শুধু কি 'ক্যারিয়ার' গড়তেই ভাইকিংস ছাড়লেন তন্ময়

১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীর শ্রুতি স্টুডিওতে যাত্রা করে রক ব্যান্ড ‘ভাইকিংস’। ছবি: ফেসবুক নেওয়া।
১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীর শ্রুতি স্টুডিওতে যাত্রা করে রক ব্যান্ড ‘ভাইকিংস’। ছবি: ফেসবুক নেওয়া।

ভয়াবহ এক দুঃসংবাদের মতো ছড়িয়ে গেল খবরটি। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় রক ব্যান্ড ভাইকিংস থেকে বেরিয়ে গেছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ভোকাল তন্ময় তানসেন। নিজের ক্যারিয়ার গড়বেন বলে নিজ হাতে গড়া ব্যান্ডের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি।

 গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে ভাইকিংস জানায়, ‘নিজের ক্যারিয়ার গড়তে দল ছাড়ছেন দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তন্ময়। গত ২৩ বছর চমৎকার সময় পার করেছে দলটি। দল ছেড়ে গেলেও তিনি সব সময়ই এই পরিবারের অংশ হয়েই থাকবেন।’

 খবরটি ছড়ানোর পর একের পর এক ফোন আসতে শুরু করে তন্ময়ের কাছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেটে পড়েন ভক্তরা। প্রিয় দলের সঙ্গে মঞ্চে আর দেখা যাবে না তন্ময়কে, গাইতে শোনা যাবে না ‘তুমি কথা দাও, আমি সবকিছু যাব ভুলে’। এ যেন মেনে নিতেই পারছেন তাঁরা।

 অথচ ভাইকিংসকে নিজের ঔরসজাত সন্তান মনে করেন তন্ময়। কিন্তু এই সন্তানকে লালন-পালন করতে করতে ক্লান্ত তিনি। ব্যান্ড ছেড়ে সাময়িক বিরতিতে গেলেন তিনি। গতকাল বিকেলে তন্ময় প্রথম আলোকে জানান, নতুন কিছু শুরু করবেন। এ জন্য একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘মহামারির পর যদি বেঁচে থাকি, নতুন করে শুরু করব। ব্যান্ডসংগীত মানেই দল। আমি দলীয় শক্তিতে বিশ্বাসী। হয়তো নতুন করে দল গড়ে আবার মঞ্চে উঠব।’

 ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীর শ্রুতি স্টুডিওতে যাত্রা করে রক ব্যান্ড ভাইকিংস। ১৯৯৯ সালে সেরা ব্যান্ড হিসেবে বিজয়ী হয় ‘স্টার সার্চ’ প্রতিযোগিতায়। কিছুদিন পর দলের কি-বোর্ডিস্ট বাবুর অনুপস্থিতিতে ব্যান্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালনায় সক্রিয় ছিলেন তন্ময় তানসেন। ২০১৫ সালে নিজের পরিচালনায় ‘রান আউট’ সিনেমায় গান করার মাধ্যমে আবারও সংগীতে ফেরেন তন্ময়। ‘জীবনের কোলাহল’, ‘তুমি কথা দাও’, ‘চেনা পথ’, ‘দিন যত দুঃখ তত’, ‘ঘড়ির কাঁটা’, ‘ঈশ্বর তুমি সযতনে রেখো তাকে’সহ দলটির বেশ কিছু জনপ্রিয় গান ভক্তদের মুখে মুখে ফেরে।

তন্ময় তানসেন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।
তন্ময় তানসেন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।

 দল থেকে তাঁর বের হয়ে যাওয়া ভক্তদের কষ্ট দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তন্ময় বলেন, ‘জানি মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু কিছু করার নেই। আমার নিজেরও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু নতুন একটা সূচনার জন্য এ কষ্ট মেনে নিতে হবে। আমি আমার মতো করে কিছু একটা করব। যদিও কী করব এখনো ভাবিনি। গত ছয় বছরের ক্লান্তি ও চাপ থেকে আমি একটু বিশ্রাম চেয়েছিলাম।’

 দল থেকে বেরিয়ে আসা প্রসঙ্গে বিস্তারিত কিছুই বলতে চাননি তন্ময়। তিনি বলেন, ‘আমি চাই না কেউ কষ্ট পাক। আমার সংগ্রামের মানসিকতা, ধৈর্য ও সাহস আছে। গত ৩০ এপ্রিল আমি দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। মৌখিকভাবে দলকে জানিয়েছি সেটা। এখন আমি মানসিকভাবে খুব শান্তি পাচ্ছি।’

 তবে ভাইকিংসকে মিস করবেন না তন্ময়। তিনি বলেন, ‘আমার কাছের মানুষেরা জানে, কোনো কিছু ছেড়ে দিতে আমার হাত কাঁপে না, আমি কষ্টও পাই না। যখন কাউকে আঁকড়ে থাকি, ভালোবাসি, সেটা থাকে আকাশছোঁয়া। আমি কাউকে চলে যেতে বলিনি, সবচেয়ে কঠিন কাজটিই করেছি। নিজে বের হয়ে গেছি।’

তন্ময়ের মন্তব্য এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ভক্তদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, তাহলে কি শুধু ই ক্যারিয়ার গড়তেই ব্যান্ড ছেড়েছেন তন্ময়? এ প্রশ্নের জবাবও হয়তো খুব শিগগির মিলবে।