ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছিলেন এ বলিউড তারকা
বেশ কয়েক বছর আগের কথা। বলিউড তারকা স্বরা ভাস্কর ভারতীয় গণমাধ্যম পিঙ্কভিলার ইউটিউব চ্যানেলে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘আপনার আলমারির সবচেয়ে পুরোনো পোশাক কোনটি?’ উত্তরটি এই নায়িকার বাংলাদেশি ভক্তদের জন্য চমকে দেওয়ার মতো। কারণ, স্বরার সংগ্রহে থাকা সবচেয়ে পুরোনো পোশাকটি ঢাকা থেকে কেনা।
স্বরার বাবা ছিলেন ভারতের নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা। কাজের সুবাদে বা অন্য কোনো কারণে তিনি একবার ঢাকায় এসেছিলেন। সেটি ১৫ বছর আগের কথা। ঢাকা থেকে একমাত্র মেয়ে স্বরার জন্য একটি গঙ্গা–যমুনা পাড়ের শাড়ি কিনে নিয়ে যান। স্বরার বয়স তখন মাত্র ১৫। যদিও তিনি বলতে পারেন না, এটি মসলিন শাড়ি নাকি তাঁতের।
আজ হঠাৎ করে স্বরা ভাস্করকে নিয়ে আলোচনার অন্য আরেকটি কারণ আছে। এ অভিনেত্রীর আজ জন্মদিন। মিরান্ডা হাউস থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করার সময় থেকেই বলিউডে তাঁর যাত্রা শুরু। ২০১০ সালে ‘গুজারিশ’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রেখেছিলেন স্বরা।
তবে ২০১২ সালে ‘তনু ওয়েডস মনু’ সিনেমার মধ্য দিয়ে দর্শক তাঁকে চিনেছেন। এরপর ‘রানঝানা’, ‘নীল বাত্তে সন্নাটা’, ‘বীরে ডি ওয়েডিং’-এর মতো ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। বললে বাড়াবাড়ি হবে না, বলিউডের মেধাবী অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন স্বরা ভাস্কর। গ্ল্যামার নয়, বরং বিটাউনে নিজের অভিনয়ের দক্ষতা দিয়ে ধীরে ধীরে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন এ মেধাবী অভিনেত্রী। হৃদয়স্পর্শী, সংবেদনশীল অভিনয়ের জন্য দর্শক ও সমালোচক—দুই পক্ষেরই প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
সাধারণত বিতর্কিত মন্তব্য করে নেট–দুনিয়ায় সাড়া ফেলে দেন স্বরা। স্পষ্ট কথা বলে অনেকেরই চক্ষুশূল তিনি। কিছুদিন আগে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসন নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন স্বরা। শুধু তা-ই নয়, প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেবার বিতর্কিত বলিউড তারকা কঙ্গনা রনৌত ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ইসরায়েলের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
সে বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরা লিখেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের সীমাহীন নৃশংসতা, জোর করে তাদের বাড়িঘর দখল করা, জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে দেওয়া, ইসরায়েলিদের ধর্মান্ধতা ও সহিংসতা, ফিলিস্তিনের শিশু-কিশোরদের হত্যা করা, কয়েক দশক ধরে গাজায় অবরোধ ও ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ, বোমা ফেলে গাজার বেসামরিক মানুষ, স্কুল ও হাসপাতাল উড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও যদি আপনাকে না নাড়া দেয়, তাহলে ইসরায়েলের ওপর এই হামাসের আক্রমণে আপনার মর্মাহত হওয়ার বিষয়টা আমার ভণ্ডামি বলেই মনে হচ্ছে।’ এ মন্তব্যের জেরে নেটিজেনদের একাংশ তাঁর ওপর ক্ষেপে যান। প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয় তাঁকে।
এভাবে বলিউড–দুনিয়ায় তির্যক মন্তব্য করে সাড়া ফেলে দেন স্বরা, থাকেন আলোচনায়। স্পষ্ট কথা বলে অনেকেরই চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন তিনি। তবে কাজ দিয়ে খবরে উঠে এসেছেন তিনি। আজ জন্মদিনে বরং তাঁর কাজ নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হোক। জন্মদিনের এই বিশেষ দিনে ফিরে দেখা যাক তাঁর ক্যারিয়ারের কিছু উল্লেখযোগ্য ছবি।
‘নীল বাত্তে সন্নাটা’
একজন মায়ের চরিত্রে চন্দা হিসেবে স্বরার অভিনয় দর্শকের মনে গেঁথে গেছে। অশ্বিনী আইয়ার তিওয়ারি পরিচালিত এই ছবিতে সাধারণ অথচ সংগ্রামী এক মায়ের স্বপ্ন দেখার অধিকারকে সামনে এনেছেন স্বরা। এই ছবির জন্য তিনি সেরা অভিনেত্রীর স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডও জেতেন। ছবিতে আরও ছিলেন রত্না পাঠক শাহ।
‘আনারকলি আব আরাহ’
অভিনাশ দাস পরিচালিত এই ছবিতে একজন লোকগানের শিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেন স্বরা। এক চাপে পড়া নারীর প্রতিবাদ ও আত্মসম্মানের লড়াইকে তুলে ধরেছেন তিনি অসাধারণ দক্ষতায়। ক্লাইমেক্স দৃশ্যে তাঁর সংযত কিন্তু দৃঢ় উপস্থিতি দর্শককে মুগ্ধ করে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সঞ্জয় মিশ্র ও পঙ্কজ ত্রিপাঠীর মতো অভিজ্ঞ অভিনেতারাও।
‘রানঝানা’
আনন্দ এল রাই পরিচালিত এই ছবিতে স্বরা অভিনয় করেন বিন্দিয়ার চরিত্রে—যে ছোটবেলা থেকেই কুন্দনকে (অভিনয়ে ধনুশ) ভালোবাসে। ভরপুর আবেগ আর অপূর্ণ প্রেমের টানাপোড়েনের ছায়া পড়ে এই চরিত্রে, যা দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন স্বরা। ছবিতে আরও ছিলেন সোনম কাপুর, অভয় দেওল ও জিশান আয়ুব।
‘বীরে ডি ওয়েডিং’
এই ছবি বলিউডের অন্যতম সফল গার্ল-বাডি ফিল্ম। রিয়া কাপুর প্রযোজিত এই কমেডি ছবিতে স্বরা ‘সাক্ষী’ চরিত্রে অভিনয় করেন, যে নিজের বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে এসে নতুন করে বাঁচার সাহস দেখায়। ক্যারিশম্যাটিক ও মুক্তচিন্তার সাক্ষী চরিত্রে স্বরার অভিনয় ছবির অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে।
‘তনু ওয়েডস মনু’
আনন্দ এল রাই পরিচালিত এই রোমান্টিক কমেডিতে স্বরা ছিলেন তনুর (কঙ্গনা রনৌত) ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ‘পায়েল’-এর ভূমিকায়। চরিত্রটি সাধারণ ‘নায়িকার বান্ধবী’ রোলের বাইরে গিয়ে আরও বাস্তব ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফুটে ওঠে স্বরার অভিনয়ে। তাঁর মুখে ছিল পুরবিয়ান টান এবং সোজাসাপটা কথাবার্তা—যা চরিত্রকে আলাদা করে তোলে।