রহস্যঘেরা পারভিন ববির জীবনের অজানা ১০ তথ্য

৪ এপ্রিল ছিল পারভিন ববির জন্মদিনএক্স থেকে
অনেক চলচ্চিত্র সমালোচকের মতে পারভিন ববি ভারতীয় চলচ্চিত্রে পশ্চিমা হাওয়া এনেছিলেন। আশির দশকে খ্যাতির শীর্ষে ছিলেন। শরীরী ভাষা ও পোশাকে নিজের সময় তথা সমসাময়িক নায়িকাদের থেকে অনেক এগিয়ে ছিলেন তিনি। সহজ স্বাচ্ছন্দ্যে পর্দায় রোমাঞ্চ করতে পেরেছিলেন সে সময়ের শীর্ষ সব নায়কদের সঙ্গে। কিন্তু একসময় ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কের জটিলতা পারভিনকে ঠেলে দেয় নেশা আর মানসিক রোগের অন্ধকারে। ৪ এপ্রিল ছিল পারভিন ববির জন্মদিন।

১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল গুজরাটের জুনাগড়ে জন্ম পারভিন ববির। মা–বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। পারভিনের বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন বাবাকে হারান তিনি।

আহমেদাবাদের মাউন্ট কারমেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে স্কুলের পাঠ শেষের পর সেখানে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক শেষ করেন পারভিন।

অবশ্য পারভিন ববির জন্মদিন নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সে অর্থে তেমন লেখালেখিও হয়নি।

বরং তাঁর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুই যেন বেশি চর্চিত। দিনটি ছিল ২০০৫ সালের ২০ জানুয়ারি। মৃত্যুর দিন তিনেক পর পচন ধরা নিথর দেহটা উদ্ধার করা হয়েছিল। নিঃসঙ্গ পারভিন এভাবেই চলে গিয়েছিলেন। না জানি কত অজানা কথা সঙ্গে নিয়ে গেছেন তিনি।

বাবা হারা
গুজরাটের জুনাগড়ে জন্ম পারভিন ববির। মা–বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। পারভিনের বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন বাবাকে হারান তিনি
টাইম ম্যাগাজিনে
পারভিন ববিই প্রথম বলিউড তারকা, যিনি টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে মডেল হয়েছেন। ১৯৭৬ সালের ১৯ জুলাই সাময়িকীটির ইউরোপীয় সংস্করণের প্রচ্ছদে দেখা যায় তাঁকে।
নায়কের পাশাপাশি
১৯৭২ সালে মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন পারভিন। তখনই সুযোগ পান অভিনয়ের। পরের বছর মুক্তি পায় তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘চরিত্র’। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘দিওয়ার’। অমিতাভ বচ্চন ও শশী কাপুরের সঙ্গে এই ছবিতে অনিতা চরিত্রে দেখা গিয়েছিল পারভিনকে। এই ছবির হাত ধরেই বলিপাড়ার প্রথম সারির নায়িকা হিসেবে নিজের জায়গা করে নেন। ‘দিওয়ার’, ‘নমক হালাল’, ‘ওমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘শান’-এর মতো সুপারহিট ছবির সাফল্যের বড় অংশীদার ছিলেন তিনিও।

সাবেক প্রেমিক পরিচালক মহেশ ভাট যদিও চলচ্চিত্র কিংবা সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পারভিনের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানিয়েছেন, কিন্তু এরপরও রহস্যেই থেকে গেছে পারভিন ববির জীবন।

ইকোনমিক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রয়াত সাবেক প্রেমিকা সম্পর্কে বলেন, ‘বলিউড রূপকথার গল্পের মতো। শিক্ষা পেলেই তুমি আর কখনো কষ্ট পাবে না। এই মদ, গোলাপ এবং পারভিনের সঙ্গে চোখের জল ফেলা, সত্তরের দশকের এই সুপারস্টার মেয়েটি ছিল ম্যাগাজিন গার্ল। গুজরাটের জুনাগড়ের মেয়েটি বিশ্বব্যাপী ফ্যাশনকে খুব সাধারণভাবেই তুলে ধরেছেন।’

পারভিনের প্রেম
প্রথমে অভিনেতা-পরিচালক ড্যানি ডেনজংপার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন পারভিন। তবে কখনোই এই সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেননি ড্যানি। ড্যানির পর অভিনেতা কবির বেদির প্রেমে পড়েছিলেন পারভিন, তবে সেই প্রেমও টেকেনি। কবির বেদির সঙ্গে ‘বিচ্ছেদে’ বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন ববি। এমনকি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তাঁর প্রেমের খবরও চাউর হয়েছিল সে সময়। পরিচালক মহেশ ভাটের সঙ্গে শেষমেশ প্রণয়ে জড়ান। ১৯৭৭ সালে বিবাহিত মহেশের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। মহেশ ও পারভিনের প্রেমকাহিনি বলিপাড়ার অন্যতম চর্চিত বিষয় ছিল। মহেশ সেটা বরাবরই স্বীকার করেছেন।
পারভিন ববি
ফেসবুক থেকে
হঠাৎ উধাও
১৯৮৩ সালে পারভিন বলিউড থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যান কাউকে কিছু না জানিয়ে। ফিরে আসেন ১৯৮৯ সালে। এর মধ্যে তাঁর শুটিং করা বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়।
ছুরি হাতে ঘরের এক কোনায়
প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া নামক মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। ব্যাপারটা মহেশ ভাট প্রথম টের পান যখন একদিন পারভিনের বাসায় গিয়ে দেখতে পান, তিনি ছুরি হাতে ঘরের এক কোনায় ভয়ে জড়সড় হয়ে আছেন। পারভিন তখন মহেশকে কথা বলতে নিষেধ করছিলেন। কারণ, পারভিনের ধারণা ছিল, কারা যেন তাঁকে খুন করার জন্য ওত পেতে আছে!
পারভিন ববি
ফেসবুক থেকে
অমিতাভ খুন করতে চান!
মানসিক সমস্যার কারণে নানা বিষয় কল্পনা করতেন পারভিন। ভাবতেন, অমিতাভ বচ্চন তাঁকে খুন করতে চান। পারভিন নাকি নিজের অজান্তে অমিতাভের ক্ষতি করেছিলেন, তাই। অথচ অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে ববির জুটি ছিল সুপারহিট। দর্শকেরা মজেছিলেন তাঁদের পর্দার রসায়নে। একসঙ্গে কাজ করেছেন ৮টির বেশি হিন্দি ছবিতে।
অমিতাভের সঙ্গে সিনেমার দৃশ্যে পারভিন
ভিডিও থেকে
চিকিৎসা চলছিল নায়িকার
অবশ্য তিনি দাবি করতেন, ইন্ডাস্ট্রি তাঁর ইমেজ নষ্ট করতে এই ধরনের ভুল খবর রটাচ্ছে। পারভিনের সুস্থতার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন মহেশ। চিকিৎসকেরা পারভিনকে বৈদ্যুতিক শক দিতে চাইলেও মহেশ তা করতে দেননি। ড্যানি ও কবির বেদির সাহায্য নিয়ে নানা হাসপাতালের অনেক চিকিৎসকের কাছে ধরনা দিয়েছেন। আশির দশকে যখন ‘দোস্তানা’ ছবির শুটিং চলছিল, ঠিক তখন সেই সময়ে বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসা চলছিল এ নায়িকার। তবে এই কথা কখনোই স্বীকার করেননি পারভিন নিজে।
খুন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
খুন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা পারভিনের মন থেকে উঠতে পারেনি কখনো। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে সাংবাদিকেরা তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে গেলে তাঁদের জোর করে পারভিনের জন্য আনা খাবার আর পানি খেয়ে দেখাতে হতো। তাঁর সন্দেহ ছিল, ওগুলোতে বিষ মেশানো। নিজের ব্যাধি স্বীকার করতে চাইতেন না তিনি। মানসিক রোগ নিরাময়ের জন্য কোনো ওষুধ খেতেন না। সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, যাঁরা তাঁকে মারতে চান, এগুলো তাঁদের ষড়যন্ত্র। মহেশ ভাট নিজে পারভিনের জন্য তৈরি ওষুধমাখা খাবার তাঁর প্রেমিকাকে খেয়ে দেখাতেন। যেন পারভিন তা খান।
মহেশ ভাটের সঙ্গে প্রেম ছিল ববির
ফেসবুক থেকে
মহেশ ভাটের প্রেম
১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত পারভিনের সঙ্গে ছিলেন মহেশ। পরে যখন বুঝতে পারলেন, তাঁদের সম্পর্কটা মরে গেছে তখন তিনিও পারভিনকে একা ছেড়ে দিলেন; কিন্তু প্রেম মহেশের মন থেকে মরেনি। নিজেদের ভালোবাসার গল্প নিয়ে নির্মাণ করেছেন আর্থ (১৯৮২) এবং ও লামহে (২০০৬)। মৃত্যুর পর মহেশই প্রথম এগিয়ে আসেন পারভিনের মরদেহ দাফন করার জন্য। অভিনেত্রীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মহেশের মন্তব্য, ‘ধন্যবাদ, পারভিন আমার জীবন স্পর্শ করার জন্য। তোমাকে ছাড়া কোথায় থাকতাম?’