ভারতের ২১ বছরের আক্ষেপ ঘুচবে কি এবার
৯৫তম অস্কারের মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে আগামী বছরের ২৪ জানুয়ারি। তার আগে চলতি বছরের ডিসেম্বরে ঘোষণা করা হবে বিদেশি ভাষার ক্যাটাগরির সংক্ষিপ্ত তালিকায় নির্বাচিত সিনেমার তালিকা। সেই সময়েরও অনেক বাকি আছে। তবে তার আগেই ভারত থেকে অস্কারে বিদেশি ভাষার ক্যাটাগরিতে কোন ছবি পাঠানো হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যেই অনুরাগ কশ্যপসহ অনেকেই দাবি তুলেছেন, চলতি বছর অস্কারের জন্য ভারত থেকে পাঠানো হোক এস এস রাজামৌলির বহুল আলোচিত ছবি ‘আরআরআর’।
তবে ‘আরআরআর’ নিয়ে কেবল ভারতেই নয়, ভারতের বাইরেও ব্যাপক উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে। ভ্যারাইটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ‘আরআরআর’ অস্কারে পাঠানো হলে ২১ বছর পর ভারত থেকে অস্কার মনোনয়ন পেতে পারে ছবিটি। অনেকে বলছেন, কেবল মনোনয়নই নয়, অস্কারে সেরা ছবিও হতে পারে এনটিআর জুনিয়র, রাম চরণের ছবিটি।
২০০১ সালে বিদেশি ভাষার ক্যাটাগরিতে অস্কার মনোনয়ন পায় আমির খান অভিনীত ‘লগান’। সে–ই শেষ। গত ২১ বছরে বিদেশি ভাষার ক্যাটাগরিতে ভারতের আর কোনো সিনেমা অস্কারের চূড়ান্ত মনোনয়ন বাগাতে পারেনি। এর আগে ১৯৫৭ ও ১৯৮৮ সালে ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ও ‘সালাম বম্বে’ অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিল। চলতি বছরের ২৫ মার্চ মুক্তি পায় রাজামৌলির বহুল আলোচিত ‘আরআরআর’। মুক্তির পর প্রত্যাশামতোই বক্স অফিসে ঝড় তোলে। প্রথম দিনই ছবিটি আয় করেছিল ২৪০ কোটি রুপি, যা ভারত থেকে মুক্তি পাওয়া কোনো সিনেমার প্রথম দিন বিশ্বব্যাপী আয়ের নিরিখে রেকর্ড।
৫৫০ কোটি বাজেটের ছবিটি শেষ পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ কোটি রুপি আয় করে। তবে ‘আরআরআর’ নিয়ে হলিউডে উন্মাদনার শুরুটা হয় নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়ার পর। কমেডিয়ান প্যাটন অসওয়াল্ট, চিত্রনাট্যকার রবার্ট সি কারগির, অভিনেতা জোসেন মরগান, লেখক জ্যাকসন ল্যানজিংসহ অনেকেই ছবির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। সবাই একবাক্যে ছবিটিকে বর্ণনা করেছেন ‘ক্রেজিয়েস্ট এক্সপেরিয়েন্স’ হিসেবে।
নেটফ্লিক্সে মুক্তির পর ‘আরআরআর’ নিয়ে হলিউড উন্মাদনার আরও বিস্তারিত বয়ান দিয়েছেন পরিচালক অনুরাগ কশ্যপ। নিজের নতুন ছবি ‘দোবারা’ মুক্তি উপলক্ষে দিন কয়েক আগে সমালোচক ভরদ্বাজ রঙ্গনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অনুরাগ। সেখানে তিনি বলেন, ‘ভারতের মানুষ যেভাবে ছবিটিকে নিয়েছে, পশ্চিমারা পুরোপুরি আলাদাভাবে নিয়েছে। যদি ভারত থেকে ছবিটি অস্কারে পাঠানো হয়, মনোনীত হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ। ছবিটি হলিউড দুনিয়ায় এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছে। অনেক দিন পর ভারত সেরা বিদেশি ভাষার ক্যাটাগরিতে মনোনীত পাঁচ ছবির একটি হতে পারে, যদি ‘আরআরআর’ পাঠানো হয়। ছবিটি দেখে পশ্চিমারা রাজামৌলি নামের নতুন এক নির্মাতাকে আবিষ্কার করেছে। তারা এটিকে যেকোনো মার্ভেল ছবির চেয়েও ভালো বলেছে। “আরআরআর”-এর বিভিন্ন তুচ্ছ বিষয় নিয়েও বাইরে যে উন্মাদনা, সেটা অবিশ্বাস্য। অ্যাকশন দৃশ্য তো বটেই, ছবির নাচ দেখেও তারা মন্ত্রমুগ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও “আরআরআর” এখন বহুল চর্চিত সিনেমা। তারা কোনো পার্টি করলেই ‘আরআরআর’ চালিয়ে দেয়। এটা এখন এমন এক আইকনিক ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে যে একেক দিন এক দৃশ্য থেকে চালিয়ে দেখে। বেশির ভাগই ছবিটি অসংখ্যবার দেখেছে। ‘আরআরআর’ নিয়ে উন্মাদনা এতটাই রিয়েল যে কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না।’
‘আরআরআর’ নিয়ে বিদেশে উন্মাদনা দেখে অবাক খোদ ছবিটির অভিনেত্রী আলিয়া ভাটও। ভরদ্বাজ রঙ্গনকেই দেওয়া আরেকটি সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেছেন, ‘নেটফ্লিক্সে মুক্তির পর বিদেশ থেকে যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছি, সেটা অবিশ্বাস্য। থাইল্যান্ডের কথা বলতে পারি, সেখানে মানুষ পাগলের মতো ছবিটি দেখেছে।’
ভ্যারাইটি মনে করছে, অস্কারের মনোনয়ন বাগানো ভারতীয় প্রযোজকদের আরও প্রচারণা চালানো দরকার, যাতে সেরা বিদেশি ভাষার ক্যাটাগরির ১৫ ছবির শর্টলিস্টে অন্তত ছবিটি থাকে। যে শর্টলিস্ট ঘোষণা করা হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। যদি সে তালিকায় জায়গা না–ও পায়, ভারতের সুযোগ থাকবে সাধারণ ক্যাটাগরিতে সেরা ছবি বা সেরা পরিচালক ক্যাটাগরিতে ছবিটি জমা দেওয়ার। তবে ‘আরআরআর’ অস্কারে মনোনীত হবে কি না, তার আগে পরিচালক অনুরাগ কশ্যপ শঙ্কায় আছেন ছবিটি ভারত থেকে মনোনীত হবে কি না, তা নিয়ে।
এই পরিচালক আশঙ্কা করছেন, ভারত সরকারের মদদপুষ্ট বলে পরিচিত ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’কে অস্কারে পাঠানো হতে পারে। ১৯২০ সালের ব্রিটিশ ভারতের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘আরআরআর’-এর প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন এনটিআর জুনিয়র ও রাম চরণ।