বিতর্ক দিয়ে তারকা হতে চাইনি: ফেরদৌস
ছোটবেলায় কখনোই ভাবেননি রুপালি পর্দায় কাজ করবেন। বাবা-মাও চাইতেন না তাঁদের ছেলে সিনেমায় কাজ করুক। আর ফেরদৌসের স্বপ্ন ছিল বৈমানিক হয়ে আকাশপথে ওড়াউড়ি করবেন। স্বপ্নপূরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ার সময়েই ভর্তি হন ফ্লাইং ক্লাবে। কিন্তু একটা সময় পড়াশোনা শেষ করে নাম লেখান ঢাকাই চলচ্চিত্রে। প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি হঠাৎ বৃষ্টির কল্যাণে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়ে যান ফেরদৌস। এরপর শুধু সামনের দিকে এগিয়ে চলা। আজ ৬ জুন বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই নায়কের জন্মদিন। নিজের জন্মদিনে চলচ্চিত্র ও জীবনের নানাদিক দিক নিয়ে ফেরদৌস কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
![ফেরদৌস](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F06%2F07%2Fee4ffd497d6d0634c0e3d12aaf64699e-Sumon-Yusuf_Ananda--103-.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
শুভ জন্মদিন ...
ধন্যবাদ।
কত হলো আপনার বয়স...
আমি মনে করি আমার বয়স এখনো ২৫। এখানে এসে বয়সটা যেন আটকে আছে। আমি নিজেও ফেরদৌসকে সব সময় তরুণ দেখতে চাই।
শৈশবের জন্মদিন উদ্যাপনের সঙ্গে বর্তমান জন্মদিন উদ্যাপনের মধ্যে তফাৎ কতটা?
সাধারণত জন্মদিন খুব একটা পালন করি না আমি। এই দিনটাতে পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে থাকাটাই আমার খুব পছন্দ। যখন বুঝতে শুরু করলাম তখন স্কুল-কলেজের বন্ধুরা খুব বাসায় আসত। ওরা বড়ভাবে বন্ধুর জন্মদিন পালন করত। খুব মজা করত। দেখা যেত কারও সঙ্গে এক বছর দেখা নেই তারাও জন্মদিনের দিন হাজির। ফিল্মে এসে অনেকে যেমন বড় আয়োজনে জন্মদিন পালন করে আমার তাও হয়নি। বরাবর পরিবার আর বন্ধুবান্ধব নিয়েই আমি থেকেছি। ইদানীং আমার দুই মেয়ে বাবার জন্মদিন নিয়ে খুব এক্সাইটেড। কেক কাটবে। মাসের প্রথমদিন থেকে বিভিন্ন ধরনের কার্ড বানাবে। এটা আমি খুব উপভোগ করি। জন্মদিনে আমি কখনোই কোনো কাজ রাখি না। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবকে এই দিনটাতে কোনোভাবেই মিস করতে চাই না।
নানা চরাই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে আজ এ অবস্থায় এসেছেন। এই সময়টাতে দাঁড়িয়ে জীবন সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা কী?
আমার কাছে জীবনটা আয়নার মতো। আমি যেভাবে চাইব সেভাবেই জীবন অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। আমি মনে করি, আমি যদি জীবনটাকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে দেখতে চাই সে প্রতিচ্ছবিটা আমি পাই। আমার ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে আমি নিজেকে যেভাবে দেখতে চেয়েছি সেরকমই পেয়েছি। আমার ইমেজটাকে সব সময় মানুষের কাছে ইতিবাচক রাখার চেষ্টা করেছি। তা আমি পেরেছিও। মানুষ যখন পোস্টারে ফেরদৌসের ছবি দেখে, তখন মানুষ ভাবে এই ছবিটা পরিবার নিয়ে দেখার মতো। মানুষের কাছ থেকে এইটা পাওয়া কিন্তু চাট্টিখানি কথা না। সাধারণত চলচ্চিত্রের মানুষদের নিয়ে অনেক ধরনের কথাবার্তা হয়। কিন্তু চলচ্চিত্রে ফেরদৌস মানে, কোনো কুৎসা নেই, নেই কোনো রটনা। আমি নিজেও কোনোদিন বিতর্ক দিয়ে স্টার হতে চাইনি। আমি আমার যোগ্যতা, শিক্ষা এবং আমার কাজ দিয়ে একটা জায়গায় পৌঁছতে চেয়েছি এবং তা পেরেছি বলে আমার বিশ্বাস।
ছোটবেলায় যা হতে চেয়েছিলেন?
আমি ছোটবেলায় পাইলট হতে চেয়েছিলাম। বড় হওয়ার পর চিন্তা ভাবনা পাল্টাতে থাকে।
![ফেরদৌস](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F06%2F07%2Fde5f2c001d77eb96531e3a5bea338768-KBR_0218.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
কেন?
আমি যখন ফ্লাইং ক্লাবে ভর্তি হই তখন একদিন সেখানে দোলা ছবির শুটিং হচ্ছিল। ওমর সানি আর মৌসুমি ছিল নায়ক-নায়িকা। দোলা ছবির শুটিংয়ের সময় পরিচালক দিলীপ সোমের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি আমাকে খুব কনভিন্স করার চেষ্টা করেন। আমিও একটা পর্যায়ে কনভিন্স হই। কেন জানি ওই সময়টাতে গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের প্রতি আমার অন্যরকম একটা টান ছিল। উনি বলাতে সুবাতাস পেয়ে গেলাম। মনে হলো, বাহ খারাপ না তো। এরপর আস্তে আস্তে নিজের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে থাকি চলচ্চিত্রে কাজ করার।
প্রথম সিনেমা?
ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর হিসেব কষলে ‘দোলা’ আমার প্রথম ছবি। এ ছবিতে আমি সানি ভাইয়ের ডামি শট দিয়েছি। সানি ভাই প্লেন চালাতে পারবে না। তো দোলা ছবিতে সানি ভাইয়ের প্লেনের ভেতরের যতগুলো শট ছিল সবগুলোতেই ছিলাম আমি। আমাকে দেখা না গেলেও আমার হাত আমার কাঁধ সবই দেখা গেছে। এটা এত দিন কেউ জানত না। সেই সুবাদে পরিচালক দিলীপ সোমের সঙ্গে আমার একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের স্বপ্ন যখন দেখছিলেন ঠিক সেই সময়ে ডামি শট দিলেন, মন খারাপ হয়নি?
মোটেও মন খারাপ হয়নি। বিষয়টাও আমার কাছে বেশ মজার লেগেছিল। আমার সঙ্গে যেসব বন্ধুরা ছিল, সব সময় হিরো হিরো বলতো তারা সেসময় পরিচালককে বলেছিল, আপনারা একদম ঠিক জায়গায় চলে আসছেন। আপনারা এবার আমাদের নায়ককে নিয়ে যান এফডিসিতে। ও ভালো করবে। যদিও তারা তখন মজা করে বলেছিল, সেটাই এখন সত্যি হয়েছে।
নায়ক হিসেবে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো?
১৯৯৬ সালে ‘পৃথিবী আমারে চায় না’ ছবির মধ্য দিয়ে নায়ক হিসেবে আমি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই। এর পরের ছবিটি ছিল ‘বুকের ভেতর আগুন। এটি ছিল সালমান শাহের অসমাপ্ত ছবি।
প্রথম পারিশ্রমিক?
পৃথিবী আমারে চায় না ছবির জন্য আমাকে ২৫০০০ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।
প্রথম পারিশ্রমিকের টাকা দিয়ে কি করেছিলেন?
সাইনিং মানি পাওয়ার পর আব্বার সঙ্গে দেখা করি। তিনি জানতে চাইলেন, এই টাকা দিয়ে কি করতে চাও? আমি বললাম, আমার রুমের একটা আলাদা টেলিভিশন লাগবে। কিছু টাকা দিয়ে রঙিন টিভি কিনি। আম্মার জন্য শাড়ি আর আব্বার জন্য অন্য একটা উপহারও কিনি। পরিবার থেকে আমাকে এটাও বলে দেওয়া হয়েছিল, একটা ছবিতে অভিনয়ের পর আমাকে চলচ্চিত্র ছেড়ে দিতে হবে। তবে যদি ভালো কিছু হয় তখন বিবেচনা করে দেখা যাবে। আমার যেটা হয়েছিল যে, ‘পৃথিবী আমারে চায় না’ ছবির শুটিং করতে করতে ‘বুকের ভেতর আগুন’ ছবির শুটিং শুরু করলাম। ‘বুকের ভেতর আগুন’ শেষ হতে হতে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ শুরু করলাম। সবার আগে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ মুক্তি পেল। সুপার হিট হলো। আমাকে তখন আর অন্য কোনো সিদ্ধান্তে যেতে হয়নি। সবকিছুই বদলে গেল।
যার ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছি এবং ছবিতে অভিনয়ের জন্য অনুপ্রেরণা ও সাহস পেয়েছি।
আমার আব্বা খুব সিনেমা দেখতেন। ভারতীয় বাংলা ছবির পোকা বলা যায়। আব্বার সঙ্গে বসে বসে আমি প্রচুর সিনেমা দেখতাম। আমাদের বাসায় প্রত্যেক শুক্রবারে সিনেমা দেখার একটা নিয়ম ছিল বলা যায়। তখনই সিনেমার প্রতি আমার ভালো লাগা জন্মে যায়। আমি অবশ্য উত্তম-সুচিত্রার ছবি প্রচুর দেখতাম। উত্তম কুমারের কাছ থেকে অভিনয়ের অনুপ্রেরণা ও সাহস পেয়েছি। পরে বাংলাদেশের রাজ্জাক সাহেবকে দেখেও অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছি।
![ফেরদৌস](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F06%2F07%2F6820bd4317038c0ffbbfc31aa235308b-Ferdaus_93.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
দেশে এবং দেশের বাইরে অনেকের সঙ্গেই অভিনয় করেছেন। অনেকের ছবি দেখেছেন। আপনার প্রিয় অভিনয়শিল্পী কারা?
২০ বছরের ক্যারিয়ারে আমি প্রচুর ভালো ছবি এবং গুণী অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আর সে কারণেই ভালো লাগার অনেক অভিনেতাও আছে। এই যেমন আগের প্রজন্মের রাজ্জাক ববিতা, শাবানা আর আমাদের প্রজন্মের শাবনূর, মৌসুমী আমার অসম্ভব প্রিয়। অন্যদিকে ওপার বাংলার ক্ষেত্রে ঋতুপর্ণা, প্রসেনজিৎ, ভিক্টর ব্যানার্জি, গোবিন্দ প্রিয় শিল্পী।
অভিনয় করতে যেয়ে কখনো কি মনে হয়েছে এই দৃশ্যটিতে অভিনয় করা ঠিক হয়নি।
এটা আমার ছবির জীবনে ঘটেছে। আমার একটা সুপারহিট ছবির নাম ‘প্রেমের জ্বালা’। এই ছবিতে আমি আর শাবনূর ডাক্তার চরিত্রে অভিনয় করি। আমার একটা বড় ধরনের অসুখ হয়। শাবনূর আমাকে রাস্তার ফকিররা যে গাড়িতে চড়ে ভিক্ষা করে ওইরকম একটা গাড়িতে করে পুরো ঢাকা শহর ঘুরে বেড়ায়। আমার কাছে তখন ব্যাপারটা খুব ফানি লেগেছিল। আরেকটা সিনেমায় আমাকে সাপে কামড় দেয়। শাবনূর তখন আমাকে ভেলায় ভাসিয়ে দেয়। এই সব আমার কাছে খুবই অবাস্তব এবং অবিশ্বাস্য ব্যাপার। ওই সমস্ত কাজ করতে অনেক সময়ই অস্বস্তি হয়, কিন্তু পরিচালকের জবরদস্তির কারণে এসব করতে হয়। পরিচালকের বক্তব্য, ওই ধরনের দৃশ্য নাকি দর্শক পছন্দ করে। তখন মনে হয় যে, আমরা বোধ হয় এখনো ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ টাইপ ছবি থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি। আমাদের চিন্তাভাবনা এখনো ওইভাবে ডেভেলপ করেনি। ক্ষেত্রবিশেষে পরিচালককে কনভিন্স করতে সমর্থ হই। আর যখন হই না তখন বাধ্য হয়ে আপস করতে হয়।
![ফেরদৌস](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F06%2F07%2F0d069ce47d5e93f26a27ebda21239af5-Sumon-Yusuf_Ananda--95-.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
মানুষ মাত্রই কোনো না কোনো বিষয়ে প্রভাবিত হয়। আপনার জীবনে প্রভাবিত হয়েছেন এমন কোনো ঘটনা কিংবা বিষয় কী আছে?
আমি আমার বাবার দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত। আমার বাবা মানুষকে খুব হেল্প করতেন। মানুষের জন্য কোনো কিছু করার মাধ্যমে আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করতেন তিনি। আমার জীবন প্রতিটা পরতে পরতে তাঁর সেই বিষয়টা দ্বারা প্রভাবিত। আমার কাছে মনে হয়, একজন মানুষ হিসেবে আমার জীবনটা যদি কারও উপকারে না আসে সেই জীবনের তো কোনো সার্থকতা নেই।
২০ বছরের ক্যারিয়ারে কত ছবিতে অভিনয় করেছেন? আপনার নিজের ছবিগুলোর মধ্যে কোন তিনটি সবচেয়ে প্রিয়?
বাংলাদেশ আর ভারত মিলিয়ে দুই শর মতো ছবিতে অভিনয় করেছি। এর মধ্যে তিনটা প্রিয় ছবি বাছাই করাটা আমার জন্য খুব মুশকিল। প্রতিটা ছবিতে কিন্তু মমতা দিয়ে অভিনয় করি। তারপরও যদি বলতে হয় তাহলে, ‘রাক্ষুসি’ আমার খুব পছন্দের একটা ছবি। যদিও ছবিটি সেইভাবে সফলতা পায়নি। ‘রাক্ষুসি’ ছবিতে কাজ করে আমি অনেক আনন্দ পেয়েছি। ‘খায়রুন সুন্দরী’ আমার আরেকটি প্রিয় ছবি, যদিও ছবিটি সুধীমহলে প্রশংসা পায়নি। কিন্তু সুপার-ডুপার হিট ব্যবসায়িক সফলতা পেয়েছে। অভিনয় করতেও ভালো লেগেছে। এবং অবশ্যই ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ আমাকে আজীবন বাঁচিয়ে রাখবে। পরিচিত-অপরিচিত অনেককেই এও বলতে শুনেছি, আমি যদি আর কোনো দিন কোনো ছবিই না করি, তাহলে এই এক ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে। অথচ, হঠাৎ বৃষ্টি ছবিতে কাজ করার সময় আমি অভিনয়ের অ আও জানি না।
আপনি প্রযোজনায় নাম লিখিয়েছেন। সিনেমা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আমি তো মনে প্রাণে একজন সিনেমার মানুষ। আমার ভবিষ্যৎ সিনেমা নিয়ে। সিনেমা ছাড়া ভবিষ্যতে আমার পক্ষে আর কোনো কিছুই করা সম্ভব না। প্রযোজনাটা আসলে খুব দুরূহ একটা কাজ। এটা অনেকটা দিল্লি কা লাড্ডু, যে খাবে সে পস্তাবে আর না খেলেও আফসোস করবে। আমার কাছে মনে হয়েছে, প্রত্যেক শিল্পীই জীবনের এক সময়ে উপলব্ধি করে যে, তাঁর একটা ছবি প্রযোজনা করা উচিত। যদিও ছবি সেই অর্থে ভালো কিছু না হোক, তারপরও যে সৃষ্টির একটা আনন্দ; এর অংশীদার হতে শিল্পী চায়। সৃষ্টির এই আনন্দটা অনেক বড়। আমি প্রযোজনা করে খুবই খুশি। এখানে কাজ করতে এসে আমার সহশিল্পী-সহকর্মী বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে দুই শতভাগ সহযোগিতা পেয়েছি। এমনকি আমার এই ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে কোনো ক্ষতির মুখে পড়েনি। প্রযোজনার কাজ করে আমার আরও বেশি নাম হয়েছে। সম্মান পেয়েছি। সামনে অবশ্যই আমি আরও প্রযোজনা করব। তবে, সামনে হয়তো একটি বিষয়ভিত্তিক ছবি বানাব।