পূরণ হচ্ছে এন্ড্রু কিশোরের শেষ ইচ্ছা
রাতের যেকোনো সময়ে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকে ঢাকায় নামছেন প্লেব্যাক–সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের মেয়ে মিনিম এন্ড্রু সজ্ঞা। আজ রোববার ঢাকার উদ্দেশে মেলবোর্ন থেকে উড়াল দিয়েছেন তিনি। প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এন্ড্রু কিশোরের ভগ্নিপতি চিকিৎসক প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস।
বাবার মৃত্যুর খবরে গত বৃহস্পতিবার সিডনি থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছান এন্ড্রু কিশোরের ছেলে সপ্তক। রাজশাহীতে এসেই ছুটে গেছেন হাসপাতালে হিমঘরে থাকা বাবাকে দেখতে। কফিনে মোড়ানো বাবাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
বরেণ্য এই শিল্পীর পারিবারিক সূত্র জানিয়েছেন, মৃত্যুর কয়েক দিন আগে এন্ড্রু কিশোর তাঁর দুই সন্তানের খোঁজ নেন। বলে যান, তিনি মারা গেলেও ছেলেমেয়েদের শেষ দেখার জন্য যেন অপেক্ষা করা হয়। তাই শিল্পীর ইচ্ছাপূরণ করার জন্য পরিবারের সদস্যরা ছেলেমেয়ের দেশে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন। ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে ৬ জুলাই রাজশাহীতে মারা যান তিনি।
প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস জানালেন, সপ্তক গতকাল শনিবার ছুটে যান স্থানীয় গির্জায়, সেখানে একটি কফিন বানিয়ে রাখা আছে, যে কফিনে শেষবিদায় নেবেন প্রিয় এই শিল্পী। বাবার কফিন ছুঁয়ে দেখছিলেন সপ্তক। ছুটে গিয়েছিলেন সমাধি স্থলেও।
১৫ জুলাই দুপুরের পর এন্ড্রু কিশোরকে রাজশাহীর কালেক্টরেট মাঠের পাশে খ্রিষ্টানদের কবরস্থানে সমাহিত করা হবে। পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেদিন সকালে প্রথমেই রাজশাহী শহরের স্থানীয় চার্চে নেওয়া হবে। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারে। বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাখানেক ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনারে রাখা হবে মরদেহ। সেখানে মা–বাবার কবরের পাশেই চিরদিনের মতো ঘুমাবেন এন্ড্রু কিশোর।
বাংলা গানের এই কণ্ঠশিল্পী ‘প্লেব্যাক–সম্রাট’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশের আধুনিক ও চলচ্চিত্রজগতের কালজয়ী অনেক গান তাঁর কণ্ঠে সমৃদ্ধ হয়েছে। সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, প্রেম-বিরহ—সব অনুভূতির গানই তিনি গেয়েছেন। ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর তিনি রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে আবদুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে সংগীতের পাঠ শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোকসংগীত, দেশাত্মবোধকসহ প্রায় সব ধারার গানে কণ্ঠ দেন রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত সংগীতশিল্পী হিসেবে। চলচ্চিত্রে এন্ড্রু কিশোর গান গাওয়া শুরু করেন ১৯৭৭ সালে।