জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনা মনে করিয়ে দেয় অনেক অন্যায় চর্চা আমাদের রয়ে গেছে
>জীবনমুখী গানের শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। সংগীতচর্চার এক যুগে গানের মূল স্রোতের বিপরীতে মননশীল শ্রোতার প্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। এই করোনাকালে যুক্তরাষ্ট্রে জেগে ওঠা কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার আন্দোলন নিয়ে একটি গান করেছেন তিনি। সেই গানের সূত্র ধরে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনাটি কীভাবে আপনাকে স্পর্শ করল, কীভাবে সেটা গান হয়ে এল?
আমরা মনে করি, আমরা খুব সভ্য হয়ে গেছি। কিন্তু জর্জ ফ্লয়েড হত্যার মতো একেকটি ঘটনা মনে করিয়ে দেয় অনেক অন্যায় চর্চা সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে। জাতি হিসেবে, নাগরিক হিসেবে, নারী বা পুরুষ হিসেবে নানা বৈষম্য আমাদের ভেতর রয়ে গেছে। মানুষ হিসেবে নানা রকম গর্ব করার চেয়ে আমাদের উচিত নিজেকে আরও পরিশীলিত করে নেওয়া। এ ভাবনাগুলো থেকেই গানটা।
সাম্প্রতিক ভিডিওতে আপনি নিনা সিমনের কথা বলেছেন। প্রভাবশালী কৃষ্ণাঙ্গ এ শিল্পীর বাড়ি দেখতে গিয়ে কেমন লেগেছিল?
সেটা বলে বোঝানো যাবে না। ছোট্ট একটা দুই ঘরের বাড়িতে তাঁরা আট ভাই-বোন থাকতেন। পাশের রাস্তায় একটা গির্জায় গান করতে যেত ছোট্ট নিনা। সেখান থেকে বিশ্বকাঁপানো শিল্পী হয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রয়াত শিল্পীর অবস্থান ও জনপ্রিয়তা এখনো ভীষণ শক্ত। যত দিন কালো মানুষদের নিয়ে কথা হবে, তত দিন নিনাকে মানুষ মনে রাখবে।
কখনো কি মনে হয়েছে শোষিত মানুষের পক্ষে গান করায় অনেকের চক্ষুশূল হচ্ছেন?
আমি মেইনস্ট্রিমের শিল্পী না। আমি লিখতে ও গাইতে পারি, এটা প্রকৃতির উপহার। একে কি আমি শুধুই বিনোদন দিতে ব্যবহার করব? আমি জেনে বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, যাঁদের কথা কেউ শোনে না, তাঁদের জন্য কণ্ঠকে ব্যবহার করব। আর শোষিতের জন্য গাইলে সবাই হাততালি দেবে না।
ভয় বা ভয়ের কোনো ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন?
ভয়, চোখরাঙানি তো থাকেই। আমি কাউকে তুষ্ট করে গাই না। এই দেশ আমার, নিজের কথা বলার অধিকার আমার আছে। কোথাও কোথাও রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে গান না করার আহ্বান আসে। তবু খুব কৌশল করে গাই, যেভাবে কৌশলে টিকটিকি মানুষের সমাজে বেঁচে থাকে। এ নিয়ে একটু কষ্ট আছে। কিন্তু আমার কণ্ঠ যে শোষিত মানুষের জন্য বেজে উঠছে, এটাই আমাকে প্রশান্তি দেয়। এটা আমার জন্য একটি চমৎকার জার্নি।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও আপনি কাজ করেন। লকডাউনে মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আমরা কতটা সচেতন এ নিয়ে?
আমাদের দেশের মানুষ শারীরিক অসুখ নিয়ে খুব সচেতন। হাঁচি-কাশিতেও ডাক্তারের কাছে যায়। তবে ডিপ্রেস হলে সেটা লুকিয়ে রাখে। এ নিয়ে মোটেও সচেতন নয় মানুষ। মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
সাক্ষাৎকার: রাসেল মাহ্মুদ, ঢাকা