শুটিং ফাঁসানোর প্রমাণ আছে
গত ডিসেম্বর মাসে ছোট পর্দার নির্মাতা সেরনিয়াবাত শাওন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে উল্লেখ করেন, অভিনেত্রী তাসনুভা তিশা তাঁর ওয়েব সিরিজ ‘সিটি অব এরর’–এর শেষ দিনের শুটিং ফাঁসিয়েছেন। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে এ অভিনেত্রীকে শুটিং ফাঁসানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। খবরটি নির্মাতার দৃষ্টিগোচর হলে ‘প্রমাণসহ’ তিনি ফের দাবি করেন, তাঁর শুটিং তাসনুভা তিশা ফাঁসিয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে তাসনুভা তিশা বলেন, ‘শুটিংয়ের দিন সন্ধ্যায় দু–তিনটি দৃশ্য করার পর আমাকে জানানো হয় যে আমাকে দু–তিন ঘণ্টা ছুটি দেওয়া হয়েছে। তখন আমি বাসায় চলে আসি। আসার আগে আমি বারবার বলেছি, আমাকে যেন শুটিং শুরুর এক ঘণ্টা আগে জানানো হয়। বাসায় এসে আমি বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছি। সহকারী পরিচালক জানিয়েছেন, “আপা, জানাচ্ছি।” এরপর পৌনে ১১টার দিকে আমি শেষবার ফোন দিই। তখনো কোনো সাড়া পাইনি।’
অন্যদিকে নির্মাতা সেরনিয়াবাত শাওনের দাবি, ‘সেদিন তাসনুভা তিশা ও আফরান নিশোর আসার কথা ছিল দুপুর ১২টায়। শীতের মধ্যে আফরান নিশো ১২টার সময়েই সেটে এসেছিলেন। বরং তাসনুভা তিশা সবাইকে অপেক্ষা করিয়েছেন। অগত্যা কোনো উপায় না পেয়ে গল্প কাটছাঁট করে নিশো ভাইকে নিয়ে শুটিং শুরু করি। পরে এ অভিনেত্রী আসেন পাঁচটার দিকে। তখন ডিসেম্বর মাস। সন্ধ্যা। তাড়াহুড়া করে দিনের দুটি দৃশ্য সন্ধ্যায় শুট করি। শুট করার পরে সন্ধ্যায় আমার সহকারী তাসনুভাকে জানান, তাঁর এখন বিরতি। আমরা অন্য দৃশ্য শুট করব। আপনি গাড়িতেই থাকেন। তখন আমরা অন্য দৃশ্য শুট করতে শুরু করি। সহকারী পরিচালক প্রোডাকশন বয়কে দিয়ে তাঁর জন্য নাশতা পাঠান। প্রোডাকশন বয় গিয়ে দেখেন তাঁর গাড়ি নেই। কাউকে কিছু না বলেই চলে গেছেন তিনি।’
নির্মাতার দাবি, বাসায় গিয়ে তাসনুভা তিশা কোনো ফোন দেননি। বরং তাঁরাই তাঁকে ফোনে পাননি। এ প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, ‘যখন তাসনুভাকে পাওয়া গেল না, এরপর থেকেই অনবরত তাঁকে ফোন দিতে থাকেন আমার সহকারী পরিচালকেরা। ফোন দিতে দিতে আমার মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। আমার সহকারী রাত ১০টা ২৩ মিনিটে তাঁকে ফোনে পান। অভিনেত্রী তখন জিজ্ঞেস করেন, “শুট শুরু হতে কি রাত ১২টা বাজবে?” সহকারী পরিচালক জানান, এর আগেও হতে পারে। তখন তিশা জানান, “আমি বাসায় চলে এসেছি। আমাকে যেন মেক্সিমাম এক ঘণ্টা এবং মিনিমাম ৩০–৪০ মিনিট আগে জানানো হয়।” এরপর থেকে তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। সেদিন রাতে শুটিং করব—এটা সবাইকে আগে থেকে বলা হয়েছিল।’
তাসনুভা তিশা সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বাসায় এসে আমি বেশ কবার ফোন দিয়েছি। সহকারী পরিচালক জানিয়েছেন, “আপা জানাচ্ছি।” পৌনে ১১টার দিকে আমি ফোন দিই। তখনো কোনো সাড়া নেই। যখন তাঁরা ফোন দিয়েছে, তখন রাত একটার বেশি বাজে। তখন আমি ঘুমিয়ে গেছি। সকালে দেখি পাঁচটা ফোন। কেউই কোনো টেক্সট দেয়নি। যদি প্রয়োজন হতো তাহলে তাঁরা আমার বাসায় চলে আসত।’
এ প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, ‘তিনি কোনো ফোন দেননি। আমরাই ফোন দিয়েছি। আমাদের কারও ফোন তিনি ধরেননি। আমরা রাত দুইটা পর্যন্ত তাঁর জন্য বসে ছিলাম। আমার কাছে সেই কল লিস্ট এবং সর্বশেষ ফোন রেকর্ড এখনো আছে। আফরান নিশো, শতাব্দী ওয়াদুদসহ পুরো টিম তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছেন, সেটা লিখে তাঁকে টেক্সট করা হয়েছে।’
মোবাইল ফোনে তাসনুভা তিশা নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনার আমার কথা বিশ্বাস করার দরকার নেই। আমিও মিথ্যা বলতে পারি। সেদিন আমি যদি শুটিং ফাঁসাতাম, তাহলে নির্মাতা তাঁর সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড, আমার সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘে অভিযোগ করতেন। তা তিনি করেননি। অবশ্যই সে রকম কিছু ছিল না।’
এ প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, ‘তিনি যে শুটিং ফাঁসিয়েছেন, এর সব প্রমাণ আমার কাছে আছে। ওই রাতে আফরান নিশো ভাই ও শতাব্দী দাদার সঙ্গে পরামর্শ করে মূলত তাঁর নামে কোনো অভিযোগ দিইনি। আমরা মানুষের রুটিরুজিতে আঘাত করতে চাইনি। মানবিক কারণে তাঁকে নিয়ে কোনো নিউজও করতে দিইনি। তিনি এখন আমার টিমের ওপর দোষ চাপিয়ে আমার রুটিরুজির পথ বন্ধ করে দিলেন।’
এ প্রসঙ্গে ওই নাটকের অভিনয়শিল্পী শতাব্দী ওয়াদুদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সেই রাতে সিরিজটির শুটিং শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাসনুভা তিশার জন্য কাজটি পরে করা হয়নি। তাঁর জন্য রাতে অপেক্ষা করেছি। আমি নিজেও তাঁকে ফোন দিয়েছি। তিনি ফোন ধরেননি। কেন রাতে তিনি আসেননি, এটা নিয়ে ইউনিটের সঙ্গে একটা ভুল–বোঝাবুঝি হতে পারে। তিশাকে যত দূর চিনি, তিনি ইচ্ছাকৃত ক্ষতি করার মেয়ে নন।’