ঝুঁকি এখন নেব না তো কবে নেব!

সংগীতা ঘোষ
সংগীতা ঘোষ

স্টার প্লাসের নতুন সিরিয়াল ‘দিব্য দৃষ্টি’। ‘দিব্য’ আর ‘দৃষ্টি’ দুই বোন। দুজনেরই রয়েছে বিশেষ ক্ষমতা। ‘দৃষ্টি’ ভবিষ্যৎ দেখতে পায় আর সেই ভবিষ্যৎকে বদলে দিতে পারে ‘দিব্য’। দুই বোনের এই ক্ষমতা টের পেয়ে যায় এক পিশাচিনী। দুই বোনকে নানাভাবে ক্ষতির চেষ্টা করে। তাদের ক্ষমতাকে কেড়ে নিতে চায়। এই ‘পিশাচিনী’র চরিত্রে অভিনয় করছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ সংগীতা ঘোষ। স্টার প্লাসের অন্যতম জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘দেশ মে নিকলা হোগা চাঁদ’-এর ‘পাম্মি’ তাঁকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এরপর তিনি বিভিন্ন টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন। উপস্থাপনা করেছেন ‘নাচ বালিয়ে ১ ও ২’ রিয়েলিটি শোতে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি স্টার প্লাসে শুরু হয়েছে ‘দিব্য দৃষ্টি’। এই সিরিয়ালের সূত্র ধরেই প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়েছেন সংগীতা ঘোষ।

আপনাকে সব সময় হাসিখুশি প্রাণবন্ত চরিত্রে দেখা গেছে। এবার ‘পিশাচিনী’ চরিত্রে অভিনয় করছেন। আপনার ক্যারিয়ারের জন্য একটু ঝুঁকি হয়ে গেল?
ঝুঁকি এখন নেব না তো কবে নেব! এত বছর অভিনয়জগতে থাকার পর এবার ঝুঁকি নেওয়ার সময় এসেছে। এখন তো নিজেকে নিয়ে নিরীক্ষা করার সময়। এখন এত এত টিভি চ্যানেল। এত নতুন কনটেন্ট। আমি খুব ভাগ্যবতী, কারণ এ ধরনের শক্তিশালী এক চরিত্রের জন্য আমাকে নির্বাচন করা হয়েছে। সত্যি বলছি, চরিত্রটা খুব উপভোগ করছি।

‘দিব্য দৃষ্টি’ সিরিয়ালে সংগীতা ঘোষ
‘দিব্য দৃষ্টি’ সিরিয়ালে সংগীতা ঘোষ


‘দিব্য দৃষ্টি’ সিরিয়ালে আপনার চরিত্র নিয়ে কিছু বলুন?
এখানে আমার চরিত্রের নাম ‘পিশাচিনী’। শতভাগ নেতিবাচক চরিত্র। সিরিয়ালটি ‘দিব্য’ আর ‘দৃষ্টি’ নামের দুই বোনের গল্প নিয়ে। পিশাচিনী খুব ছোটবেলায় দুই বোনকে আলাদা করে দেয়। এই দুই বোনের মধ্যে অদ্ভুত এক শক্তি আছে। পিশাচিনীও জাদুশক্তির অধিকারী। তবে সে চায় এই দুই বোনের শক্তি কেড়ে নিয়ে নিজেকে আরও শক্তিশালী করতে। পিশাচিনী বারবার দুই বোনের অনিষ্টের চেষ্টা করে। ‘দিব্য দৃষ্টি’ সিরিয়ালে আবেগ, ভালোবাসা, জাদুশক্তি—সবকিছু আছে।

চরিত্রটি আপনার কাছে চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে?
এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। আমি বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। আর একজন অভিনেত্রী হিসেবে এমন চ্যালেঞ্জ নেওয়া উচিত। এর আগে আমি এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করিনি। আর ‘পিশাচিনী’র সঙ্গে নিজেকে কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না। অন্য সিরিয়ালগুলোয় আমার অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে কিছুটা হলেও মেলাতে পারি। কিন্তু এখানে সেই সুযোগ নেই। তবে আমাকে নির্দেশনা টিম খুব সহযোগিতা করেছে। রাইটিং টিমের কাছ থেকেও সহায়তা পেয়েছি।

সংগীতা ঘোষ
সংগীতা ঘোষ


আপনি জাদুশক্তি বিশ্বাস করেন?
আমাদের চারপাশে একটা শক্তি নিশ্চয়ই আছে। তা না হলে সাধুরা দীর্ঘদিন অভুক্ত থেকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারতেন না। তবে ম্যাজিক্যাল পাওয়ারের থেকে আমি মিরাকেলে বেশি বিশ্বাস করি। আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু মিরাকেল ঘটে।

প্রযুক্তির এই যুগে ‘দিব্য দৃষ্টি’ সিরিয়াল দর্শক দেখবে?
আগেও ছিল, এখনো আছে আর আগামী দিনেও এ ধরনের সিরিয়ালের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। আমাদের দেশে একসময় এসব সুপার ফ্যান্টাসিভিত্তিক সিরিয়াল তৈরি হতো না। আমরা বিদেশি চ্যানেলে এসব সিরিজ দেখেছি। ধীরে ধীরে আমাদের দেশেও এ ধরনের সিরিয়ালের তৈরি শুরু হয়। আগে সবাই ভেবেছে, ফ্যান্টাসিভিত্তিক ধারাবাহিক শিশুদের জন্য। কিন্তু এখন মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। পরিবারের সবাই এ ধরনের সিরিয়াল উপভোগ করেন।

টিভির অনুষ্ঠানে অনেক দিন কাজ করছেন। কতটা বদল দেখছেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে?
অনেক বদলে গেছে। এখন অজস্র চ্যানেল। প্রচুর টেলিসোপ হচ্ছে। কাজের পরিমাণ বেড়ে গেছে। প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। সাত দিনই শুটিং করতে হয়। তবে সেটে সহ–অভিনেতাদের সঙ্গে আগের বন্ডিং খুব মিস করি। প্রযুক্তির যুগে আবেগভরা সম্পর্ক কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। অরুণা ইরানির সঙ্গে আমি ‘দেশ মে নিকলা হোগা চাঁদ’ সিরিয়ালে কাজ করেছি। দীর্ঘ ১৪ বছর পর এখনো আমাদের মধ্যে সেই বন্ডিং আছে। এখনো গভীর রাতে ফোন করে তাঁকে আমার সমস্যার কথা বলতে পারি।

এখন যে কঠিন প্রতিযোগিতা চলছে, তার মধ্যে টিঁকে থাকতে কষ্ট হচ্ছে?
প্রতিযোগিতা সব ক্ষেত্রেই থাকে। এখানেও আছে। এটা খুব ইতিবাচক দিক। হ্যাঁ, প্রতিযোগিতা বেড়েছে। তবে এই তীব্র প্রতিযোগিতার মাঝে এখনো আমি ভালো ভালো কাজের প্রস্তাব পাচ্ছি। এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমার চাহিদা আছে। নিজের কাজের প্রতি সৎ থাকার এটাই পুরস্কার। এত বছর ধরে এই ইন্ডাস্ট্রিতে সুনামের সঙ্গে কাজ করছি।

সংগীতা ঘোষ
সংগীতা ঘোষ


বিয়ের পর দুই দিক বজায় রেখে চলতে পারছেন?
মেয়েদের সুপার পাওয়ার থাকে। আমরা সবদিক বজায় রেখে চলতে পারি। মুম্বাই থেকে জয়পুরের মধ্যে আমার যাতায়াত চলতেই থাকে। শুটিং থাকলে মুম্বাই থাকি। আর শুটিং না থাকলে জয়পুরে উড়ে যাই। আসলে স্বামী আমাকে খুবই প্রেরণা জোগান। তাঁর বক্তব্য, বিয়ের পর ছেলেরা কাজ ছাড়ে না, তাহলে মেয়েরা কেন কাজ ছাড়বে? শুধু আমার স্বামী নয়, শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেকে খুব সহযোগিতা করছেন। আমাকে সবাই উৎসাহ দেন। আমিও পরিবারে মধ্যে থাকতে ভালোবাসি। তাই এতটুকু সময় পেলে জয়পুরে চলে যাই। যতটা সম্ভব পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করি।

আপনার স্বামী রাজভি শৈলেন্দ্র সিং রাঠোড় পোলো খেলেন। আপনি কখনো পোলো খেলেছেন?
কখনো খেলিনি। তবে ঘোড়ায় চড়েছি। আমাদের নিজস্ব ঘোড়া আছে। অনেকবার ঘোড়ার পিঠে চড়েছি। ঘোড়ার পিঠে আমি ততটা স্বচ্ছন্দ না। তাই ঝুঁকি নিতে চাই না। সময় আর সুযোগ পেলে অবশ্যই শিখব।

এখন ওয়েব সিরিজ তৈরি হচ্ছে। কোনো ওয়েব সিরিজে কাজ করছেন?
দুটো ওয়েব সিরিজের জন্য প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু মনের মতো হয়নি, তাই করিনি।

আপনি নিজেকে এখনো এতটা ফিট আর সুন্দর রেখেছেন। এর রহস্য কী?
আমি নিজেকে প্রচণ্ডভাবে ব্যস্ত রাখি। কাজের মধ্যে থাকি। আর অবশ্যই ওয়ার্ক আউট করি। সৌভাগ্যবশত আমি চকলেট আর মিষ্টির ভক্ত না। ছোটবেলা থেকে ফল আর সবজি খেতে ভালোবাসি। প্রচুর ফল, সবজি আর মাছ খাই। ঘি খাই। আর পরিমাণে কোনো কিছুই বেশি খাই না।