কষ্টে ছিলেন 'মিলিয়নিয়ার' শামীম জামান
লকডাউনে আয়ের অঙ্ক ‘ডাউন’ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাড়ছিল অন্য জায়গার অঙ্ক। ঘরবন্দী মানুষেরা ইউটিউবে বসে বসে দেখেছেন শামীম জামান পরিচালিত ও অভিনীত নাটকগুলো। অনেকগুলো নাটক ছাড়িয়েছে ‘মিলিয়ন ভিউ’। সেই দিক থেকে তিনি একজন বিশিষ্ট ‘মিলিয়নিয়ার’।
তিন মাসের লকডাউনে নাটক বানানো বন্ধ ছিল শামীম জামানের। অর্থকষ্টে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। কেবল তো টাকার জন্য নাটক বানান, তা নয়। পেশার সঙ্গে এটি তাঁর নেশা, ভালোবাসা। সহশিল্পীদের সঙ্গে যূথবদ্ধ হয়ে কাজ করার আনন্দ থেকে দূরে ছিলেন অনেক দিন। অনেক দিন পর আবারও শুরু করেছেন শুটিং। এসব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলেন তিনি। শামীম জামান বলেন, ‘যেখানে দুজন লোক লাগে, সেখানে পাঁচজন লোক নিই। এ পেশার সঙ্গে যুক্ত যাঁরা, তাঁরা যাতে উপকৃত হন। মেকআপ আর্টিস্ট ও প্রোডাকশন বয়দের মতো এটা আমারও একমাত্র পেশা। এ কাজ করেই আমাকে চলতে হয়। নাটক না বানালে আমার চলবে কীভাবে?’
শামীম জামানের বেশির ভাগ নাটকের পটভূমি গ্রাম। গ্রামীণ নাটক কেন করেন তিনি? এর ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন, ‘বাংলাদেশ ৬৮ হাজার গ্রামের দেশ। ছোট্ট একটা শহরে গাদাগাদি করে আমরা যাঁরা থাকি, সবাই ওই গ্রাম থেকেই এসেছি। গ্রামের গল্প দেখলে তাঁরা নস্টালজিয়ায় ভোগেন। সে কারণেই আমার নাটকের এত ভিউ।’ তিনি বলেন, শহরের ইট-কাঠের ফাঁকে জীবনকে খুব ভালো করে দেখানো যায় না, যতটা দেখানো যায় গ্রামে।
‘তিন তালাক’ নাটকে বন্ধু আ খ ম হাসানের স্ত্রীকে কৌশলে কেড়ে নেন শামীম জামান। পরিচালক হিসেবে বন্ধুকে চমৎকার অভিনয় করিয়ে নিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের নাটকে ইদানীং মানিকজোড় হিসেবে দেখা যায় তাঁদের। একত্রে আরণ্যক নাট্যদলে কাজ করেছেন তাঁরা। যখন এখনকার মতো ব্যস্ততা ছিল না, তখন ভালো বন্ধু ছিলেন। ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ার পর বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়েছে। তাই বন্ধুকে নিয়েই পথ চলছেন।
নিত্যনতুন এত এত নারীমুখ, কোথায় পান তিনি? তাঁদের কেউই তারকা নন। কেনই–বা তারকা শিল্পীদের কম কম দেখা যায় তাঁর নাটকে? তিনি বলেন, ‘আমার গ্রামীণ পটভূমির গল্পে শহরের আদরে বড় হওয়া মেয়েরা অভিনয় করতে পারেন না। তাঁদের এ রকম কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। কোমরে আঁচল গুঁজে ঝগড়া করতে পারেন না তাঁরা। সে কারণে আমি প্রতিনিয়ত মঞ্চ থেকে নারীশিল্পীদের নিয়ে আসি। ত্রিশ বছরের বেশি সময় মঞ্চে কাজ করেছি, আমি জানি মঞ্চের মেয়েরা সব রকম অভিনয় করতে পারবেন। তা ছাড়া নতুনদের সুযোগ দিলে তাঁরা উঠে আসতে পারেন, ভালো কাজও দেখাতে পারেন। এর মধ্যে যাঁদের সুযোগ দিয়েছি, তাঁদের প্রায় সবাই এখন ভালো করছেন।’
শামীম জামানের অভিনয়জীবন তিন দশকের বেশি। এক দশকের নির্মাতাজীবনে বহু নাটক পরিচালনা করেছেন তিনি। তবু করোনাকালের লকডাউনে পিছিয়ে পড়েছেন এ নির্মাতা। তিনি বলেন, ‘কষ্টে কেটেছে। অনেকে ভাবে, আমার বুঝি অনেক টাকা। আসলে যা আয় করি, বেশির ভাগ চলে যায় শিল্পীদের সম্মানী ও পারিশ্রমিকের পেছনে। অফিস, বাসাভাড়া, গাড়ির ঋণ—এসব খরচের পর কোনো সঞ্চয়ও নেই আমার। আমি সঞ্চয় করতে চাইও না। কাজ করতে চাই, সুস্থ থাকতে চাই।’
পবিত্র ঈদুল আজহায় শামীম জামান ১৪টি নাটক নিয়ে অপেক্ষা করছেন। করোনায় মানুষ যেন মুখ কালো করে ঘরে বসে না থাকে, সে জন্য বেশ কিছু হাসির নাটক বানিয়েছেন তিনি। এক মৌসুমে এক ডজনের নিচে নাটক তিনি বানান না। রোববার সন্ধ্যায় ‘পাবলিক ফিগার’ নামে একটি খণ্ড নাটকের শুটিং শেষে মুঠোফোনে জানালেন, ফেসবুকে শ পাঁচেক লাইক পাওয়া এক লোক নিজেকে পাবলিক ফিগার মনে করতে শুরু করে। এলাকার জনপ্রতিনিধির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যায় সে। নিজের লেখা এ রকম একটা গল্প নিয়ে নাটক ‘পাবলিক ফিগার’। তিনি ও জামিল হোসেন ছাড়াও সেখানে দেখা যাবে আরও অনেক শিল্পীকে। কোনো একটি টিভি চ্যানেলে দেখা যাবে নাটকটি। তারপর পাওয়া যাবে ইউটিউবে।