ক্রিকেট নিয়ে সিনেমা, হিট নাকি ফ্লপ

ক্রিকেট আর সিনেমা; ভারতে নাকি এ দুটিই ধর্ম। তাই বারবার হিন্দি সিনেমায় ঘুরেফিরে এসেছে ক্রিকেট। কখনো ক্রিকেটারের বায়োপিক হয়েছে, কখনো আবার ক্রিকেটের মোড়কে বলা হয়েছে ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গল্প। কিন্তু হিন্দি সিনেমায় ক্রিকেট-যোগ আসলে কবে থেকে শুরু হয়েছে? ক্রিকেট নিয়ে সিনেমা বানালেই কি ব্যবসায়িক সাফল্য নিশ্চিত? ক্রিকেট আর বলিউডের যোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল–জাজিরা। সেখান থেকে ভাষান্তর করেছেন লতিফুল হক

বারবার হিন্দি সিনেমায় ঘুরেফিরে এসেছে ক্রিকেট। কোলাজ

প্রবীণ তাম্বে মুম্বাইয়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাঁর জীবনে স্বপ্ন ছিল একটাই, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা। তবে কোথাও তাঁর জায়গা হয় না। প্রবীণের বয়স বাড়তে থাকে, আশপাশের ছেলে–ছোকরারা তাঁকে ‘আঙ্কেল’ ডাকতে শুরু করে। প্রবীণের তাতে কিছু আসে–যায় না। নিজের স্বপ্নে তিনি ছিলেন অটল। অনেক পরে শুরু হয় ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ আইপিএল। দলে দলে লেগ স্পিনারের খোঁজ পড়ল। এবার ডাক পড়ল প্রবীণ তাম্বের। ২০১৩ সালে রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বাধীন রাজস্থান রয়্যালস যখন নিলাম থেকে প্রবীণ তাম্বেকে কিনে নিল, তাঁর বয়স তখন ৪১!

আরও পড়ুন

পরের বছর রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে মাঠে নেমে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেন, হন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। এত দিন পরে স্বপ্ন সত্যি হলো, আবেগে কাঁদতে কাঁদতে ড্রেসিংরুমে ফেরেন প্রবীণ। খবরের শিরোনাম হতে আর কী চাই, মুম্বাইয়ের ক্রিকেটপাড়ার আঙ্কেল রাতারাতি হয়ে উঠলেন পরিচিত মুখ।

‘কৌন প্রবীণ তাম্বে?’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

বলিউড সিনেমার খবর রাখলে পরের গল্পটা আপনার অনুমান করার কথা, জি, প্রবীণ তাম্বের বায়োপিকের কথা বলছি। ২০২২ সালে মুক্তি পায় ‘কৌন প্রবীণ তাম্বে?’ সিনেমাটি। এতে প্রবীণের চরিত্রের অভিনয় করেন শ্রেয়াস তলপড়ে।

এই সিনেমার যখন অডিশন দেন, শ্রেয়াসের ক্যারিয়ারে তখন মন্দা চলছে, প্রথম সারির নির্মাতারা আর তাঁকে ডাকেন না। ‘অডিশনের আগে অনেকেই বলেছিলেন, আমি এই চরিত্র করতে পারব কি না।’ আল–জাজিরাকে বলেন শ্রেয়াস।

শ্রেয়াস তলপড়ে। এএফপি ফাইল ছবি

এরপর চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলন শুরু করেন শ্রেয়াস। সিনেমায় ২০ থেকে ৪১ বছর পর্যন্ত প্রবীণের জীবন তুলে ধরা হয়েছে। অনেকেই জানেন, পর্দায় ক্রিকেটারের চরিত্র শ্রেয়াসের জন্য এই প্রথম নয়। ২০০৫ সালে বহুল প্রশংসিত হিন্দি সিনেমা ‘ইকবাল’-এও ক্রিকেটার হয়েছিলেন তিনি।
‘ইকবাল’ সিনেমায় গ্রামের মূক ও বধির এক বালকের চরিত্রে অভিনয় করেন শ্রেয়াস, যার স্বপ্ন ছিল ভারতের হয়ে খেলা। ‘প্রবীণ তাম্বেকে নিয়ে সিনেমার শুটিংয়ের আগে আমি কিছু বিষয় ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য আবার “ইকবাল” দেখি। এটা কেবল সিনেমার জন্য না, নিজেকে দেখার জন্যও দেখি; মনে মনে ভাবি, এবার আমি করতে পারব তো’, বলেন শ্রেয়াস।

‘ইকবাল’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

‘ইকবাল’-এর পর আবার পর্দায় ক্রিকেটার হন শ্রেয়াস। তুলে আনেন মধ্যবিত্ত পরিবারের এক তরুণের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। অনেক ভারতীয় খেলাকে জীবনের সঙ্গে মেলান। তাঁদের ভাষ্যে, ‘খেলা তো আদতে জীবনের একটা রূপক।’ প্রবীণ তাম্বেকে নিয়ে নির্মিত সিনেমায় সেটাই তুলে ধরা হয়েছিল। শ্রেয়াস জানান, অনেক মানুষ এখনো তাঁকে বলেন, তাঁরা প্রেরণা খুঁজতে এখনো দুই দশক আগে মুক্তি পাওয়া ‘ইকবাল’ দেখেন। অভিনেতা মনে করেন, ক্রিকেট ভারতে এতটাই জনপ্রিয় যে এই খেলার গল্প বলে অনেক মানুষকে প্রভাবিত করা সম্ভব।

ভারতে ক্রিকেটের গল্প তাই আসলে ভারতেরই গল্প, অথবা ‘ইকবাল’-এর গল্প। সেই ভারত, যেখানে অনেক ছেলেমেয়ে দারিদ্র্য, নানা ধরনের বৈষম্যের সঙ্গে লড়াই করছে; এর মধ্যেও দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলার স্বপ্নটা ছাড়েনি। বলিউড মানে ভারতের হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে বলা যায় দেশটির এক ‘জাদুর মেশিন’, যেখানে সাধারণ মানুষের জীবনের গল্প উঠে আসে। সেটা হতে পারে ক্রিকেট, হকি বা খেলার সঙ্গে সম্পর্কের গল্প।

নির্মাতা কবীর খান। ইনস্টাগ্রাম থেকে

‘ক্রিকেট আর সিনেমা আমাদের দেশে এ দুইটি ধর্ম।’ আল–জাজিরাকে বলেন হিন্দি সিনেমার নির্মাতা কবীর খান। যিনি বছর কয়েক আগেই ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দলকে নিয়ে ‘৮৩’ সিনেমা বানিয়েছেন। তবে কবীর খান মনে করেন, ভারতের জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রাখলে ক্রিকেট নিয়ে বলিউডের আরও বেশি কাজ হতে পারত।

বলিউডে ক্রিকেট
ক্রিকেটের সঙ্গে বলিউড সম্পর্কের শুরু ১৯৫০-এর দশকে, সাদা-কালো সিনেমা ‘লাভ ম্যারেজ’ দিয়ে। সেই সময়ে পেশাদার ক্রিকেট বলতে টেস্ট ক্রিকেটকেই বোঝাত, যেটা পাঁচ দিন ধরে খেলা হয়। তখনো ক্রিকেটাররা জনপ্রিয় ছিলেন; কিন্তু পর্দায় ধীরগতির টেস্ট ক্রিকেট তুলে আনা সহজ ছিল না।

২০০১ সালে মুক্তি পায় আশুতোষ গোয়াড়িকর পরিচালিত আমির খান অভিনীত সিনেমা ‘লগান: ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ইন্ডিয়া’। বক্স অফিসে দুর্দান্ত সাফল্য পাওয়া সিনেমাটি সেরা বিদেশি ভাষার সিনেমা হিসেবে অস্কারে মনোনীত হয়েছিল। ‘লগান’ অস্কার জেতেনি বটে; কিন্তু বলিউড আর ক্রিকেট–যোগ নিয়ে বহুল চর্চিত ধারণা ভেঙে দিয়েছিল। বলিউড সিনেমা ক্রিকেট নিয়ে লিখতে গেলে ‘লগান’ মুক্তির আগে ও পরে; স্পষ্টতই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

‘লাভ ম্যারেজ’ সিনেমাটি মূলত প্রেমের গল্প। তবে এতে ক্রিকেট–যোগ আছে ভালোভাবেই। পর্দার নায়ক যখন সেঞ্চুরি করেন, তখনই নায়িকা তাঁর প্রেমে পড়েন। এই সিনেমার পরে অনেক দিন রুপালি পর্দায় ক্রিকেট আসেনি। কিন্তু ১৯৭০-এর দশকে ভারতীয় দল যখন ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো শক্তিশালী দলকে হারাতে শুরু করল, অভিষেক টেস্ট সিরিজে যখন সুনীল গাভাস্কার ৭৭৪ রান করলেন; ক্রিকেট আর ক্রিকেটারদের নিয়ে হিন্দি সিনেমার পরিচালক–প্রযোজকেরা আগ্রহী হয়ে উঠলেন।

মারাঠি সিনেমা ‘আই লাভ ইউ’-তে পাওয়া গেল সুনীল গাভাস্কারকে, যেখানে তাঁকে নাচতে আর গাইতেও দেখা গেল। অন্যদিকে হিন্দি সিনেমা ‘চরিত্র’-তে হাজির হলেন আফগান বংশোদ্ভূত ভারতীয় অলরাউন্ডার সেলিম দুরানি। দুই সিনেমার কোনোটিই বক্স অফিসে তেমন ব্যবসা করেনি, তবে সিনেমার সঙ্গে ক্রিকেটারের মেলবন্ধ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

‘আওয়াল নাম্বার’ সিনেমার পোস্টার। আইএমডিবি

১৯৮০-এর দশকে ভারত প্রথমবার বিশ্বকাপ ক্রিকেট জেতে। বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ব্যাটসম্যান সন্দীপ পাতিলকে দেখা যায় ‘কাভি আজনবি থি’ সিনেমায়। এ সিনেমায় ছিলেন উইকেটরক্ষক সৈয়দ কিরমানিও।
আশির দশকেই ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে বলিউডে নানা ধরনের চিত্রনাট্য লেখা হয়। কোনো সিনেমায় উঠে আসে দুই ক্রিকেটারের দ্বন্দ্ব, কোনোটিতে যোগ করা হয় ভালোবাসার মেলোড্রামা। ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া তেমনই একটি সিনেমা ছিল ‘আওয়াল নাম্বার’। এতে আমির খান, দেব আনন্দের মতো তারকারা অভিনয় করেছিলেন। দেব সিনেমার পরিচালকও ছিলেন। ‘এসব সিনেমায় আসলে ক্রিকেট ছিল গৌণ। আমরা যখন বড় হচ্ছি তখনই বুঝে যাই বলিউড সিনেমায় আসলে ক্রিকেট-যোগ কাজ করবে না।’ বলেন এই সময়ের হিন্দি সিনেমার অন্যতম লেখক-নির্মাতা ভাসান বালা।
তবে বলিউডে ক্রিকেট সাফল্য পাবে না—বহুল চর্চিত এই ধারণা ভেঙে দেয় একটি সিনেমা।

‘লগান’ জাদু
২০০১ সালে মুক্তি পায় আশুতোষ গোয়াড়িকর পরিচালিত আমির খান অভিনীত সিনেমা ‘লগান: ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ইন্ডিয়া’। বক্স অফিসে দুর্দান্ত সাফল্য পাওয়া সিনেমাটি সেরা বিদেশি ভাষার সিনেমা হিসেবে অস্কারে মনোনীত হয়েছিল। ‘লগান’ অস্কার জেতেনি বটে; কিন্তু বলিউড আর ক্রিকেট–যোগ নিয়ে বহুল চর্চিত ধারণা ভেঙে দিয়েছিল। বলিউড সিনেমা ক্রিকেট নিয়ে লিখতে গেলে ‘লগান’ মুক্তির আগে ও পরে; স্পষ্টতই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

‘লগান’ সিনেমার পোস্টার। আইএমডিবি

১৮৯০-এর দশকের ব্রিটিশরাজের সময়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয় ‘লগান’। খরা ও করের দায়ে জর্জরিত এক গ্রামের গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমাটিতে কেবল ক্রিকেটই ছিল না, ছিল ঔপনিবেশিক শোষণ, জাতিবৈষম্যসহ নানা সামাজিক বিষয়। ১৯১১ সালে প্রথমবার পূর্ণাঙ্গ ভারতীয় দল ইংল্যান্ডে সফর করে, সেই সফরের গল্পের প্রেরণায় নির্মিত হয়েছিল সিনেমাটি।

‘লগান’ খুবই বুদ্ধিদীপ্ত নির্মাণ। মনে আছে, যখন সিনেমাটি দেখেছিলাম, পুরো সিনেমা হল যেন একটা স্টেডিয়ামে রূপান্তরিত হয়েছিল।
সৃজিত মুখার্জি

৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট দীর্ঘ সিনেমাটিতে অতি দরিদ্র গ্রামীবাসী একত্র হয়ে ক্রিকেট দল গঠন করে। এই দলে যেমন ছিল দলিত হিন্দু, শিখ, তেমনি ছিল মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষও। সবাই মিলে ব্রিটিশদের ক্রিকেটে চ্যালেঞ্জ করে, খেলায় জিতলেই আগামী দুই বছরের জন্য কর মওকুফ; কিন্তু হারলেই করের মাত্রা হবে তিন গুণ!
‘“লগান” খুবই বুদ্ধিদীপ্ত নির্মাণ। মনে আছে, যখন সিনেমাটি দেখেছিলাম, পুরো সিনেমা হল যেন একটা স্টেডিয়ামে রূপান্তরিত হয়েছিল।’ আল–জাজিরাকে বলেন নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি। এই বাঙালি নির্মাতা নিজেও ভারতীয় ক্রিকেটার মিতালি রাজকে নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন।

‘লগান’ এমন একটা সময়ে মুক্তি পায়, যখন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের ম্যাক্স ফিক্সিং নিয়ে প্রবল আলোচনা চলছে।
নির্মাতা ভাসান বলা বলেন, ‘“লগান”-এ দর্শকের রোমাঞ্চ আসলে ক্রিকেটের ওপর নির্ভর করেনি, বরং একটা খেলা গ্রামের মানুষের জীবন কীভাবে বদলে দেয়, সেটার ওপর নির্ভর করেছে।’

‘লগান’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

‘লগান’-এর ব্যাপক সাফল্য ক্রিকেট নিয়ে ভারতের নির্মাতাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। হিন্দি তো বটেই, দেশটির অনেক আঞ্চলিক ভাষায় ‘লগান’-এর মতো প্রচুর সিনেমা হয়; যেগুলোর বেশির ভাগই মনে রাখার মতো নয়। অল্প কয়েকটির কথা কেবল উল্লেখ করা যায়।

‘ইকবাল’-এর পর ক্রিকেট নিয়ে বলিউডে উল্লেখ করার মতো সিনেমা ‘এমএস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’। ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির বায়োপিকটি মুক্তি পায় ২০১৬ সালে।

‘এমএস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ সিনেমায় রণবীর সিং। আইএমডিবি

বলিউডের প্রথম সারির নির্মাতাদের একজন নীরজ পান্ডে এটি বানিয়েছিলেন। রেলওয়ের টিকিট চেকার থেকে শুরু করে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে ধোনির ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়ের গল্প উঠে আসে সিনেমায়। এতে ধোনির চরিত্রে অভিনয় করেন প্রয়াত বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত।
এরপরও নানাভাবে বলিউডে ক্রিকেট এসেছে, কেবল ‘৮৩’-এর কথাই কেবল উল্লেখ করার মতো।

৩৪ মিলিয়ন ডলারের ক্রিকেট সিনেমা
‘স্পোর্টস নিয়ে সিনেমা তখনই ভালো, যখন সেখানে খাদের কিনার থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প তুলে আনা হয়।’ বলেন ‘৮৩’ সিনেমার নির্মাতা কবীর খান। তিনি আরও বলেন, ‘৮৩’ সিনেমা হিসেবে রোমাঞ্চকর, কারণ ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে আন্ডারডগ হিসেবে খেলতে গিয়ে ভারত শিরোপা জেতে। এর পর থেকে এ ধরনের গল্প তৈরি হওয়া কঠিন। কারণ, ১৯৮৩ সালের পর থেকে ভারত তো আর আন্ডারডগ ছিল না। ধীরে ধীরে ক্রিকেটের পরাশক্তি হয়ে উঠেছে।

‘৮৩’ সিনেমায় রণবীর সিং। আইএমডিবি

১৯৮৩-এর বিশ্বকাপে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন কপিল দেব। ছবিতে কপিলের চরিত্রে অভিনয় করেন রণবীর সিং। ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমায় তাঁর লুক দেখে অনেকেই চমকে গিয়েছিলেন। কারণ, পর্দায় রণবীরকে দেখতে ঠিক কপিলের মতোই লাগছিল। একই কথা প্রযোজ্য সিনেমার অন্য অভিনয়শিল্পীদের ক্ষেত্রেও।
‘ভারত এমন একটা দেশ, যেখানে “স্বশিক্ষিত” অনেক ক্রিকেট পণ্ডিত আছেন, যাঁরা তো পারলে ব্যাটিং নিয়ে শচীন টেন্ডুলকারকেও টিপস দেন। আমার লক্ষ্য ছিল সিনেমা দেখে কেউ যেন বলতে না পারেন, একে বাস্তবের খেলোয়াড়দের মতো লাগছে না।’ বলেন কবীর খান।

সিনেমাটি নির্মাণের আগে কবীর খানের টিম দুই বছর ধরে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ আর খেলোয়াড়দের নিয়ে গবেষণা করেন। কেন্টে বিশ্বকাপের এক ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অপরাজিত ১৭৫ রান করেছিলেন কপিল দেব। কিন্তু ম্যাচটির কোনো ফুটেজ নেই। তাই সিনেমায় ব্যবহারের জন্য নতুন করে সেই ম্যাচের শুটিং করা হয়।

ক্রিকেট অনুশীলন ছাড়াও রণবীর দুই সপ্তাহ কাটান কপিল দেবের সঙ্গে। ইনস্টাগ্রাম থেকে

সিনেমার জন্য অভিনয়শিল্পীরা মাসের পর মাস প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কপিল দেব চরিত্রে অভিনয় করেন শীর্ষ বলিউড তারকা রণবীর সিং। তিনিও শুটিংয়ের আগে কঠোর পরিশ্রম করেন। খেলোয়াড় হতে ক্রিকেট অনুশীলন ছাড়াও তিনি দুই সপ্তাহ কাটান কপিল দেবের সঙ্গে। এই সময়ে তিনি কপিলের মতো হাঁটাচলা, কথা বলা রপ্ত করার চেষ্টা করেন।

৩৪ মিলিয়ন ডলার বাজেটে নির্মিত ‘৮৩’ অন্যতম ব্যয়বহুল হিন্দি সিনেমা। মুক্তির পর সমালোচকেরা সিনেমাটির প্রশংসা করেন। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুক্তির মাত্র চার দিনের মাথায় কোভিডের কারণে প্রদর্শনী বদ্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বক্স অফিসে ফ্লপ হয় ‘৮৩’।

বক্স অফিসে ফ্লপ হলেও ক্রিকেট নিয়ে পর্দায় গল্প বলার ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ড তৈরি করে দেয় ‘৮৩’।
এই সিনেমার পর বলিউডে ক্রিকেট নিয়ে নির্মিত সৃজিত মুখার্জির ‘শাবাশ মিঠু’ মুক্তি পায়। ছোট শহর থেকে উঠে এসেছে ভারতীয় নারী ক্রিকেট দলকে নেতৃত্ব দেওয়া মিতালি রাজের জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত হয় সিনেমাটি। ‘২০১৭ সালের নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ভারত হারলেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ আর নানা বৈষম্যের বিরুদ্ধে তারা জয়ী হয়। যা পুরো একটি প্রজন্মকে খেলায় আগ্রহী করে।’ আল–জাজিরাকে বলেন সৃজিত।

‘শাবাশ মিঠু’ সিনেমায় তাপসী পান্নু। আইএমডিবি

তবে সিনেমাটি বক্স অফিসে ফ্লপ হয়। এটাসহ ক্রিকেট নিয়ে নির্মিত আরও কয়েকটি সিনেমা ফ্লপ। বলিউডে ক্রিকেট চলে না—‘লগান’ মুক্তির আগে যে ধারণা ছিল, সেটা ধীরে ধীরে আবার ফিরে আসে।