‘পাপা কেহতে হ্যায়’ ছবির অভিনেত্রী ময়ূরী এখন গুগলের বড় কর্মকর্তা
সামনে অথই সমুদ্র। তীরে বসে উদাস মনে চেয়ে আছে এক যুবক, পাশে গিটার। সেই তরুণ গিটার তুলে নিতেই দৃশ্যপটে আগমন গোলাপি পোশাক পরা এক সুন্দরী। বেজে উঠল সেই গান, যা নিমেষেই উসকে দেয় নস্টালজিয়া। সেই গানটি হলো মহেশ ভাটের ছবি ‘পাপা কেহতে হ্যায়’ ছবির ‘ঘর সে নিকালতে হি’।
১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া ছবির গানটি গেয়েছিলেন উদিত নারায়ণ। টি-সিরিজের অফিশিয়াল ইউটিউব পেজে গানটির ভিউ সাড়ে ছয় কোটিরও বেশি। তুমুল জনপ্রিয় গানটিতে পর্দায় দেখা যায় যুগল হংসরাজ ও ময়ূরী কাঙ্গোকে। ময়ূরীর নাম শুনে নিশ্চিতভাবেই অনেকে ফিরে গেছেন সেই নব্বইয়ের দশকে, যখন একের পর ছবিতে হাজির হয়ে তরুণদের হৃদয়ে ঝড় তুলেছেন। আজ এত দিন পর কোথায় সেই অভিনেত্রী? না, অভিনয়ে নয়, ময়ূরী বেছে নিয়েছেন সম্পূর্ণ অন্য ক্যারিয়ার।
মহারাষ্ট্রের আরঙ্গবাদে জন্ম নেওয়া ময়ূরী কাঙ্গোর সিনেমায় আসা অনেকটাই কাকতালীয়। মুম্বাইতে মাকে দেখে এসে পরিচালক শহীদ আখতার মির্জার সঙ্গে আলাপ। ময়ূরীর সৌন্দর্য আর পাঁচটা বলিউড নায়িকার চেয়ে অনেকটাই আলাদা ছিল। এক অদ্ভুত সরলতা ছিল তাঁর সৌন্দর্যে। ১৯৯৫ সালে সাঈদ তাঁর ছবি ‘নাসিম’-এ ময়ূরীকে প্রথম সুযোগ দেন। পড়াশোনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কীভাবে অভিনয় করবেন, সেটা ভেবেই পাচ্ছিলেন না তিনি। পরে অবশ্য সাঈদের প্রস্তাব গ্রহণ করেন ময়ূরী। ‘নাসিম’ ছবি দেখে চিত্রপরিচালক মহেশ ভাটের বেশ পছন্দ হয় নবাগত ময়ূরীকে। মহেশ তাঁর পরবর্তী ছবি ‘পাপা ক্যাহতে হ্যায়’-এর নায়িকা হিসেবে নেন তাঁকে। এই ছবি ময়ূরীকে তারকাখ্যাতি দিয়েছিল।
সিনেমাপ্রেমীদের স্মৃতিতে তিনি রয়ে গেছেন মহেশের এই ছবির জন্যই। এরপর তাঁর অভিনীত ‘হোগি প্যায়ার কি জিত’, ‘বেতাবি’, ‘বাদল’ ছবিগুলো মোটামুটি আয় করেছিল। কিন্তু ময়ূরীর বাকি ছবিগুলো বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তাঁকে শেষ বড় পর্দায় দেখা গেছে তেলেগু ছবি ‘ভামসি’-তে। এই ছবিতে তিনি ছাড়া ছিলেন দক্ষিণি তারকা মহেশ বাবু আর নম্রতা শিরোদকর। বেশ কিছু টেলিভিশন ধারাবাহিকে দেখা গেছে তাঁকে। কিন্তু এখানেও তিনি সফলতা পাননি। ময়ূরীর কথা অনুযায়ী, তাঁর অভিনীত প্রায় ১৬টি ছবি মুক্তি পায়নি।
ময়ূরী কানপুর আইআইটিতে সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু বলিউডে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে এসে এত ভালো সুযোগ তাঁর হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। ছবির জগতে সেভাবে সফলতা না পাওয়ায় একদিন গ্ল্যামার দুনিয়াকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০০৩ সালে আদিত্য ঢিল্লনের সঙ্গে ঔরাঙ্গাবাদে গাঁটছড়া বাঁধেন। বিয়ের পর আদিত্যর হাত ধরে সুদূর মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমান ময়ূরী।
আর এখানেই তিনি বিপণন ও অর্থায়নের ওপর এমবিএ করেন। শুরু হয় ময়ূরীর নতুন এক জীবন। ২০১২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি করেছিলেন তিনি।
২০১৩ সালে দেশে ফিরে আসেন ময়ূরী। আর এখানে এসে ফরাসি বিজ্ঞাপন কোম্পানি পারফরমিক্সে কাজ করেন তিনি। ২০১৯ সালে তাঁর জীবনে আসে বড় এক সুযোগ। গুগল ইন্ডিয়ায় যোগ দেন তিনি। গুগল ইন্ডিয়ার প্রধান পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন ময়ূরী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর দপ্তরের কিছু ঝলক দেখিয়েছেন তিনি। বলিউডের ব্যর্থ নায়িকা ময়ূরী আজ করপোরেট দুনিয়ায় চূড়ান্ত সফলতার কাহিনি লিখেছেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ময়ূরী জানিয়েছিলেন অভিনয়ের ব্যস্তার মধ্যেই তিনি কখনোই পড়াশোনা ছাড়েননি। ময়ূরী বলেন, ‘বলিউডে ভাগ্য পরীক্ষার আগে সবাই উচিত পড়াশোনা শেষ করা। বিশেষ করে অভিনেত্রীদের কারণ ইন্ডাস্ট্রি তাদের ক্যারিয়ার মোটে দশ বছরের। পড়াশোনাটা করা থাকলে একটা বিকল্প থাকে।’