেন তিনি। ঘুম থেকে উঠে মাকে বললেন, ড্যান্সার হবেন, নাচ শিখতে চান তিনি। মরক্কোর রক্ষণশীল এক পরিবারের সন্তান নোরা পরিবার থেকে নাচ শেখার অনুমতি পাননি।
নোরার জন্মের আগেই কানাডা চলে গিয়েছিল তাঁর পরিবার। নোরা জন্মসূত্রে কানাডীয় আর পৈতৃক সূত্রে মরক্কান। নাচ শেখার অনুমতি না পেলেও শেষমেশ জেদের জয় হয়েছিল। ঘরের দরজা বন্ধ করে ইউটিউব দেখে নাচ শিখতে শুরু করেন নোরা। সেই সময়ই নোরার হৃদয়ে জায়গা করে নিল ‘বলিউডি নাচ’। ঠিক করলেন, বলিউডই হবে তাঁর গন্তব্য।
কলেজে পড়তে পড়তে নোরার শোকেসে জড়ো হলো বেশ কয়েকটি ট্রফি। নেচেই সেগুলো পেয়েছিলেন। কলেজ শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত নাচের স্কুল থেকে ডাক পেলেন। কিন্তু বাদ সাধল পরিবার। অনুমতি পেলেন না। আর এমন সময় মারা গেলেন নোরার বাবা। বাবার মৃত্যুর পর ১৮ বছরের নোরা নিজের কাঁধে তুলে নিলেন পরিবারের দায়িত্ব। পড়াশোনা ভুলে কাজ শুরু করলেন। সকাল থেকে বেলা একটা পর্যন্ত রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন করতেন। সন্ধ্যায় কাজ করতেন কল সেন্টারে। এর মধ্যে ভারতের বিভিন্ন মডেলিং এজেন্সিতে নাচের ভিডিও পাঠিয়ে লিখতেন কাজের ইচ্ছার কথা। দেড় বছর পর একটা মেইলের জবাব আসে। সেই আনন্দে বাক্সপেটরা গুটিয়ে কানাডা থেকে ভারতের মুম্বাইয়ে চলে যান নোরা। সেটা ২০১২ সালের কথা।
পরের দুই বছর নোরা কেবল বিজ্ঞাপন করেছেন, কিন্তু কোনো টাকা পাননি। সিনেমায় একটা চরিত্র পেতে সময় লেগে গেছে দুই বছর। সব নেতিবাচকতা, ব্যর্থতা, ঝুড়িভর্তি ‘না’ ঠেলে সরিয়ে সফলতার দেখা পেতে সময় লেগে যায় আরও চার বছর। আর এ মুহূর্তে নোরা বলিউডের সেরা ড্যান্সারদের একজন। এক কোটি ফলোয়ারের মাইলফলক (ইনস্টাগ্রামে ১ কোটি ৭৭ লাখ) পেরোনো মরক্কোর প্রথম আর একমাত্র তারকা তিনি। নোরার একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে, সেখানেও সাবস্ক্রাইবার ২২ লাখের বেশি। এ চ্যানেলে নানা কমেডি ভিডিও প্রকাশ করেন নোরা। নোরার ভাষায়, ‘আমার কমেডি সেন্স দুর্দান্ত। কিন্তু লোকে এখনো সেটা বুঝে উঠতে পারেনি।’