পাপিয়া, সাদি, শাফিনদের হারানোর বছর
বিনোদন অঙ্গন এ বছরে অনেককেই হারিয়েছে। কারও হঠাৎ মৃত্যু হতবাক করেছে ভক্তদের। আবার কেউ মারা গেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। কারও অপমৃত্যু। তাঁদের জীবনযাত্রা শেষ হলেও ভক্ত–শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন কাজ দিয়ে। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন নাটক, নৃত্য ও সংগীতে থেকে যাবে তাঁদের অসামান্য অবদান। একনজরে দেখে নেওয়া যাক, কাদের শারীরিক প্রস্থান হয়েছে এ বছরে।
জাহিদুল হক, ১৫ জানুয়ারি
জনপ্রিয় গান ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’–এর গীতিকবি, কবি ও সাংবাদিক জাহিদুল হক ১৫ জানুয়ারি মারা যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর মাসখানেক আগে স্ট্রোক (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) করলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আগে থেকেই জাহিদুল হকের হৃদ্যন্ত্রে জটিলতা ছিল। শেখ সাদী খানের সুরে জাহিদুল হকের লেখা ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী সুবীর নন্দী। এ ছাড়া ‘কথা দাও, কথাগুলো ফেরত দেবে না’, ‘স্বাধীনতা তুমি আমার বাড়িতে এসো’, ‘স্বপ্ন আমার কাজল পুকুর তুমি’, ‘যে দেশে বাতাস স্মৃতির স্পর্শে ভারী’, ‘কত দিন পরে দেখা, ভালো আছ তো’সহ বহু গান লিখেছেন ষাটের দশকের এই গীতিকবি। ১৯৪৯ সালের ১১ আগস্ট ভারতের আসামের বদরপুরে জাহিদুল হকের জন্ম। তাঁর চিকিৎসক বাবা তখন সেখানে রেলওয়ে হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তাঁদের বাড়ি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের আকদিয়া গ্রামে।
আহমেদ রুবেল, ৭ ফেব্রুয়ারি
বছরের শুরুতে অভিনেতা আহমেদ রুবেলের মৃত্যু সবচেয়ে বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। ঢাকার একটি মাল্টিপ্লেক্সে নুরুল আলম আতিকের নতুন সিনেমা ‘পেয়ারার সুবাস’র একটি বিশেষ প্রদর্শনী ছিল। সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আহমেদ রুবেল। এই প্রদর্শনীতেই যোগ দিতে আসছিলেন অভিনেতা। গাড়ি থেকে নামার সময়েই পড়ে যান। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর। আহমেদ রাজিব রুবেল ওরফে আহমেদ রুবেল ১৯৬৮ সালের ৩ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রাজারামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আয়েশ উদ্দিন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ইসলামপুর মহল্লায় তাঁর মাতুলালয় (নানির বাড়ি)। মা–বাবার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে হলেও ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছেন ঢাকা শহরে, বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার গাজীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন। সেলিম আল দীনের ‘ঢাকা থিয়েটার’ থেকে আহমেদ রুবেলের অভিনয়ের হাতেখড়ি। আহমেদ রুবেল অভিনীত প্রথম নাটক গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নযাত্রা’। এরপর তিনি হুমায়ূন আহমেদের ঈদনাটক ‘পোকা’–তে অভিনয় করেন, যেখানে তাঁর অভিনীত ‘ঘোড়া মজিদ’ চরিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। মঞ্চ ও ছোট পর্দার অভিনেতা আহমেদ রুবেল ১৯৯৩ সালে ‘আখেরী হামলা’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় (চলচ্চিত্রে) পা রাখেন। পরে তিনি অভিনয় করেছেন ‘চন্দ্রকথা’, ‘ব্যাচেলর’, ‘গেরিলা’,‘দ্য লাস্ট ঠাকুর’ সিনেমায়।
সাদি মহম্মদ, ১৩ মার্চ
বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় মারা যান। এদিন সন্ধ্যার পর সাদি মহমম্মদের ভাই নৃত্যশিল্পী শিবলি মহম্মদ হঠাৎ ঘরের দরজা বন্ধ দেখেন। কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাদি মহম্মদের জন্ম ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর। বাবা সলিমউল্লাহ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। তাঁর বাবার নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়েছে। সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসংগীতের ওপর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্বভারতীতে শান্তিদেব ঘোষ ও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গান শেখেন তিনি। ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে সাদি মহম্মদ সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তাঁর ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তাঁর ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। অসংখ্য রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কণ্ঠে। সঙ্গে আধুনিক গানও করেছেন তিনি। সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১২ সালে তাঁকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করে চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি থেকে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার।
খালিদ, ১৮ মার্চ
আশি ও নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, ‘চাইম’ ব্যান্ডের ভোকালিস্ট খালিদ মারা যান ৫৮ বছর বয়সে। ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ‘সরলতার প্রতিমা’, ‘যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে’, ‘কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাঁকে’, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে’,—এর মতো জনপ্রিয় গানের এই শিল্পী। কয়েক বছর ধরেই হৃদ্রোগে ভুগছিলেন খালিদ; একাধিকবার হৃদ্রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। তাঁর হৃদ্যন্ত্রে একটি স্টেন্ট বসানো ছিল। ১৯৬৫ সালের ১ আগস্ট গোপালগঞ্জে জন্ম নেন এই শিল্পী। ১৯৮১ সাল থেকে গানের জগতে যাত্রা করেন। ১৯৮৩ সাল থেকে ‘চাইম’ ব্যান্ডে যোগ দেন। একের পর এক হিট গান উপহার দিয়ে অল্প সময়েই খ্যাতি পান খালিদ, তাঁর গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
পাগল হাসান, ১৮ এপ্রিল
সুনামগঞ্জের ছাতক পৌর শহরের সুরমা সেতুর কাছে বাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে সংগীতশিল্পী মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসান মারা যান। পাগল হাসানের বাড়ি ছাতক উপজেলার শিমুলতলা গ্রামে। শিল্পী পাগল হাসানের ‘আসমানে যাইও নারে বন্ধু...’, ‘জীবনখাতায় প্রেম কলঙ্ক...’, ‘মন আমার মরা নদী...’, ‘মাটির বালাখান...’ এমন বেশ কিছু জনপ্রিয় গান আছে। তিনি শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
সুনেত্রা, ২০ এপ্রিল
সোনালি দিনের সাড়াজাগানো চিত্রনায়িকা সুনেত্রা ২০ এপ্রিল মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। আশি-নব্বইয়ের দশকে বড় পর্দায় ঝড় তুলতেন মায়াবী চোখের সুনয়না সুনেত্রা। সুপারহিট বহু সিনেমার নায়িকা তিনি। সুনেত্রা মূলত ওপার বাংলার অভিনেত্রী। যদিও ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৭০ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন সুনেত্রা। তাঁর মূল নাম রীনা সুনেত্রা কুমার। থিয়েটারের মাধ্যমেই অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর। সুনেত্রাকে ঢাকাই সিনেমায় নিয়ে আসেন বাংলাদেশের পরিচালক মমতাজ আলী। প্রথম দেখা যায় ১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘উসিলা’ সিনেমাতে। কিন্তু ১৯৯০ সালে দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘পালকি’ ছবির মাধ্যমেই প্রথম জনপ্রিয়তা এবং দর্শকমহলে পরিচিতি পান সুনেত্রা। এ ছাড়া সমকালীন জনপ্রিয় অভিনেতা চিত্রনায়ক জসীম, সোহেল রানা, ফারুক, জাফর ইকবাল, ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্নাসহ আরও অনেকের সঙ্গেই পর্দা ভাগ করেছেন গুণী এই অভিনেত্রী। তাঁর দর্শকপ্রিয় সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘বোনের মতো বোন’, ‘যোগাযোগ’, ‘ভুল বিচার’, ‘সাজানো বাগান’, ‘রাজামিস্ত্রি’, ‘ঘর ভাঙ্গা ঘর’, ‘কুঁচবরণ কন্যা মেঘবরণ কেশ’, ‘শুকতারা’, ‘সুখের স্বপ্ন’, ‘রাজা জনি’, ‘বাদশা ভাই’, ‘ছোবল’, ‘ভাই আমার ভাই’, ‘দুঃখিনী মা’, ‘বন্ধু আমার’, ‘বিধান’, ‘নাচে নাগিন’, ‘সর্পরাণী’, ‘বিক্রম’, ‘উসিলা’, ‘লায়লা আমার লায়লা’, ‘শিমুল পারুল’, ‘ভাবীর সংসার’, ‘আমার সংসার’, ‘ধনরত্ন’, ‘নির্দয়’, ‘উচিত শিক্ষা’, ‘ঘরের সুখ’, ‘সাধনা’ ও ‘আলাল দুলাল’।
অলিউল হক রুমি, ২২ এপ্রিল
মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকের অভিনয়শিল্পী অলিউল হক রুমী ২২ এপ্রিল মারা যান। মৃত্যুর মাসখানেক আগে হঠাৎ করেই তাঁর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর ভারতে চিকিৎসা নিতে যান। সেখানে থেকে দেশে ফিরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তবে সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। অভিনয়ে তিন দশকের বেশি সময় পার করেছেন রুমি। দীর্ঘ এ পথচলায় অভিনয় করেছেন অসংখ্য নাটক ও সিনেমায়। অভিনয়নৈপুণ্য দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করে গেছেন। পর্দায় তাঁর উপস্থিতি বাড়তি আনন্দ দিয়েছে দর্শকদের। ১৯৮৮ সালে রুমির অভিনয়ের শুরু থিয়েটার বেইলি রোডের ‘এখনো ক্রীতদাস’ নাটকের মধ্য দিয়ে। একই বছর ‘কোন কাননের ফুল’ নাটকের মাধ্যমে ছোট পর্দায় অভিষেক হয় তাঁর। টেলিভিশনের পাশাপাশি অভিনয় করেছেন সিনেমায়ও। ২০০৯ সালে ‘দরিয়াপাড়ের দৌলতি’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন রুমি।
সীমানা, ৪ জুন
দীর্ঘ লড়াই শেষে ৩৯ বছর বয়সে ৪ জুন মারা যান অভিনেত্রী সীমানা। হাসপাতালে ১৪ দিনের লড়াইয়ের পর চলে গেলেন অভিনেত্রী ও মডেল রিশতা লাবণী সীমানা। মৃত্যুর আগে তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য একাধিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শুরুর দিকে তাঁকে আইসিইউতে রাখা হলেও পরে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে সীমানা চলে যান না–ফেরার দেশে। সীমানা ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে কাজ শুরু করেন। ‘দারুচিনি দ্বীপ’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসিত হন তিনি। পরে নাটকেও অভিনয় শুরু করেন।
মনির হোসেন জীবন, ২৭ জুন
বছরের ২৭ জুন নাট্য নির্মাতা ও প্রযোজক মনির হোসেন জীবন মারা যান। মনির হোসেন ১৯৬৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার কুতুবদী (বড়বাড়ি) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ আজিজ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মনির হোসেন আশির দশকে নরসিংদী জেলায় এবং সার্ভিসেস দল বাংলাদেশ আনসারের খেলোয়াড় ছিলেন। পাশাপাশি বিনোদন চর্চা করতেন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর মাধ্যমে। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় বাংলাদেশ থিয়েটারের মাধ্যমে মঞ্চনাটকে জড়িত হন। ১৯৯০ সালে চাচা চলচ্চিত্র পরিচালক বদিউল আলম খোকনের হাত ধরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন মনির হোসেন। বিটিভির প্রথম প্যাকেজ ধারাবাহিক মামুনুর রশীদের ‘শিল্পী’ এবং হুমায়ূন আহমেদের ‘নক্ষত্রের রাত’ নাটকের প্রধান সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন তিনি। তাঁর কাজ ও মেধার দক্ষতা দেখে হুমায়ূন আহমেদ তাঁকে নুহাশ চলচ্চিত্রের প্রধান সহকারী পরিচালক হিসেবে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেন। ২০০০ সাল থেকে মনির হোসেন তাঁর নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ‘স্বাধীন চলচ্চিত্র’ গঠন করেন। নিজের প্রযোজনা সংস্থা থেকে তিনি অসংখ্য একক নাটক নির্মাণ করেন। ‘শাদা কাগজ’, ‘বন্যার চোখে জল’, ‘অপ্রত্যাশিত প্রত্যাশা’, ‘অতঃপর নিঃসঙ্গতা’, ‘একজন ময়না’, ‘গানম্যান’, ‘বিবাহ সংকট’, ‘কোরবান আলীর কোরবানী’সহ শতাধিক নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি। আলোচিত ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘আজ রবিবার’, ‘চোর কাঁটা’, ‘আলী বাবা চল্লিশ স্মাগলার’, ‘অভিমানী’, ‘ফৈজু কবিরাজ’, ‘সেই করেছো ভাল’, ‘নীল ছায়া’, ‘খণ্ডচিত্র’, ‘গুজব’, ‘ভবের মানুষ’, ‘ফটিক চোর না সবাই’। এ ছাড়া ‘গুণিন’, ‘আগন্তুক’, ‘থানার নাম শনির আখড়া’সহ অসংখ্য ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি।
শাফিন আহমেদ, ২৫ জুলাই
৬৩ বছর বয়সে জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ গত ২৫ জুলাই মারা যান। মৃত্যুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শাফিন আহমেদ স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন। শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। মা কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ফিরোজা বেগম এবং বাবা সংগীতজ্ঞ কমল দাশগুপ্ত। এই পরিবারে জন্ম নেওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই শাফিন আহমেদ গানের ভেতরেই বড় হন। শৈশবে বাবার কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত শিখেছেন আর মায়ের কাছে শিখেছেন নজরুলসংগীত। এরপর বড় ভাই হামিন আহমেদসহ যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার সুবাদে পাশ্চাত্য সংগীতের সংস্পর্শে এসে ব্যান্ডসংগীত শুরু করেন। দেশে ফিরে গড়ে তোলেন মাইলস, যা দেশের শীর্ষ ব্যান্ডের একটি এখনো। এই ব্যান্ডের ৯০ ভাগ গান শাফিন আহমেদের কণ্ঠে সৃষ্টি হয়েছে। পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। তিনি কণ্ঠের পাশাপাশি ব্যান্ডটির বেজ গিটারও বাজাতেন। শাফিন আহমেদের গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে ‘আজ জন্মদিন তোমার’ ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘জ্বালা জ্বালা অন্তরে’, ‘ফিরিয়ে দাও হারানো প্রেম’, ‘ফিরে এলে না’, ‘হ্যালো ঢাকা’, ‘জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় লাইন’ প্রভৃতি।
হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল, ৩০ জুলাই
১৩ বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ৩০ জুলাই মারা যান সংগীতশিল্পী ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাতা হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। তাঁর জন্ম ১৯৬৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। তিনি স্ত্রী ও এক কন্যাসন্তান রেখে গেছেন। ব্যান্ডসংগীত যখন তুমুল আলোচনায়, ঠিক তখনই ব্যতিক্রমী কণ্ঠ নিয়ে হাজির হন শিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। ব্যাংকার বাবার চাকরির কারণে ছোটবেলায় তাঁকে থাকতে হয়েছিল দেশের বিভিন্ন জায়গায়। মা–বাবার অনুপ্রেরণাতেই গানের জগতে পা রাখেন জুয়েল। প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রতিবেশী একজনের কাছে গান শিখেছিলেন আর মঞ্চে প্রথম গান করেছিলেন তখন তিনি পড়েন চতুর্থ শ্রেণিতে। ১৯৮৬ সালে ঢাকায় চলে আসেন জুয়েল। এসেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি–কেন্দ্রিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েন। তখনই বিভিন্ন মিডিয়ার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঘটতে শুরু করে। জুয়েলের প্রথম অ্যালবাম ‘কুয়াশা প্রহর’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘এক বিকেলে (১৯৯৪)’, ‘আমার আছে অন্ধকার’ (১৯৯৫), ‘একটা মানুষ’ (১৯৯৬), ‘দেখা হবে না’ (১৯৯৭), ‘বেশি কিছু নয়’ (১৯৯৮), ‘বেদনা শুধুই বেদনা’ (১৯৯৯), ‘ফিরতি পথে’ (২০০৩), ‘দরজা খোলা বাড়ি’ (২০০৯) এবং ‘এমন কেন হলো’ (২০১৭)।
জামালউদ্দিন হোসেন, ১১ অক্টোবর
৮১ বছর বয়সে কানাডায় মারা যান টেলিভিশন ও মঞ্চনাটকের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী জামালউদ্দিন হোসেন। দেশটিতে তাঁর মরদেহ সমাহিত করা হয়। মৃত্যুর আগে তিন সপ্তাহ ধরে কানাডার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন জামালউদ্দিন। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন জামালউদ্দিন হোসেন। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের এই সদস্য পরে টেলিভিশন নাটক এবং চলচ্চিত্রেও কাজ করেন। জামালউদ্দিন হোসেন ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি তাঁর নিজের নাট্যগোষ্ঠী নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল শুরু করেন এবং এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বেতার টেলিভিশন শিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জামালউদ্দিন হোসেন ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘রাজা রানী’, ‘চাঁদ বণিকের পালা’, ‘আমি নই’, ‘বিবি সাহেব’, ‘যুগলবন্দী’সহ কয়েকটি আলোচিত মঞ্চনাটক পরিচালনা করেছেন।
সুজেয় শ্যাম, ১৭ অক্টোবর
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী সুজেয় শ্যাম ১৭ অক্টোবর মারা যান। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৭৮ বছর বয়সী সুজেয় শ্যাম দীর্ঘদিন ধরেই ক্যানসারে ভুগছিলেন। তাঁর হৃদ্যন্ত্রে ‘পেসমেকার’ বসানো হয়। পরে প্রবীণ এই শিল্পীর শরীরের ভেতরে সংক্রমণ হয়। সংক্রমণ পরে রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া ডায়াবেটিসও ছিল অনিয়ন্ত্রিত। কিডনির সমস্যাও ছিল। সুজেয় শ্যামের সুর করা গানগুলোর মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয় রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘শোন রে তোরা শোন’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানটির সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। গীতিকার শহীদুল আমিনের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে একুশে পদক এবং এর আগে ২০১৫ সালে পান শিল্পকলা পদক। সুজেয় শ্যাম ১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা অমরেন্দ্র চন্দ্র শাহ ছিলেন ‘ইন্দ্রেশর-টি’ নামের একটি চা–বাগানের মালিক। তাঁর শৈশব কেটেছে সিলেটের চা–বাগানে। ১০ ভাই–বোনের মধ্যে সুজেয় ছিলেন ষষ্ঠ।
মনি কিশোর, ২০ অক্টোবর
কবে মারা গেছেন, তা নিশ্চিত হতে না পারলেও ২০ অক্টোবর বাসার দরজা ভেঙে মরদেহ উদ্ধার করা হয় মনি কিশোরের। রামপুরার বাসা থেকে উদ্ধার করা মরদেহ প্রসঙ্গে পুলিশের ধারণা ছিল, চার থেকে পাঁচ দিন আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। জনপ্রিয় এই গায়কের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করা যায়নি। মনি কিশোর পাঁচ শতাধিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। রেডিও–টিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হলেও গান গেয়েছেন অল্প। সিনেমায়ও তেমন গাননি। মূলত, অডিওতে চুটিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে ‘কী ছিলে আমার’, ‘সেই দুটি চোখ কোথায় তোমার’, ‘তুমি শুধু আমারই জন্য’, ‘মুখে বলো ভালোবাসি’, ‘আমি মরে গেলে জানি তুমি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাঁর সবচেয়ে শ্রোতাপ্রিয় গান ‘কী ছিলে আমার’ তাঁরই সুর করা, তাঁরই লেখা।
মাসুদ আলী খান, ১ নভেম্বর
১ নভেম্বর ৯৫ বছর বয়সে মারা যান বরেণ্য অভিনেতা মাসুদ আলী খান। মৃত্যুর আগে বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন এই বয়োজ্যেষ্ঠ শিল্পী। চিকিৎসার জন্য কয়েকবার নেওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চলছিল। মঞ্চে অভিনয় দিয়ে শুরু মাসুদ আলী খানের। ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র চালু হওয়ার পর ছোট পর্দায় অভিষেক। চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও নজর কেড়েছেন। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে প্রায় ৫০০ নাটকে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে হয়ে উঠেছেন বাংলা নাটকের চেনা মুখ। মাসুদ আলী খানের জন্ম ১৯২৯ সালে ৬ অক্টোবর মানিকগঞ্জের পারিল নওধা গ্রামে। বাবা আরশাদ আলী খান ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। মা সিতারা খাতুন। মাসুদ আলী খান ১৯৫২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। দুই বছর পর জগন্নাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপিত হওয়ার পরপর নূরুল মোমেনের নাটক ‘ভাই ভাই সবাই’ দিয়ে ছোট পর্দায় মাসুদ আলী খানের অভিষেক হয়। আর সাদেক খানের ‘নদী ও নারী’ দিয়ে বড় পর্দায় তাঁর পথচলা শুরু।
আবু জাফর, ৫ ডিসেম্বর
‘এই পদ্মা এই মেঘনা’, ‘তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকাদির নাম…..’, ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’সহ অসংখ্য কালজয়ী গানের গীতিকার, সুরকার আবু জাফর ৫ ডিসেম্বর মারা যান। রাজশাহী-ঢাকা বেতার এবং টেলিভিশনের নিয়মিত সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ছিলেন আবু জাফর। তাঁর রচিত দেশাত্মবোধক ও আধুনিক গানগুলো তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ আবু জাফরের সৃষ্টি—এই গান তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল অনন্য উচ্চতায়। গানটি বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি গানের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল। পাশাপাশি ‘তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকাদির নাম’, ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’, ‘আমি হেলেন কিংবা নুরজাহানকে দেখিনি’, ‘তুমি রাত আমি রাতজাগা পাখি’—গানগুলো এখনো তাঁর সময়ের শ্রোতাদের কাছে জড়িয়ে রেখেছে প্রেম-বিরহের নানা স্মৃতি। নিজের রচিত সব গানের বাণীতে অসামান্য সুর সংযোজনও করেন আবু জাফর। শুধু তা–ই নয়, নিজের রচিত ও সুর সংযোজিত অধিকাংশ গানে কণ্ঠও দিয়েছেন তিনি।
পাপিয়া সারোয়ার, ১২ ডিসেম্বর
কয়েক বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার। সর্বশেষ ঢাকার তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি, চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে মারা যান গুণী এই শিল্পী। ৭২ বছর বয়সী এই শিল্পী স্বামী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন। বড় মেয়ে জারা সারোয়ার কলেজ অব নিউ জার্সিতে জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক এবং ছোট মেয়ে জিশা সারোয়ার কানাডার অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন নির্বাহী। পাপিয়া সারোয়ারের জন্ম বরিশালে, ১৯৫২ সালে ২১ নভেম্বর। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্র–অনুরাগী পাপিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছায়ানটে ভর্তি হন। পরে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সাল থেকে বেতার ও টিভিতে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গান করেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।
সি বি জামান, ২০ ডিসেম্বর
‘উজান ভাটি’ খ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সি বি জামান মারা গেছেন ২০ ডিসেম্বর। চলতি মাসে হার্ট অ্যাটাকের পর থেকেই আইসিইউতে ছিলেন তিনি। সিবি জামান নির্মিত সিনেমার মধ্যে রয়েছে ঝড়ের পাখি, উজান ভাটি, লাল গোলাপ, কুসুম কলি, সুভরাত্রি, দিন যায় কথা থাকে, হিসাব–নিকাশ, পুরস্কার। চলচ্চিত্র নির্মাতা সি বি জামান ছিলেন সুস্থধারার চলচ্চিত্রের ধারক। হার্ট অ্যাটাকে এ শিল্পীর মৃত্যু হয়। হার্ট অ্যাটাকের পাশাপাশি কিডনি সমস্যায়ও ভুগছিলেন সি বি জামান।
মিনহাজ আহমেদ পিকলু, ২০ ডিসেম্বর
অর্থহীন ব্যান্ডের সাবেক লিড গিটারিস্ট মিনহাজ আহমেদ পিকলু ২০ ডিসেম্বর মারা যান। মৃত্যুর সময় এ গিটারিস্টের বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন। পিকলুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিপার জানান, রাজধানীর রামপুরায় গিটার প্রশিক্ষণের একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন পিকলু। অনুষ্ঠান শেষে নিজেই গিটার নিয়ে জ্যামিং করেন। পারফর্ম করার সময় অসুস্থতা অনুভব করেন। অনুষ্ঠান শেষে চেয়ারে লুটিয়ে পড়েন। এরপর স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সিপার আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন পিকলু। গত শতকের মধ্য নব্বইয়ে বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের ভুবনে পরিচিত নাম ছিল পিকলু। তিনি রকস্ট্রাটা, জলি রজার্স, মাকসুদ ও ঢাকা এবং অর্থহীনের মতো ব্যান্ডগুলোয় বাজিয়েছেন। অর্থহীনের জনপ্রিয় গান ‘অদ্ভুত সেই ছেলেটি’, ‘সূর্য’, ‘রাতের ট্রেন’, ‘গুটি’, ‘নির্বোধ’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গানে গিটার বাজিয়েছেন পিকলু। অর্থহীনের অ্যালবাম ‘ত্রিমাত্রিক’, ‘বিবর্তন’, ‘ধ্রুব’তে লিড গিটার বাজিয়েছেন তিনি। প্রয়াত সংগীতশিল্পী নিলয় দাশের শিষ্য ছিলেন পিকলু।