করোনাকালের শুরুতে সবাই যখন নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিল, তখন অভিনেতা সিয়াম আহমেদের সঙ্গনিরোধকালের শুরুটা হয়েছিল জাহাজে, পানির ওপর। পানির ওপর এক জাহজভর্তি মানুষ, স্থলের সঙ্গে নেই কোনো যোগাযোগ। করোনাকালের প্রথম মাসটা এভাবে কাটিয়েছেন সিয়াম, অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন শুটিংয়ে। এরপর বাড়ি ফিরে পালন করেছেন প্রতিটি নিয়ম। আর এসবের মধ্য দিয়েই সময় কাটিয়েছেন পরিবারের সঙ্গে, ঝালাই করেছেন পুরোনো সুপ্ত প্রতিভা আর কাজ করেছেন নিজের উন্নয়নে। ঘরবন্দী দিনগুলোতে তিনটি বিশেষ অর্জন ছিল সিয়ামের। এই অর্জন সিয়ামের আটকে থাকা সিনেমার শুটিংয়ের আক্ষেপ আর করোনাকালের বেকার ঘরে বসে থাকার হতাশাকে কাটিয়ে দিয়েছে।
অর্জন ১: সিয়াম এখন ‘ফ্যামিলি ম্যান’
প্রায় তিন মাস একটানা বাড়িতে অবস্থান করেছেন সিয়াম। তাঁর জন্য এটা ছিল বিরল এক অভিজ্ঞতা। সিয়াম বলেন, ‘এই দিনগুলোতে আমি, বাবা, মা, অবন্তী (সিয়ামের স্ত্রী) প্রতি বেলা এক টেবিলে বসে খেতাম। এটা এক আনন্দঘন অভিজ্ঞতা ছিল। প্রায় রাতেই সবাই একসঙ্গে সিনেমা দেখতাম, ছাদে গিয়ে ব্যায়াম করতাম। পরিবারের সবার সঙ্গে একটানা এত লম্বা সময় কখনো কাটানো হয়নি, কখনো ভাবতেও পারতাম না। আমার কাছে এ এক বিশেষ অর্জন। বলতে পারেন, এই সময়টায় নতুনভাবে পরিবারের সঙ্গে জীবন উপভোগ করেছি।’
এখন অবশ্য একটু একটু জীবন আবার স্বাভাবিক রূপে ফিরে আসছে। সিয়াম বলেন, ‘এখন তো অফিস খুলে গেছে। আমিও টুকটাক বের হচ্ছি। আর কত দিন বসে থাকব? কাজ তো করতে হবে। ছোট ইউনিট নিয়ে যে কাজগুলো হয়, তাতে ঝুঁকি কম। এ ধরনের কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজ করছি। সিনেমার প্রস্তাবও ছিল, করিনি। সিনেমার কাজ মানে বড় ইউনিট। সময়টা অনুকূলে না থাকার কারণে ফিরিয়ে দিয়েছি।’
অর্জন ২: ফিরে এল লেখকসত্তা
সিয়াম জানালেন, ছোটবেলা থেকে লেখালেখির প্রতি তাঁর ছিল দারুণ ঝোঁক। ছেলেবেলায় নাকি কবিতা লিখতেন। নিজের লেখা দিয়ে স্কুলের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশও নিতেন। কিন্তু অভিনয়ের ঝোঁকের পেছনে হারিয়ে গিয়েছিল সিয়ামের সেই লেখকসত্তা। অবশেষে করোনাকাল পুরোনো সেই প্রতিভাকে ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিল। সিয়াম বলেন, ‘এই করোনাকালে প্রচুর বই পড়েছি। পড়তে পড়তে নানা ধরনের গল্প মাথায় আসছিল। তখনই লিখতে শুরু করি। এর মধ্যে দুটো গল্প লিখে ফেলেছি। একটির নাম “ঘুড্ডি”, অন্যটির নাম এখনো ঠিক করিনি।’
গল্প লিখে বসে থাকতে পারেননি সিয়াম। শুনিয়েছেন পরিবারের সদস্যদের, বন্ধুদের। এর মধ্য নাকি কয়েকজন পরিচালক–বন্ধু এই গল্পের প্রতি বিশেষ আগ্রহও দেখিয়েছে। তাই উত্তেজনা চেপে রেখে সিয়াম চুপি চুপি জানালেন, ব্যাটে–বলে মিলে গেলে হয় গল্পকার সিয়ামের লেখা পর্দাতেও ভেসে উঠতে পারে সিনেমা হয়ে।
অর্জন ৩: চ্যানেলের মালিক
না, বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলের মালিক হননি, বলছি ইউটিউব চ্যানেলের কথা। দেশ–বিদেশের অনেক তারকাই এই করোনাকালে নিজ নিজ নামে ইউটিউবে চ্যানেল খুলেছেন। সেই মাধ্যমেই নিজের সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করেছেন। সিয়ামও তাই পিছিয়ে থাকলেন না। ১ আগস্ট ইউটিউবে অভিষেক হলো সিয়ামের। নিজের প্রেমের গল্প দিয়ে সিয়াম শুরু করলেন তাঁর ‘কনটেন্ট মেকিং’–এর যাত্রা।
‘আমাদের গল্প’ নামে ধারাবাহিকভাবে সিয়াম তাঁর ভালোবাসার গল্প শোনালেন। এই ভিডিওতে সিয়ামের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী অবন্তীকেও দেখা যায়। ইউটিউবে এভাবে অভিষেক নিয়ে সিয়াম বলেন, ‘আমার ব্যক্তিজীবন, কাজের পেছনের গল্পসহ নানা বিষয় ভক্তরা জানতে চান। কিন্তু সময়ের অভাবে সবকিছু ভক্তদের জানানো হয় না। অবশেষে করোনাকালে ইউটিউব চ্যানেল খোলার মতো সময় ও সুযোগ পেলাম।’
বরাবরই নিজের প্রেম, বিয়ে ও পারিবারিক জীবন খানিকটা ব্যক্তিগতই রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন সিয়াম। কিন্তু ইউটিউবের অভিষেকেই স্ত্রী অবন্তীকে ব্যক্তিজীবনের গল্প বলার কারণ জানতে চাইলে সিয়াম বলেন, ‘আমার যাঁরা ভক্ত, তাঁদের কারণেই কাজটি করা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমি ভক্তদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ইউটিউবে প্রথম ভিডিও হিসেবে তাঁরা কী দেখতে চান। সবাই আমাদের দুজনের বিয়ের আগের গল্পটার কথা বলেছেন। ভক্ত–দর্শকেরাই আমার প্রাণ, তাই তাঁদের আবদার অগ্রাহ্য করা গেল না।’