মারা গেছেন জনপ্রিয় বলিউড তারকা মনোজ কুমার

শুক্রবার মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে মারা যান বর্ষীয়ান অভিনেতা ও নির্মাতা মনোজ কুমারকোলাজ

বলিউডের চর্চিত ‘মেরি দেশ কি ধারতি’ গানটি পর্দায় পরিবেশন করেছিলেন মনোজ কুমার। দেশাত্মবোধক সিনেমায় তাঁর অভিনয় সব সময় আলোচনায় ছিল। আজ শুক্রবার মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে মারা যান বর্ষীয়ান এই অভিনেতা ও নির্মাতা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের

জানা গেছে, বার্ধক্যজনিত একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা। সম্প্রতি তাঁকে মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি একসময় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। এ ছাড়া লিভার সিরোসিস ছিল মনোজ কুমারের। এই দুইয়ের কারণেই অভিনেতার মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালের দেওয়া মৃত্যুসনদে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিনেতার মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন ছেলে কুনাল। বাবার মৃত্যুর খবর জানিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআইকে কুনাল বলেন, ‘দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় আমার বাবা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে অসুস্থ ছিলেন। তবে তিনি সবকিছুর সঙ্গে কঠিন লড়াই করেছেন। আগামীকাল শনিবার সকালে মনোজ কুমারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে পবন হংসে। আর দুই মাস পর তিনি ৮৮তম জন্মদিন উদ্‌যাপন করতেন।’ অভিনেতার ছেলে জানান, বয়সকালে তিনি নাতি-নাতনিদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতেন। ভীষণ আনন্দে ছিলেন। শুধু বার্ধক্যজনিত সমস্যায় শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।

তিনি দেশভক্তির সিনেমা বানিয়েছেন, দেশভক্তির গান বানিয়েছেন
ইনস্টাগ্রাম থেকে

বর্ষীয়ান অভিনেতার প্রয়াণে শোকবার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা। দেশ আর দেশপ্রেম—তাঁর অভিনয়ের এ-ই ছিল পরিচয়। ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘রোটি কাপড়া অউর মাকান’, ‘ক্রান্তি’র মতো ছবি তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিল দেশের পরিচয়। তাই তিনি ‘ভারত কুমার’ উপাধিতে সম্মানিত। ১৯৯২ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত করা হয় তাঁকে। ২০১৬ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

দেশ আর দেশপ্রেম, তাঁর অভিনয়ের এই ছিল পরিচয়
ইনস্টাগ্রাম থেকে

পরিচালক অশোক পণ্ডিত বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই অসুস্থ ছিলেন মনোজ। প্রাণোচ্ছল মানুষ ছিলেন। বলিউড তাঁর অভাব অনুভব করবে।’ বলিউড তারকা অক্ষয় কুমার এক্স হ্যান্ডলে শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আমি তাঁর কাছ থেকে শিখেছি, দেশের প্রতি ভালোবাসা ও গর্ব কেমন হয়। আমরা অভিনেতারা যদি এই আবেগ প্রকাশে সামনে না এগিয়ে আসি, তাহলে কে আসবে? ভীষণ ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। আমাদের ভ্রাতৃত্বের সবচেয়ে বড় সম্পদগুলোর মধ্যে একটি। মনোজ স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা। ওম শান্তি।’

লেখক মনোজ মুনতাশির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমি সারা জীবন গর্বিত ছিলাম এবং থাকব যে আমার নাম আপনার নামের সঙ্গে মিলে যায়। আপনার সিনেমাগুলো দেশপ্রেমের প্রথম পাঠ শিখিয়েছিল। ভারত কুমার আমাকে ভারতকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন। আপনি যদি না থাকতেন, তাহলে সেই স্ফুলিঙ্গ আসত না, যা আমাকে আমার সরল কলম দিয়ে “তেরি মিট্টি” লিখতে বাধ্য করেছিল। বিদায় আমার বীর! ওম শান্তি!’

পরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রীর ভাষ্যে, ‘মনোজ কুমার দূরদর্শী পরিচালক ছিলেন। যিনি ভারতীয় সিনেমাকে নতুন গ্রামার শিখিয়েছেন। এমন সিনেমা বানানো শিখিয়েছেন, যা মনে থাকবে সারা জীবন। তিনি দেশভক্তির সিনেমা বানিয়েছেন, দেশভক্তির গান বানিয়েছেন।’

সিনেমার দৃশ্যে
ইনস্টাগ্রাম থেকে

বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্গত খাইবার পাখতুনখাওয়া, যা আগে অ্যাবোটাবাদ নামে পরিচিত ছিল, সেখানেই ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন মনোজ কুমার। তাঁর আসল নাম ছিল হরিকৃষ্ণন গোস্বামী। ১৯৫৭ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি ‘ফ্যাশন’ ছবির হাত ধরে বলিউডে পা রাখেন। এরপর ১৯৬১ সালে ‘কাচ কি গুড়িয়া’ সিনেমায় অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। সেটাই ছিল তাঁর প্রথম আলোচিত সিনেমা। এরপর আর তাঁকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তাঁর অভিনীত ‘গুমনাম’ ছিল ১৯৬৫ সালের রেকর্ড আয় করা সিনেমা। সেই সময় এই সিনেমা ২ দশমিক ৬ কোটি টাকার ব্যবসা করে। মনোজ কুমারকে শেষ বড় পর্দায় দেখা গেছে ১৯৯৫ সালে ‘ময়দান-ই-জংগ’ ছবিতে।