হেমন্তকালে জন্ম বলেই আপনার নাম হৈমন্তী? মিষ্টি হেসে হৈমন্তী রক্ষিত বললেন, ‘নামটা আমার এক চাচার দেওয়া। প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার গানের দারুণ ভক্ত ছিলেন তিনি। চাচার ইচ্ছা ছিল, বড় হয়ে আমিও যেন হৈমন্তী শুক্লার মতো শিল্পী হতে পারি।’
হৈমন্তী শুক্লার নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হয়েছে যাঁর নাম, তিনি যে একদিন সত্যি সত্যিই সংগীতশিল্পী হয়ে উঠবেন, এ কথা তখন কে জানত? হ্যাঁ, এবার চট্টগ্রামের মেয়ে হৈমন্তী রক্ষিতের কথা বলছি। আধুনিক গানের শিল্পী হৈমন্তী কিন্তু হুট করেই সংগীতের অঙ্গনে নাম লেখাননি। বাড়িতে গানের পরিবেশ ছিল। ছোটবেলায় প্রতিদিন তাঁর ঘুম ভেঙেছে গান শুনে। খাটকে মঞ্চ আর চিরুনিকে মাইক্রোফোন বানিয়ে আপন মনে গান গেয়ে যেতেন ছোট্ট হৈমন্তী। ওই সময় তাঁর সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ হয়েছেন আশপাশের সবাই। তাঁর গান শুনে সবাই প্রশংসা করবেন, এমনটাই স্বপ্ন দেখেছেন। এই স্বপ্ন অল্পদিনেই পূরণ হয়েছে তাঁর।
২৮ ফেব্রুয়ারি কথা হলো তঁার সঙ্গে। হৈমন্তী রক্ষিতের গানের প্রতি এই ভালোবাসা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। দাদি চিত্রা রক্ষিত ছিলেন উচ্চাঙ্গসংগীতশিল্পী। ভজনও গাইতেন। বাবা পেশায় প্রকৌশলী হলেও ছিলেন সংগীতের অনুরাগী, শখের তবলিয়া। মা খুব ভালো গান করতেন। পুরোপুরি এক সাংস্কৃতিক আবহে বড় হয়েছেন। জীবনসঙ্গী হিসেবে যাকে বেছে নিয়েছেন, তাঁর সঙ্গেও গান গাইতে গিয়েই পরিচয়। তাঁর সংগীতচর্চায় এখন অন্যতম প্রেরণা দেন স্বামী অসীম দাস।
হৈমন্তীর গানের সঙ্গে সম্পর্কের কথা শোনার জন্য ফিরে যেতে হবে গত শতকের নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে। প্রথম মঞ্চে ওঠেন চট্টগ্রাম মুসলিম হলের এক অনুষ্ঠানে। বয়স তখন আট। ছোট হলেও গেয়েছিলেন সব ‘বড়দের গান’।
হৈমন্তী রক্ষিত বলেন, ‘অনেকেই বলেন, আমার কণ্ঠের নাকি খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। বরং ছোটবেলায় অনেকেই আমার গান শুনে মনে করতেন বড় কেউ গাইছে। গানের শিক্ষকেরাও বলতেন, বয়সের তুলনায় অনেক পক্ব ছিল আমার কণ্ঠ।’
স্মৃতি হাতড়ে জানালেন, প্রথম মঞ্চে উঠেই একুশটি গান গেয়ে নামতে হয়েছিল তাঁকে। এরপর আর থামতে হয়নি। পুরোদমে চলেছে গানের চর্চা আর পরিবেশন। ১৯৯৩ সালে নতুন কুড়ি প্রতিযোগিতার ‘ক’ শাখায় নজরুলসংগীতে প্রথম হন। একই বছর জাতীয় শিশু পুরস্কার পান। প্রথম অ্যালবাম ডাকপিয়ন বাজারে আসে ১৯৯৪ সালে। এরপর আরও ১২টি অ্যালবাম বেরিয়েছে। প্লেব্যাক করেছেন ২০টি চলচ্চিত্রে।
লতা মুঙ্গেশকর এবং রুনা লায়লার বেশির ভাগ গান মুহূর্তেই গাইতে পারেন হৈমন্তী। হবে না কেন? এই দুই শিল্পীর গান তিনি মন্ত্রমুগ্ধের মতো বারবার শোনেন।
হৈমন্তী রক্ষিত শুদ্ধ সংগীতের চর্চা চালিয়ে যেতে চান আজীবন। এখন গানের তালিম নিচ্ছেন অশোক চৌধুরীর কাছে। গান গেয়ে রাতারাতি তারকা বনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন না এই শিল্পী। তাঁর স্বপ্ন, ভালো ভালো গান গাওয়া। যে গান দিয়ে মানুষের মনে বেঁচে থাকবেন তিনি।