বলিউডে নায়িকাদের প্রায়ই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়
সোজা কথার মানুষ বলিউড অভিনেত্রী রিচা চাড্ডা। বলিউডের নানান বিতর্কিত বিষয় নিয়ে তিনি অকপটে সোজা কথা বলেছেন। তাই ‘ঠোঁটকাটা’ হিসেবে বলিউডে তাঁর বেশ নামডাক আছে। প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল আড্ডায় রিচা ছিলেন খোলামেলা, সোজাসাপ্টা। ‘মিটু’ ‘ইনসাইডার-আউটসাইডার’, এসব বিষয়ে নায়িকারা সাধারণত মুখে কুলুপ আঁটেন। কিন্তু তিনি ছিলেন অকপট। শীতের এই আড্ডা শুরু হয়েছিল রিচার আগামী ছবি দিয়ে।
অবশেষে করোনাকালের মধ্যেই বড়দিনে সিনেমা হলে মুক্তি পেল রিচার বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ‘শাকিলা’। দক্ষিণের নামজাদা নায়িকা শাকিলার জীবনের ওপর নির্মিত বায়োপিক ছবিটি। দক্ষিণের এই লাস্যময়ী নায়িকা নব্বইয়ের দশকে রুপালি পর্দায় রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন। ‘শাকিলা’ চরিত্রে দেখা যাবে রিচাকে। এই বলিউড নায়িকা জানান, ‘শাকিলা’ ছবির গল্প শুনেই তিনি ছবিটি করতে উৎসাহিত হন।
এ প্রসঙ্গে রিচা বলেন, ‘প্রথমে আমাকে ছবির চিত্রনাট্য দেওয়া হয়। এই গল্পের মধ্যে আমি নিজেকে দেখতে পাই। এরপর দক্ষিণের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাকিলার ওপর আমি নিজের মতো করে গবেষণা শুরু করি। ওনাকে নিয়ে লেখা বই পড়ি। ওনার জীবন আমাকে দারুণভাবে আকর্ষণ করে। তাই সব মিলিয়ে ছবিটি করতে খুবই উৎসাহিত হই। এই প্রথম আমি কোনো দক্ষিণি স্বাদের ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাই এই প্রস্তাব লুফে নিতে দেরি করিনি।’ এই প্রথম কোনো বায়োপিকের মূল চরিত্রে রিচা।
বাস্তবধর্মী চরিত্রে অভিনয় করা অনেক চ্যালেঞ্জিং বলে তিনি মনে করেন। রিচা বলেন, ‘এমন একটা বায়োপিকে আমি কাজ করেছি, যে মানুষটি জীবিত। তাই সবক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকতে হয়েছিল। কোনোভাবেই যেন ওনার ব্যক্তিত্বকে আমরা অসম্মানিত না করি, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়েছিল।
দক্ষিণি ভাষা আমাকে বলতে হয়নি। কিন্তু দক্ষিণি শারীরিক ভাষা, উচ্চারণের ভঙ্গি আমাকে বিশেষভাবে রপ্ত করতে হয়েছিল।’ তবে রুপালি পর্দায় শাকিলা হয়ে ওঠার জন্য বাস্তবের শাকিলার থেকে অনেক টিপস পেয়েছেন রিচা। শাকিলার সঙ্গে দেখা করে নানা পরামর্শ নিতেন তিনি।
‘শাকিলা’ ছবির ট্রেলার মুক্তির পরপরই বিদ্যাবালনের ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ ছবির সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে। ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ ছবিতে বিদ্যা দক্ষিণি লাস্যময়ী নায়িকা সিল্ক স্মিতার চরিত্রে অভিনয় করে রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন। তাই বিদ্যার সঙ্গেও দাঁড়িপাল্লায় মাপা হচ্ছে রিচাকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছি। বিদ্যাবালন অত্যন্ত ভালো অভিনেত্রী। তাই ওনার মতো অভিনেত্রীর সঙ্গে আমার তুলনা টানায় আমি ধন্য। একই সঙ্গে “দ্য ডার্টি পিকচার”–এর মতো ছবির সঙ্গে এই ছবির তুলনা করলে আমার খুবই ভালো লাগবে। ৯ বছর আগের “দ্য ডার্টি পিকচার”কে আজও সবাই মনে রেখেছে। তাই একটা ভালো মানের ছবির সঙ্গে তুলনায় আসা সত্যি সম্মানজনক।’
বলিউড সাম্রাজ্যের বাইরে থেকে এসে রিচা বেশ শক্তপোক্ত করে জায়গা করে ফেলেছেন। তবে একসময় কঠিন সংগ্রাম করেছিলেন বলিউডের এই নায়িকা। বললেন, ‘একটা সত্যি কথা বলি, বলিউডে একজন বহিরাগতের সংগ্রাম কখনোই শেষ হয় না। এই সংগ্রাম আজীবন চলতেই থাকে। যত দিন এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করব, লড়াই করে টিকে থাকতে হবে। বারবার নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। তবে আমি প্রথম দিকের সেই কঠিন দিনগুলো দারুণ উপভোগ করতাম। আজও সেই দিনগুলো মনে করি আর উপভোগ করি।’
বলিউডের নায়িকাদের প্রায়ই নানান অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় বলে জানান রিচা। এ প্রসঙ্গে এই বলিউড তারকা বলেন, ‘বলিউডে সব অভিনেত্রীকেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। তাই “মিটু”র মতো অভিযান এখানে অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। কয়েকটা অভিযানের পর কিছু মানুষের মনে ভয় বসে গেছে। আর এই ভয়ের খুবই দরকার ছিল। ইন্ডাস্ট্রিতে একদল মানুষের দৌরাত্ম্য ক্রমে বাড়ছিল।
“মিটু” অভিযানের পর আজ কেউ কোনো অন্যায় করার আগে এক শ বার ভাববে। এখন সবাই এ ব্যাপারে সচেতন।’
আড্ডার শেষ বেলায় অবধারিতভাবে উঠে এল রিচা চাড্ডা ও আলী ফজলের বিয়ের প্রসঙ্গ। এ বছরের এপ্রিলে রীতিমতো ধুমধাম করে রিচা আর তাঁর দীর্ঘদিনের প্রেমিক আলী ফজলের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাদ সাধল করোনা। তবে এ নিয়েও এতটুকু মন খারাপ নেই তাঁর। রিচা হাসতে হাসতে বললেন, ‘একদমই খারাপ লাগেনি। কারও মেডিকেল বিল দেওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না আমার। আমার বিয়েতে এসে কেউ অসুস্থ হবে, কারও জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হবে, এটা কখনোই কাম্য নয়।’ তবে বিয়ে কবে হবে, এ ব্যাপারে এখনো খোলাসা করেননি তিনি।