‘মা–বাবা শিখিয়েছেন, সব সপ্তাহ এক যাবে না’
পরনে নীল-সাদা সালোয়ার-কামিজ। মুখে নেই প্রসাধন। খোলা অবিন্যস্ত চুল। তাতেও সমান উজ্জ্বল নতুন প্রজন্মের ‘হার্টথ্রব’ সারা আলী খান। গত শুক্রবার দুপুরে পরিচালক আনন্দ এল রাইয়ের মুম্বাইয়ের আন্ধেরির অফিসে সাইফ আলী খান আর অমৃতা সিংকন্যার মুখোমুখি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য।
সারা এখন নিজের পরিচয়ে পরিচিত। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সাইফকন্যা হিসেবে নিজেকে পরিচিত করাতে চাননি তিনি। গত বছর মহামারিতে সবার মতোই ভালো কাটেনি তাঁর। আড্ডার শুরুতেই উঠে এল সে সময়ের কথা। সারা বলেন, ‘২০২০ সালে জীবনে খুব ভালো কিছু ঘটেনি। আমার মা সব সময় বলতেন, তাঁর যখন কাজের প্রয়োজন ছিল, তখন তাঁর কাছে কাজ ছিল। আমি এ কথার অর্থ সে সময় বুঝতে পারিনি। গত বছর বুঝেছি। কারণ, আমার জীবনের চরম কঠিন সময়ে একমাত্র আশার আলো নিয়ে এসেছিলেন আনন্দ এল রাই স্যার। তিনি আমাকে আতরঙ্গি রে ছবির প্রস্তাব দেন। গত বছর এটাই বলার মতো একটা ভালো ঘটনা ঘটেছিল।’
লকডাউনের আগে বড় পর্দায় সারার শেষ ছবি ছিল ‘লাভ আজ কাল’। ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। সারা বলেন, ‘লাভ আজ কাল’ ছবিটি ভালো চলেনি। আমার কাজ কারও পছন্দ হয়নি। মিডিয়া আর দর্শকের জন্য অভিনয় করি। তাঁদেরই যখন পছন্দ হয়নি, তখন আমার কিছু বলার নেই। সে সময় আমার কাজ নিয়ে চারদিকে প্রচুর নেতিবাচক মন্তব্য শুনেছি। তখন আমি আইসক্রিম খেতে খেতে ঘরের দরজা বন্ধ করে কাঁদতে বসিনি। আমি একটা ভালো সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। একটা ভালো কাজের প্রয়োজন ছিল। আর সেটা ‘আতরঙ্গি রে’।’
সারার জীবনে এর আগেও অনেক কঠিন সময় এসেছে। কঠিন সময়কে মোকাবিলা করেই সামনে এগিয়ে গেছেন তিনি। সারা বলেন, ‘আমি কোনো মিথ্যা আশ্বাসের মধ্যে বেঁচে থাকতে পছন্দ করি না। কঠিন সময় এলে নিশ্চয়ই কাঁদি। তবে সমস্যা থেকে কখনো পালিয়ে বাঁচি না। কঠিন পরিস্থিতি এলে তার মোকাবিলা করি।’
‘আতরঙ্গি রে’ ছবিতে সারাকে বিহারি মেয়ে রিঙ্কুর চরিত্রে দেখা যাবে। অভিনেত্রী হিসেবে নানা চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরতে পছন্দ করেন এই তারকাকন্যা।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র অভিনয় আপনাকে অন্য একটি চরিত্রকে জীবন্ত করে তোলার সুযোগ দেয়। অভিনয়ের মাধ্যমে আমরা কত ধরনের জীবনের স্বাদ পাই। কত রকম চরিত্র সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়, যা সাধারণ জীবনে কখনো পাওয়া সম্ভব নয়। অ্যাকশন আর কাটের মধ্যে এক অন্য জীবনে আমরা বাঁচি।’
এ ছবিতে সারার বিপরীতে আছেন দুই তারকা দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেতা ধানুশ আর বলিউড সুপারস্টার অক্ষয় কুমার। তাঁদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কী? সারা বলেন, ‘অক্ষয় কুমারের মতো এত বড় তারকার সঙ্গে কাজ করা সত্যি সম্মানের। তিনি শুটিং সেটে দারুণ প্রাণবন্ত। আর ধানুশও সত্যি আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি অভিনয়ের একটা প্রতিষ্ঠান। ধানুশ এককথায় অনবদ্য। প্রতিটি মুহূর্তেই ধানুশের কাছ থেকে কিছু না কিছু শেখা যায়।’
সারা জানান, মা-বাবা দুজনই তাঁকে নিয়ে গর্বিত। তাঁদের দেওয়া পরামর্শ সারা জীবন আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চান তিনি। সারা বলেন, ‘মা-বাবা একটি বিষয়ে একমত যে জীবনে সমতা বজায় রাখা খুব জরুরি। জীবনে চড়াই-উতরাই থাকবে। আমার এই ছোট্ট অভিনয়জীবনেই তা দেখেছি।
‘কেদারনাথ’ ছবির এক সপ্তাহ পর ‘সিম্বা’ মুক্তি পেয়েছিল। আপনারাই তখন আমার তুমুল প্রশংসা করেছিলেন। এরপর লাভ আজ কাল মুক্তির পর আবার আপনারাই বলেছিলেন, আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না। আমার সমালোচনায় মুখর ছিল বলিউড। আমি বলতে চাইছি, মা-বাবা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যে সব শুক্রবার এক যাবে না। তাই তাঁরা শুধু কাজ করে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। আমি জীবনে অনেক চাপ নিয়েছি। আমি নিজেকে খুবই ভাগ্যবতী মনে করি। কারণ, আমার শখই আমার ক্যারিয়ার।’
মা অমৃতা সিংয়ের সঙ্গে প্রায়ই সারার তুলনা টানা হয়। এটা তিনি দারুণ উপভোগ করেন। সারা বলেন, ‘মা আমার সবচেয়ে প্রিয়। তিনি অভিনেত্রী হিসেবে দুর্দান্ত। মা রূপসী। তাই মায়ের সঙ্গে আমার যেকোনো দিক নিয়ে তুলনা করা হলে দারুণ লাগে। মায়ের সামান্য কিছু আমি পেলেও নিজেকে ধন্য মনে করব।’
বাংলা ছবিতে কাজ করতে চান কি না, এমন প্রশ্নে সারা বলেন, ‘আমি ভারতীয়। তাই ভারতীয় হিসেবে যেকোনো ভাষার ছবিতে নিশ্চয়ই কাজ করতে চাইব। সেটা বাংলা কেন, যেকোনো ভাষারই হতে পারে।’